বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
21 Aug 2025 09:21 pm
![]() |
আমাদের সমাজে এক অদ্ভুত প্রবণতা বহুদিন ধরেই চলছে। দেশের জন্য, দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ,দক্ষ অনেক আমলাকেও আমরা দেখেছি—যাদের সারল্য, সততা ও কর্মদক্ষতা সবার কাছে প্রশংসনীয়। অথচ তাদের পদোন্নতি আটকে যায় কোনো না কোনো অদৃশ্য কারণে। অন্যদিকে, মাঝারি মানের কিংবা তোষামোদে সিদ্ধহস্তরা সহজেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যায়।
একই চিত্র আমরা শিল্প-সাহিত্যের মঞ্চেও দেখি।বহু মেধাবী অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রতিভা নিয়েও কাজ পান না। দিনশেষে তারা নীরবে, অযত্নে, আর্থিক কষ্টে নিভে যান। অথচ যাদের শিল্পের গভীরতা কম, কিন্তু চারপাশে হাততালি তোলার কৌশল বেশি—তাদের প্রাপ্তির শেষ থাকে না। এ যেন সমাজের অলিখিত নিয়ম।
প্রকৃত খাঁটি সোনা দিয়ে কখনো গয়না হয় না—কারণ সোনাকে পরার উপযোগী করতে খাদ মেশাতে হয়। শুধু সিমেন্ট দিয়ে বিল্ডিং দাঁড়ায় না—বালুও মেশাতে হয়। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একরকম ‘ভেজাল’ বা আপস প্রয়োজন হয়। সমাজের পরিভাষায় একে বলে অ্যাডজাস্টমেন্ট। কিন্তু সেই ভেজাল যখন খাঁটি জিনিসকে আড়াল করে ফেলে, তখনই আসল বিপর্যয় ঘটে।
সবচেয়ে বড় ব্যঙ্গের জায়গা হলো—অতিরিক্ত দক্ষ বা সৎ হওয়ার ফলও সবসময় মধুর নয়। কারণ, গাধার রাজ্যে ঘোড়া কখনো মানানসই হয় না। ঘোড়া আগে চলতে চায়, দৌড়াতে জানে। কিন্তু সেই রাজ্যের নিয়ম হলো—সবাইকে একই গতিতে চলতে হবে। তাই গাধারা একসাথে বলে ওঠে, “ঘোড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়াছে, তাহাকে মারিয়া ফেলো।”
এটাই আমাদের বাস্তবতা—
যোগ্যতা যত বাড়ে, ততই সমাজে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।সত্যিকারের প্রতিভা বা সততা প্রমাণ করলেই হুমকির মুখে পড়ে তার অস্তিত্ব।গড়পড়তা মানসই এখানে নিরাপদ, আর অতিরিক্ত ভালোমানুষ বা বেশি মেধাবী হওয়াই এখানে ঝুঁকিপূর্ণ।
কথা হলো—আমরা কি এমন এক সমাজ গড়ব যেখানে ঘোড়া বেঁচে থাকার জায়গা পাবে, নাকি গাধার ভিড়েই সন্তুষ্ট থাকব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে না পারলে রাষ্ট্র, সমাজ কিংবা সংস্কৃতি—কোথাও প্রকৃত অগ্রগতি আসবে না।
মোঃ আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন: লেখক ও রাজনীতিবিদ