শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
28 Aug 2025 12:54 am
![]() |
পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ-বর্ষার আগমন মানেই দক্ষিণাঞ্চলের নদী-খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর। আর ঠিক এই সময়েই মাছ ধরার অপরিহার্য উপকরণ ‘চাই’ কেনাবেচা জমে ওঠে। এই ‘চাই’ বিক্রির জন্য জমজমাট হয়ে ওঠে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী বন্দর বাজার, যেখানে বসে শতবর্ষী ঐতিহ্যের চাইয়ের হাট।
এই হাট সপ্তাহে দুই দিন-শনিবার ও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসে। সড়ক ও নদীপথে শত শত বিক্রেতা ও ক্রেতার সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে শ্রীরামকাঠী। শুধু নাজিরপুর নয়, পাশের চিতলমারী, বানারীপাড়া, এমনকি অন্য জেলার মানুষও এই হাটে আসেন ‘চাই’ কেনার জন্য।
চাই তৈরি হয় বাঁশ, নারকেলের দড়ি কিংবা প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে। সাধারণত ২০টি চাই একসঙ্গে ‘এক কুড়ি’ হিসেবে বিক্রি হয়। কুড়িপ্রতি দাম পড়ে তিন হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে। কেউ কেউ আলাদা করে পিস হিসেবেও বিক্রি করছেন, যার দাম পড়ে ১০০ থেকে ১২৫ টাকা।
চাই তৈরির সঙ্গে যুক্ত গ্রামের বহু পরিবার।অনেকেই বলেন, তারা সারা বছর অন্য পেশায় থাকলেও বর্ষাকালে শুধু চাই তৈরি ও বিক্রির কাজ করেন। পরিবারের গৃহিণীরাও এ কাজে সহায়তা করেন।
হাটে আসা চাই বিক্রেতা সুখরঞ্জন মৃধা বলেন, “এ বছর প্রথম হাটে এসেছি। চার হাজার টাকা কুড়ি চাই বিক্রি হচ্ছে, তবে এখনো কেউ কেনে নাই।”
আরেক বিক্রেতা সুশীল জানান, “তিন হাজার টাকায় ১২ পিস বিক্রি করেছি। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম।চাই কিনতে আসা ক্রেতা সুমন শেখ বলেন, “৭-৮ বছর ধরে চাই দিয়ে মাছ ধরি। এবার দাম বেশি মনে হচ্ছে, তাই এখনো কিনিনি।”
পাইকারি ব্যবসায়ী মিজান ফকির জানান, “আমি চার শ পিস চাই কিনেছি। এগুলো ভান্ডারিয়া, কাউখালী, বরগুনা-এসব এলাকায় বিক্রি করব।”
শ্রীরামকাঠী বন্দর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল কবির রাসেল বলেন, “এই হাট প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো। পিরোজপুর জেলার সবচেয়ে বড় চাইয়ের হাট এটি। চাই একটি কুটির শিল্প। সরকার যদি সহায়তা করে, তবে এই ঐতিহ্য আরও বহু বছর টিকে থাকবে।”
শতবর্ষ পুরোনো এই হাট শুধু ব্যবসা নয়, বর্ষাকালের সঙ্গে মিশে থাকা এক অনন্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকেও বহন করে চলেছে।