সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫
19 Aug 2025 04:09 am
![]() |
পীরগঞ্জ রংপুর প্রতিনিধি:-রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের আখিরা শাখা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ ধসে পড়েছে। গত সপ্তাহ থেকে বাঁধের ব্লকগুলো ফাটল ধরে খসে পড়া শুরু হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এলাকাবাসীর অভিযোগ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নিম্নমানের কাজ, দুর্বল মনিটরিং এবং যথাযথ ডাম্পিং ছাড়া বৃষ্টির মধ্যে ব্লক বসানোর কারণে এ ধসের ঘটনা ঘটে। তাদের দাবি, প্রকল্প শুরুর পর থেকেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন সবার মধ্যে।
চতরা এলাকার গফুর মিয়া বলেন, এ যাবতে নদীর বাম সাইটের প্রায় ২শ মিটার ব্লক ২ বার ধসে পড়ছে এবং ঠিকাদারের লোকজন সাথে সাথেই মেরামত করছে। নদীর পানিতে ব্লক ডাম্পিং নেই যে কারনে পানিতে ঢলে পরছে ব্লক। পাথর সিমেন্টের কাজ বাশ দিয়ে করা যায় না।
একই এলাকার আশরাফুল ইসলাম জানান, জোড়াতালি দিয়ে করা হচ্ছে নদী সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে বর্ষা মৌসুমে। ব্লকের কাজে ওই নদীর বালু মাটি ব্যাবহার করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু স্থানের ব্লক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ডাইস মেশানো ইটের খোয়া বেডে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে, কোথাও দেড় ইঞ্চ কোথাও আড়াই ইঞ্চর উপর ব্লক বসানোর কারণে ভেঙ্গে ও দেবে যাচ্ছে।
ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলে তাঁরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই বাঁধের ব্লক ধসে পড়েছে। কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। নদী তীরবর্তী আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র বলেন, নদীর সাইড ঠিকভাবে দুরমুজ বা ফিনিশিং না করে পানির মধ্যে ব্লক বসিয়ে কাজ করছে ঠিকাদার। এজন্য আমার ঘরের সামনে ব্লক ফাটল ধরেছে। নদীর বাম তীর পুরোটাই ধ্বসে যাওয়ার ভয়ে আছি। কারণ এই সাইটের অনেক ব্লক এমনিতেই দেবে ও ফাকা হচ্ছে। সঠিকভাবে তদারকির অভাব এ কাজটি খারাপ হয়েছে।
একাজটি রংপুরের হাসিবুর রহমান নামে এক ঠিকাদার পেলেও সেটি বাস্তবায়ন করছে রংপুরের ভরদ প্রসাদ নামে এক ঠিকাদার। ওই ঠিকাদারের ম্যানেজার শ্যামল বাবু সংবাদকে বলেন, আমরা কাজটি দেরি করে বর্ষা মৌসুমে শুরু করেছি। যেগুলো সমস্যা হয়েছে সেগুলো আবার ঠিক করে দিতে হবে।
কি লেখার আছে লিখতে থাকেন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওখানকার কাজ দেবে গেছে এজন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার ঠিক করে দেবে। এক বছর থাকে ঠিকাদারের ডিফেক্ট লাইবেলিটিজ প্রিয়ড। এরেমধ্যে কোন সমস্যা হলে ঠিকাদার তার খরচে ঠিক করে দেবে।
পাউবোর রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আখিরা শাখা নদী রক্ষায় চতরা ইউনিয়নের চতরা হাট এলাকায় ৮০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য কাজ পায় হাসিবুল হাসান নামে এক ঠিকাদার। এ কাজে ব্যায় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে এ কাজ শুরু এবং অই বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ, স্থানীয়রা বলছেন, কাজ গতবছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে। কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম আরোও বলেন, আসলে ওখানকার খালটি লিজ দেওয়া ছিল মৎস্য অফিস থেকে সেখান থেকে লিজ ক্যান্সেল হয় এপ্রিলে। এর পর কাজটি শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। তবে এটি এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় ‘রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার নদীতীর সংরক্ষণ, ছোটনদী, খাল-বিল পুনঃখনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন শিরোনামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে আখিরার শাখা নদীর তীর সংরক্ষণে বাঁধ নির্মাণ ও সৌন্ধর্য্য বর্ধণের কাজটি শুরু হয়।
মোঃ আকতারুজ্জামান রানা