বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫
30 May 2025 11:27 am
![]() |
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা:-গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী কুটিরশিল্প মেলা।গত ২২ মে শুরু হওয়া এ মেলায় হস্ত ও কুটিরশিল্পের কোনো পণ্য নেই। নামে মেলা হলেও মূলত নাচ-গান, মাদক সেবন ও লটারির রমরমা ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলার বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ফুটানির বাজার পাওয়ার হাউস মাঠে চলছে এ হস্ত কুটিরশিল্প ও পাটবস্ত্র মেলা।
মেলাস্থল ঘুরে দেখা যায়, মেলায় কুটির শিল্প পণ্যের কোনো দোকান নেই। রয়েছে তিনটি কসমেটিকসের দোকান, কয়েকটি ফুচকার স্টল, ¯িøপার বোট ও লটারির টিকিট বিক্রির ৮-১০টি কাউন্টার। এছাড়া একটি নাচ-গানের স্টেজ রয়েছে। মেলায় তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে হিন্দি গানের সঙ্গে অশ্লীল নৃত্য চলছে স্টেজে। ২০ টাকা মূল্যের টিকিট নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ মেলায় হস্ত কুটিরশিল্প ও পাটবস্ত্রের কোন দোকান বা স্টল নেই। স্থানীয় প্রভাবশালী ও জেলা প্রশাসককে ম্যানেজ করে মেলায় লটারির নামে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যর কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। এসব অশ্লীল নৃত্যে আকৃষ্ট হয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ মেলায় আসছেন। একদিকে গানের তালে অশ্লীল নৃত্য অন্যদিকে লটারিতে লোভনীয় পুরস্কারের চমক দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
জানা যায়, মেলা উপলক্ষে লটারির জন্য জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। লোভনীয় পুরস্কার দেখে অনেকে শত শত টিকিটি কিনছেন। লটারিতে মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার, ইজিবাইকসহ ৪০ থেকে ৫০টি পুরস্কারের কথা বলা হচ্ছে।
মেলাকে ঘিরে লটারির নামে অভিনব এ জুয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এলাকাবাসী।অনেকে বলেছেন, অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করে বিভিন্ন কৌশলে মেলার আড়ালে লটারি টিকিট বিক্রিসহ ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে আয়োজকদের। এছাড়া রাতে মাদকের ছড়াছড়ি চলে রাতে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার শঙ্কা করছেন তারা।স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অটোরিকশা, সিএনজিতে মাইকিং করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লটারির টিকিটি বিক্রি করা হচ্ছে।
মেলায় অশ্লীল নৃত্য পরিবশেন ও লটারির লোভনীয় পুরস্কারকে কেন্দ্র করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, দিনমজুর ও রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে চালানো হচ্ছে প্রচারণা। অনেকেই আকর্ষণীয় পুরস্কারের আশায় সারাদিনের আয়, কেউ কেউ পুরো মাসের বেতনের টাকায় টিকিট কিনে লটারিতে বাজী ধরছেন। অনেকে বলেছেন, ঈদকে সামনে রেখে মাদক কারবারসহ কোটি টাকার ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন আয়োজকরা।স্থানীয় যুবক রেজওয়ান ইসলাম বলেন, নৃত্যর সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে মেলার আড়ালে লটারির টিকিট বিক্রি করাই আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া বর্তমানে স্টেশন এলাকায় রাত হলেই মাদকের ব্যবসা বসে। মেলাকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে মাদক সেবন করে।
শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার বলেন, জুন মাসের ২৬ তারিখ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে এই মেলার নামে নাচ-গান কাম্য নয়। রাতে উচ্চশব্দে মাইক বাজানোয় আমরা লেখাপড়া করতে পারছি না।মিনহাজ রাব্বী নামে একজন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। কিছুদিন হলো জেলায় একের পর এক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ইজিবাইক ছিনতাই করে চালাককে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে। মেলা এখনই বন্ধ না করলে চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য মো. সাজু আকন্দ বলেন, ‘সব দল মিলে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ডিসি স্যারের (জেলা প্রশাসক) সরাসরি অনুমতি আছে। এখানে সব কিছু করা যাবে এই ভাবেই ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে।’গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা এ মেলার আয়োজক নই। আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ডিসির অনুমতিতে মেলা চলছে।‘
গাবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল আলম বলেন, ‘মেলা বন্ধ করতে হলে সবার আগে সামাজিক আন্দোলন করে প্রতিরোধ করতে হবে। মেলায় আর কোনো ধরনের লটারি চালাতে দেব না। কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য বেচাকেনা করতে দেওয়া হবে না। সে বিষয়ে আজই সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অবগত করা হবে।’
জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, ‘মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে লটারির কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। মেলায় নাচগান হবেই।’
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল.পলাশবাড়ী