শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫
21 Jul 2025 03:21 am
![]() |
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:-বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট’ এর নামে অধীনতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরের তৎপরতা চালাচ্ছে এই সরকার অবিলম্বে এই অপ-তৎপরতা বন্ধ করুন এবং বন্ধ করুন; দেশবাসীকে না জানিয়ে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি করা চলবে না, এনবিআর-এর উপকমিশনার মুকিতুল হাসানকে বরখাস্ত এবং মামলা দেয়ার নিন্দা ও নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী)- সিপিবিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড এম এ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাহিদুর রহমান আজ ১৯ জুলাই ২০২৫ সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে
বলেন রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট’ এর নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন বা নন-ডিসক্লোজার চুক্তি স্বাক্ষরের তৎপরতা বন্ধ করা এবং এনবিআর
এর কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং মামলা দায়েরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মুকিতের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যাহার করুন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আর ও বলেন, ডঃ ইউনুস এর এই স্বল্পকালিন সরকার দেশবাসীকে আঁধারে রেখে এমন জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করার কোন এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের উপর ৩৭% রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তা ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫% করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। পূর্ব থেকেই বাংলাদেশের প্রায় সকল ধরণের রপ্তানি পণ্যের উপর ১৫% শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে। সবমিলে এখন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর প্রায় ৫০% শুল্ক আরোপ করার কথা বলছে মুক্ত বাজার অর্থনীতির অন্যতম প্রবক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আসলে এর পেছনে লুকায়িত আছে ভিন্ন উদ্দেশ্য। আসলে এই চুক্তি হলো বাংলাদেশ কে আমেরিকার দাস বা গোলাম বানানোর অপচেষ্টা মাত্র।
নেতৃদ্বয় বলেন রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশটি চীনের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে আমদানিকারক দেশগুলোকে চাপে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক, অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক আধিপত্যকে নিরঙ্কুশ এবং চীনকে মোকাবেলায় বাংলাদেশকে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক সামরিক পরিকল্পনায় আষ্টেপৃষ্টে রাখা। এর অংশ হিসেবেই ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট’ নামে একটা গোপন চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন বাণিজ্য সংস্থা ইউএসটিআর একটা গোপনীয় চিঠি বা চুক্তির খসড়া বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে। ২১ পাতার চিঠির কপিটি মোটা দাগে ৬ ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ ৬ ধরনের শতাধিক শর্ত সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে চুক্তিতে। এগুলো হলো—কর সংক্রান্ত শর্ত, অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত, রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত শর্ত, অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্ত। এই চুক্তির নানা শর্ত নিয়ে মার্কিন প্রশাসন, বিভিন্ন আমদানিকারক সংস্থার সাথে আলোচনা চালালেও বাংলাদেশের মানুষকে এ বিষয়ে কিছুই অবগত করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশের নন-ডিসক্লোজার বা গোপনীয়তার চুক্তি রয়েছে ফলে তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়! অথচ কেন এই গোপনীয়তার চুক্তি, এই চুক্তি কার স্বার্থ রক্ষা করছে কোন কিছুই দেশের মানুষ অবগত নয়। অবিলম্বে এধরণের গোপনীয়তার চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি আমরা।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, চুক্তির নানা শর্ত সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে ফাঁস করা হলে আমরা জানতে পারি যে, এই চুক্তি আসলে বাংলাদেশকে মার্কিন দাসত্বে দস্তখত করার চুক্তি ভিন্ন কিছুই নয়। সামরিক, অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এধরণের চুক্তি। যেখানে বলা হয়েছে, মার্কিন বিভিন্ন মানসনদ বাংলাদেশকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নিতে হবে, আর যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো আইন প্রণয়ন কিংবা স্ট্যান্ডার্ড স্থাপন করতে পারেনি, সেসব ক্ষেত্রে মার্কিন স্ট্যান্ডার্ড প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যাতে মার্কিন পণ্য অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। মার্কিন সামরিক যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়াতে হবে এবং চীনা সামরিক পণ্য আমদানি কমাতে হবে, রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমানের মাধ্যমে মার্কিন বেসামরিক উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়াতে হবে, মার্কিন জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধি নিশ্চিত করত হবে বাংলাদেশকে এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে হবে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের জন্য মার্কিন গম আমদানি বাড়াতে হবে, সামরিক বাহিনী ও সরকারি সংস্থার জন্য মার্কিন সয়াবিন তেল আমদানি বাড়াতে হবে এবং সয়াবিন সংরক্ষণের জন্য মার্কিন কোম্পানির অংশীদারিত্বে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও শিপিং খাতের বিকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, বন্দর, জেটি ও জাহাজে চীনের তৈরি লজিস্টিকস সিস্টেম লগিঙ্ক (খঙএওঘক) ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের মার্কিন পণ্য দেশটিতে রপ্তানি, পুনঃরপ্তানি করা যাবে না, বাংলাদেশকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অংশীদার করতে হবে ইত্যাদি আরও নানা শর্ত যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় সম্পদে একচ্ছত্র মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং যে কোন সময় তা সুরক্ষার বাহানায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকিও থাকবে। আমরা মনে করি আমেরিকার সহায়তা নিয়ে নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার দ্বীপাস্বপ্ন থেকেই আমেরিকা কে খুশি করতেই এই চুক্তির অপচেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, এমন নীল নকশার পরিকল্পনাকে গোপন রাখতে বর্তমান অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার পূর্বের ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো চূড়ান্ত দমন নীতির আশ্রয় নিচ্ছে। এরই মধ্যে এই চুক্তির শর্তাবলী প্রকাশ করায় ‘বাংলা আউটলুক’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সরকারের প্রেস উইং চাপ দিয়ে প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি এনবিআর এর উপকমিশনার মুকিতুল হাসানকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথি ফাঁসের অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে যা অত্যন্ত উদবেগজনক। একজন সরকারি কর্মচারী জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। দেশের স্বার্থবিরোধী এহেন গোপন পরিকল্পনা জনগণের কাছে উন্মোচনা করা কখনোই অপরাধ হতে পারে না।
নেতৃদ্বয় বলেন অবিলম্বে এই ধরণের জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্ববিরোধী ও মার্কিন বশংবদ হওয়ার অধীনতামূলক চুক্তি থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান এবং একই সাথে তিনি বলেন এধরণের চুক্তি করার কোন এখতিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তিনি অবিলম্বে এনবিআর কর্মকর্তা মুকিতুল হাসানকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার দাবিও জানান। একই সাথে সাম্রাজ্যবাদের সাথে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করা এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে জানান।
বার্তা প্রেরক,কমরেড তারেক ইসলাম বিডি,সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি,বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-সিপিবি(এম)