মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫
19 Aug 2025 04:17 am
![]() |
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ- ভূমিহীন ছকিনা বেওয়া। পেশা তার ভিক্ষাবৃত্তি। বয়স ৭০ বছর ছুঁই ছুঁই।থাকেন অন্যের বাড়িতে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সমাজসেবা কার্যালয়ের ভাতা প্রত্যাশায় ঘুরেছেন ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বরদের দ্বারে দ্বারে।প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেনি তার।আর কত বয়স হলে বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা পাবেন এই প্রশ্ন বৃদ্ধা ছকিনার।
দুর্বিষহ জীবনে বেঁচে থাকা ওই ছকিনা বেওয়ার অস্থায়ী বসবাস গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইসবপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামে। এ গ্রামের বিভিন্নজনের বাড়িতে বসবাস ছকিনার। স্থানীয়রা জানায়, স্বামী মেছের আলীকে অনেক আগে হারিয়েছেন ছকিনা বেওয়া। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। যেখানে রাত সেখানেই কাত। পেশা তার ভিক্ষাবৃত্তি। বয়সের ভারে হয়েছেন কুঁজো। নানা রোগে বাসা বেঁধেছে শরীরে। তবুও জীবিকার সন্ধানে নিরন্তর ছুটে চলা। যেন পায়ে তার বাহন। সকাল-সন্ধ্যা ঘুরে বেড়ান অন্যের দুয়ার-দুয়ারে। আজও কপালে জোটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতাদি। পান না কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধাও। ফলে জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এই বৃদ্ধার।সরেজমিনে জানা যায়, ছকিনা বেওয়ার স্বামী পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন। ছিল না তার জায়গা জমি।দাম্পত্য জীবনে প্রথম ছেলে সৈয়দ আলীর বয়স যখন ৫ বছর তখন ফের তার গর্ভে থাকা আরেক সন্তান রেখে মেছের আলী মারা যায়। এরপর জীবনে নেমে আসে কালমেঘ। দুই শিশু সন্তান সৈয়দ আলী ও রানজুকে বাঁচাতে ছকিনা বেওয়া বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি পেশা।আর বসবাস করেন প্রতিবেশীদের বাড়িতে।
এভাবে স্বামী মৃত্যুর ৪১ বছর ধরে জীবন-জীবিকার লড়াই করে চলছেন এই বৃদ্ধা।এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন। দুই ছেলে থাকেন জেলার বাইরে। তাদেরও অভাব-অনটনের সংসার। কেউ খোঁজ রাখে না ছকিনার। যে বয়সে আরাম আয়েশে থাকার কথা, ঠিক সেই বয়সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন।রাতযাপন করছেন অন্যের বাড়ি-বাড়ি। চরম দুর্বিষহ জীবন কাটছে তার। শেষ বয়সেও ছকিনা বেওয়া তপ্ত রোদ আর বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় ছুটছেন বিভিন্ন গ্রামান্তরে।
অসহায় ছকিনা বেওয়া বলেন, 'হামার সোয়ামি মেলা বছর আগে মরছে। হামাঘরে কোনো জমিজিরাত নাইও। মোর একন শরীল চলে না বাবা। তাও ভিখ্যত যাওয়া নাগে। সরকার নাকি ভাতা দেয় মুই তো পাম না। হামার এদিকের চেয়ারম্যান-মেম্বরক কছুনু কেউ মোক ভাতা কাট করি দেয় না বাহে'।স্থানীয় শিক্ষক মোসলেম আলী জানান, ভূমিহীন এই ছকিনার কষ্টের শেষ নেই। সরকারি বা জনপ্রতিনিধিদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের ছকিনার জন্য বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার অনলাইন আবেদন করে দিয়েছেন তিনি। এখনও ভাতাভুক্ত হয়নি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খোঁজ নিয়ে ছকিনাকে সহযোগিতা করা হবে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ছকিনা বেওয়া বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্য। তাকে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসব।