বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
22 Aug 2025 01:26 am
![]() |
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অচলাবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থাহীনতা, এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জর্জরিত পরিস্থিতি এখন নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—এই নির্বাচন কি সত্যিই একটি পরিবর্তনের পথ খুলে দেবে, নাকি আমরা আবারও পুরোনো চক্রের মধ্যেই ঘুরপাক খাবো?
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারি ২০২৬। রমজানের আগে এই নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যে জনমনে আলোচনার ঝড় তুলেছে। একদিকে জনগণ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গণতান্ত্রিক কাঠামোয় প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশায় আছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ব্যস্ত।
বাংলাদেশের নির্বাচন কেবল একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া নয়; এটি জাতীয় জীবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মূল ভিত্তি। কিন্তু গত দশকের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে, নির্বাচন প্রশ্নে আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিরোধী দলগুলো আশঙ্কা করছে, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালী মহল আশ্বস্ত করছে, এবার নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু।জনগণ, যারা আসলে এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু, তারা এখনও সন্দেহে—তাদের ভোটের মূল্য সত্যিই প্রতিষ্ঠিত হবে কি না।
তবুও আশাবাদের জায়গা অস্বীকার করা যায় না।একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা ইতিমধ্যেই একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর বাংলাদেশে নিবদ্ধ, যা রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে বাধ্য করবে।
তরুণ প্রজন্ম, যারা পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শক্তি, তারা এখন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মাঠ পর্যায়—সবখানেই সক্রিয়।
১. অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে—বাংলাদেশ নতুন করে আস্থা ফিরে পেতে পারে, যা অর্থনীতি, কূটনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও ইতিবাচক হবে।
২. আবারও বিতর্কিত নির্বাচন হলে—অচলাবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হবে এবং গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ভেঙে পড়বে।
৩. তৃতীয় শক্তি বা বিকল্প শক্তির উত্থান—যদি মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো আস্থার সংকট কাটাতে ব্যর্থ হয়, তবে নতুন নেতৃত্ব বা জোট রাজনীতির পরিসর পাল্টে দিতে পারে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দেখিয়েছে। আগামী নির্বাচন সেই পুনর্জাগরণেরই পরীক্ষা। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ কেবল একটি তারিখ নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মোড় ঘোরানোর সময়। জনগণ চায় একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন—যা সত্যিকারের গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করবে। এখন প্রশ্ন একটাই: রাজনৈতিক দলগুলো কি সেই দায়িত্বশীলতা দেখাতে প্রস্তুত?
মোঃ আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন: লেখক ও রাজনীতিবিদ