বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
27 Aug 2025 10:51 pm
![]() |
রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হলো সংবিধান। একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নাগরিক অধিকার, আইন প্রয়োগের সীমারেখা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম—সবকিছুর উৎস সংবিধান। তাই সংবিধানকে বলা হয় “রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন”। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা আছে।
সংবিধানের স্পষ্ট ঘোষণা
বাংলাদেশের সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
“এই সংবিধানই হবে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং এই সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোন আইন বাতিল ও শূন্য বলিয়া গণ্য হইবে।”
অর্থাৎ—
কোনো আইন, অধ্যাদেশ বা সনদ যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, সেটি কার্যকর হবে না।
সংবিধানের ঊর্ধ্বে যাওয়ার মতো কোনো দলিল বা কর্তৃত্ব নেই।
জনগণের সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটে সংবিধানে, তাই এটিকে উপেক্ষা করা মানে জনগণের ইচ্ছাকেই অস্বীকার করা।
“১৫ জুলাই সনদ” প্রসঙ্গ
সম্প্রতি কিছু মহল থেকে “১৫ জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়ার” দাবি শোনা যাচ্ছে। এটি নিছকই অর্বাচীন ও অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ—
কোনো রাজনৈতিক সনদ বা ঘোষণাপত্র কখনো সংবিধানের বিকল্প হতে পারে না।
সনদ কেবল রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর একটি কর্মপন্থা; এটি রাষ্ট্রের সর্বজনস্বীকৃত আইন নয়।
সংবিধান সংশোধন করার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া রয়েছে, কিন্তু কোনো সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার সুযোগ নেই।
কেন এমন দাবি বিপজ্জনক
১. আইনশৃঙ্খলার ভাঙন ঘটবে – সংবিধান বাদ দিয়ে ভিন্ন কোনো দলিলকে সর্বোচ্চ আইন করলে আইনের শাসন নষ্ট হবে।
২. রাষ্ট্রের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে – আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে দেখা হবে।
৩. গণতন্ত্রের ভিত্তি নষ্ট হবে – জনগণের ভোট ও সাংবিধানিক অধিকারকে অস্বীকার করা হবে।
বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে এবং জনগণের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে। তাই কোনো সনদ, অধ্যাদেশ বা দলিল সংবিধানের ওপরে যেতে পারে না। সংবিধানই সর্বোচ্চ আইন, এর বাইরে কিছু ভাবা মানেই রাষ্ট্রব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া।
অতএব, ১৫ জুলাই সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার দাবি নিছক বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল, যা আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।
মোঃ আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন: লেখক ও রাজনীতিবিদ