শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫
22 Mar 2025 03:21 am
![]() |
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ- রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রাস্তায় অযতেœ অবহেলায় মরে যাওয়া পরেও কিছু নারিকেল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে আছে। চতরায় আশির দশকে ইউনিয়নটিতে প্রায় ৮০ হাজার নারিকেলের চারা লাগিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন সেই সময়ের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তার স্বপ্ন ছিল ইউনিয়নের সব রাস্তাঘাটের দু পাশে পরিকল্পিতভাবে নারিকেল গাছ লাগিয়ে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। সেইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা। বৃক্ষপ্রেমিক সেই চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর অযতেœ অবহেলায় মৃতর পথেই তার স্বপ্ন। প্রায় দুই তৃতীয়াংশের বেশি গাছ মারা গেছে, অযতেœ রয়েছে জীবিত কিছু গাছ।
অভিযোগ আছে, পরবর্তীতে যারা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তারা কেউই এই গাছগুলোর যতœ নেননি। পাশাপাশি সরকারি কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি না থাকার কারণে ৬০ হাজারের বেশি গাছ মরে যায়।
এলাকার বয়স্ক এবং বৃদ্ধ মানুষ গুলো জানান, কত সুন্দর ঘাটা (রাস্তা) ধারের (পাশে) নারকেল গাচগুলো হামার (আমার) চোখের আগে (সামনে) নষ্ট হয়ে গেল। তরতাজা নারকেল গাছগুলো কেউ দেখাশুনা করলিনা। শুনচিনো (শুনেছি) তার বিদেশ থাকা বেটি (মেয়ে) আবার গাছ নাগাবি (লাগাবে), সেটাও তো ঘাটাত (রাস্তায়) দেকনু না (দেখিনা)।সরকার এতো জাগাত (জায়গায়) এতো ট্যাকা ঢালে (দেয়) এই ঘাটার নারকেল গাছের দিকে দেকপ্যা (নজর)পারে না’ বলেও আক্ষেপ তার। আব্দুল জলিলের ফ্রান্স প্রবাসী কন্যা জুঁই তাজুল্লী ফেরদৌসী পিতার স্মৃতি রক্ষায় নারিকেল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে সফল হতে পারেনি।
এলাকাবাসীর দাবি, সরকার উদ্যোগ নিলে এলাকাটি পর্যটন ইউনিয়ন হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পাবে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানাগেছে, সারা পৃথিবীর প্রায় ৯৩টি দেশে নারকেলের চাষ হয়। তবে, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস ও ভারতে নারিকেল উৎপাদনে বেশি হয়। বিশ্বে উৎপাদিত মোট নারিকেলের ৭০ ভাগ উৎপাদিত হয় এ তিনটি দেশে। বর্তমানে ভারতে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে নারিকেল চাষ হয়। ভারতের অন্ধো প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও অন্য অংশের উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ সবচেয়ে বেশি। দেশটির সরকার এজন্য বিশাল ওই এলাকাকেগুলোতে নারিকেল চাষ স¤প্রসারণ ও উৎপাদন সম্ভাবনা এলাকায় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বিশাল এলাকা নারিকেল চাষের আওতায় এনেছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, দেশে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ছোবড়া ছাড়া নারিকেল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন, এসময়ের মধ্যে ফাইটোসেন্যানেটরি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে ১১৬ মেট্রিক টন।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি ১১ হাজার ৪১ মেট্রিক টন, এসময়ের মধ্যে ফাইটোসেন্যানেটরি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে ৯৬ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি নেই। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি ১১ হাজার ৪১ মেট্রিক টন হলেও সে অর্থ বছরে আমদানি কম হয়েছে। তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রতিবছরই নারকেল আমদানি বাড়ছে।
বাংলাদেশে নারিকেল কম হওয়ার কারণ হিসেবে দেখাগেছে পরিচর্যার অভাব দায়ী করেন এ কৃষি বিজ্ঞানীরা। দেশেও পরিচর্যা করলে প্রতি গাছে বছরে আড়াইশ নারিকেল হওয়া সম্ভব বলে দাবি তার।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সাদেকুজ্জামান সরকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নারিকেল গাছ গুলোর পরিচর্যা বিষয নিয়ে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারি। সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে গাছগুলোকে সুস্থ সবল করা যেতে পারে। আর এজন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ উপজেলা মিটিং এ বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করলেই প্রকল্পের ব্যবস্থা হয়ে যেত। গাছগুলোর যতœ নিলেই ফলনও বেড়ে যাবে।
মোঃ আকতারুজ্জামান রানা,পীরগঞ্জ,রংপুর