রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
15 Apr 2025 12:01 am
![]() |
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ- রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চতরা হাট। যেখানে পীরগঞ্জ উপজেলাসহ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, ওসমানপুর এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার জনসাধারনের অবাধ বিচরণ। হাটের নামে প্রায় ৯.৮০ একর জমি থাকা স্বত্বেও হাটটি জায়গা সংকটে পরিনত হয়েছে প্রভাবশালীদের দখলের কারনে।
অবৈধ দখলদারীদের হাত থেকে হাট বাঁচাতে উচ্ছেদ অভিযান জরুরী। এখানে বেপরোয়া ভাবে হাটের জায়গা দখলের প্রতিযোগীতা চলছে।যে কারনে মালিকানা জমি লিজ সহ হাটের চতুরদিকের সরকারি সড়কের উপর নিয়মিতভাবে হাট বসানো হচ্ছে। সড়কে হাট বসানোর ফলে তীব্র যানজটে নাকাল হাটুড়ী ও সাধারণ পথচারী।সিএস রেকর্ডে রাজা সূর্য কুমার গুহ রায়ের ছেলে সৌরিন্দ্র মোহন গুহ রায়ের জমিদারি পরগনা কাবিলপুরের বিভিন্ন দাগে ২২.০১ একরের মধ্য জেএলনং-১৭৯, খতিয়ান নং-০১, মৌজা ইকলিমপুরে ৯.৮০ একরে চতরা হাট গড়ে উঠে। যা পরবর্তিতে পূর্ব পাকিস্থান প্রদেশ পক্ষে কালেক্টর রংপুর নামে এসএ রেকর্ড চুড়ান্তভাবে সম্পাদিত, প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। নব্বই দশকের পর থেকে এক শ্রেণীর লোভি মানুষ ঘর-বাড়ি, দোকান পাট নির্মাণ করে হাটের ৯.৮০ একর জমি দখলে নিতে থাকে। বর্তমানে ৭ একর জমি অবৈধ দখলদারদের দখলে। অবশিষ্ট ২.৮০ একর জায়গায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাটের কার্যক্রম।
চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন জানান, পাঁকা বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করে দখলকৃত হাটের জমি পুণরুদ্ধারে ২০০৭, ২০০৮ সালে এসিল্যান্ড সাজ্জাদ হোসেন ভুইয়া অভিযান চালিয়ে অধিকাংশ জমি পুণরুদ্ধার করে।পরবর্তিতে ধীরে ধীরে উদ্ধারকৃত জমি আবারও দখলদাররা দখল নিয়ে নেয়। ২০২১ সালে এসিল্যান্ড সঞ্জয় কুমার অভিযান আরাম্ভ করলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। রাজনৈতিক গেঁরাকলে শক্তভাবে অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় হাটের জমি আজও উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। বরং সুযোগ পেলেই কেউ না কেউ জমি দখলে নিচ্ছে। বর্তমানে হাটের ৬টি সেডও অনেকের দখলে। হাটের জমি ব্যক্তি মালিকানার দাবির ফলে হাটে ড্রেনেজ সুবিধাও ব্যহত।
চতরা ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা নুরে আলম জানান, ২০২৩ সালের ২৮ আগষ্ট দাখিলকৃত প্রতিবেদনে আইয়ুব আলী, নূর আলম, নওয়াব আলী, আব্দুস সামাদ, সোলেমান, মজিবর রহমান, জাকারিয়া আহম্মেদ, আল এমরান, মর্জিনা বেগম, খোকা মেম্বার বাড়ি নির্মাণ করে হাটের জমি দখলে নিয়েছে।
এছাড়াও সেলিম মিয়া, খালেক মন্ডল, ছালেক মন্ডল, সুমন, আলম, বিকাশ চন্দ্র, লুৎফর, ইব্রাহিম সহ ৩০৮ জন আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দোকান, আড়ৎ, অফিস বসিয়ে হাটের জায়গা দখলে রেখেছে।সর্বশেষ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রতিবেদনে দখলদারদের সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে।অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গা প্রায়ই দখল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি হাটের অর্ন্তভুক্ত নদী শ্রেণীর জমিও অবৈধ দখলে। এ অবস্থায় হাটের পরিবেশ বাঁচাতে উচ্ছেদ ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।
হাট ইজারাদার হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, চতরা হাট ৯.৮০ একর জমির উপর স্থাপিত হলেও সীমিত জমির উপর হাট বসানো হচ্ছে।এলাকার কিছু লোকজন প্রভাব খাটিয়ে হাটের অলিগলিতে প্রায় ৩৫০টি দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। তারা অধিকাংশ ঘরগুলো ভাড়ায় পরিচালনা করছেন।
এছাড়াও হাটের জমিতে সোনালী ব্যাংক সহ ৪০টি স্থানে বাসা বাড়ি গড়েছেন এলাকার প্রভাবশালী লোকজন।জায়গা সংকটে ক্রয়-বিক্রয় করতে আসা সাধারণ জনগণ নানা সমস্যায় সমুক্ষীণ। বিশেষ করে কাঁচামাল বিক্রেতাগন হাটের স্থান থেকে ৪০০মিটার দুরত্বে চতরা ডিগ্রী কলেজের সম্মুখে ধাপেরহাট-চতরা সড়কের দু’দিকে বেচা-কেনা করছে। এতে হাট সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠা ২টি কলেজ, ৩টি হাইস্কুল, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, এতিমখানা ও কিন্ডার গার্টেন সহ ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি ছোট ছোট দুর্ঘটনায় পড়ছে। হাটের ভিতর সরকারি ভাবে নির্মিত সেড দখল নিয়েও ঘর নির্মাণ করেছে অনেকে।
দখলদার হারুন অর রশিদ জানান, ব্যাংকের মূল ভবন আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, সামনের পারকিং ৫ শতক হাটের দাগে রয়েছে। ৬২ সালে চেক মূলে মৃত নুরুন্নবী শেখ চেক মূলে হাটের জমির মালিক হয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করেন। বর্তমানে মাঠ জরিপ আমাদের নামে।
দখলদার নওয়াব আলী জানান, জমিদারের চেক মুলে আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমি ও আমার ভাই আইয়ুব আলী ২৫ শতক জমির উপরে বাড়ি নির্মাণ করে বহুদিন হলো বসবাস করছি। সরকার চাইলে আমাদের জায়গা করে দিক। হাটের জায়গা ছেড়ে দিবো।
অপর দখলদার খোকা মেম্বার জানান, হাটের জায়গায় বাড়ি ও দোকান করে অনেকে আছে। আমি নিয়মিত হাটের ইজারাদারকে টোল দেই। যখন সরকার মার্কেট করবে কিংবা যে কোন প্রয়োজনে ছেড়ে দিতে বলবে তখন ছাড়বো। ইউএনও খাদিজা বেগম জানান, আমরা সরকারি জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
মোঃ আকতারুজ্জামান রানা,পীরগঞ্জ,রংপুর