অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বার ২০২৫, সময়ঃ ০৩:২২
পিতা-মাতা বার্ধক্যে পৌঁছালে তাদের যত্ন নেওয়া, খেদমত করা, দোয়া আদায় করা এবং তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করা অত্যন্ত সহজ আমল, যার মাধ্যমে জান্নাতের পথ উন্মুক্ত হয়। অথচ কেউ যদি এমন সুযোগ পাওয়ার পরও গাফলতি করে, অবাধ্য হয় এবং জান্নাত লাভে ব্যর্থ হয়, তবে সে সত্যিই ধ্বংসপ্রাপ্ত।নিচের হাদিসটি দেখুন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ " . قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ " .
আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক।
জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যক্তির, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।
-(মুসলিম, হাদিস : ২৫৫১)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
‘নাক ধূলিমলিন হোক’ এ বাক্যটি আরবী ভাষায় এ বাক্যটি অপমান, লাঞ্ছনা ও হতাশার অর্থে ব্যবহৃত হয় এমন বাক্য। অর্থাৎ সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত, লাঞ্ছিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত—যে এমন সহজ সুযোগ পাওয়ার পরও ব্যর্থ হলো।
পিতা-মাতা জান্নাতের দরজা
কোরআন ও হাদীসে বারবার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারকে জান্নাতের অন্যতম প্রধান কারণ বলা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন:
﴿وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا﴾
‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন—তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।” (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ২৩) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘পিতা জান্নাতের মধ্যম দরজা। তুমি চাইলে সেটিকে নষ্ট করো, চাইলে সেটাকে হেফাযত করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯০০)
বার্ধক্যের সময় খেদমতের গুরুত্ব
যখন পিতা-মাতা বৃদ্ধ হন, তখন তারা দুর্বল হয়ে পড়েন, তখন তাদের সহায়তার প্রয়োজন হয়।
এসময় সন্তানদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। তখন ধৈর্য, দয়া ও আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা করাই জান্নাতের বড় মাধ্যম।
যে ব্যর্থ হলো, তার জন্য কঠিন হুঁশিয়ারি
রাসুল (সা.) তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছেন—যাতে বোঝানো যায়, এমন সুযোগ হাতছাড়া করা বড় ধ্বংসের আলামত। অন্য কেউ যদি পিতা-মাতার খেদমত করার সুযোগ না পায়, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছা; কিন্তু যে পেয়েও কাজে লাগাল না, সে নিঃসন্দেহে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।
হাদিস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়
* পিতা-মাতার খেদমত করা শুধু দুনিয়ার দায়িত্ব নয়, বরং জান্নাতের এক বিশাল চাবিকাঠি।
* বৃদ্ধ বয়সে তাদের সাথে ধৈর্যশীল ও দয়ালু আচরণ করা অপরিহার্য।
* পিতা-মাতার অবাধ্যতা, অবহেলা বা তাদের প্রতি কষ্টদায়ক আচরণ করলে মানুষ জান্নাত থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
* পিতা-মাতা জীবিত থাকাকালে তাদের দোয়া আদায় করতে হবে, আর মৃত্যুর পর দোয়া ও সাদকায়ে জারিয়া চালু রাখতে হবে।
মুফতি সাইফুল ইসলাম
কালের কণ্ঠ
© 71 Vision ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।