সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
17 Mar 2025 04:43 pm
![]() |
শাহ আলী বাচ্চু স্টাফ রিপোর্টার জামালপুর:- জামালপুর সদর উপজেলার ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের অন্তর্গত গোপালপুর বাজারে বসেছে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা। আনন্দ উৎসব চলছে ঘরে ঘরে।
মেলা উপলক্ষে এলাকার ঘরে ঘরে মেয়ে জামাই দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে আনে বলেই এ মেলাকে জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত।
জামালপুর -ময়মনসিংহ সড়কের সাথে গোপালপুর বাজারে প্রতি বছরের মতো এবারো ১ চৈত্র (শনিবার) থেকে বসেছে জামাই মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে জামালপুর পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে বইছে আনন্দ উৎসব।
এ মেলার আদি ইতিহাস থেকে জানা যায়,ব্রিটিশ আমলে গোপালপুর বাজারে একটি বিরাট বট গাছ ছিল। এর নিচে বারুনি স্নান উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের জমায়েত হতো।এ উপলক্ষে সেখানে মেলা বসতো। সেই থেকে হিন্দুদের পাশাপাশি এলাকার মুসলমানরাও একই স্থানে মেলা শুরু করে। সেই থেকে মুসলিমরা এটাকে ইসলামি মেলা নাম দিয়ে ১ চৈত্র এর আয়োজন করে আসছেন। এখন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোপালপুর মেলা সবার অংশগ্রহণ করেন।
এ মেলায় গিয়ে দেখা হয় পিয়ারপুর কলেজের অধ্যাপক আকতারোজ্জামানের সাথে । তিনি জানান,গোপালপুরের জামাই মেলা উপলক্ষে জামালপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের নরুন্দি, ঘোড়াধাপ, ইটাইল, বাঁশচড়া, তুলশীরচর, লক্ষীরচর, রানাগাছা, শরিফপুর , শ্রীপুর ইউনিয়নসহ প্রতিবেশি মুক্তাগাছার চেচুয়া এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। ঈদ না আসতেই দেখা দেয় ঈদের আনন্দ। শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক এমনকি বৃদ্ধরাও মেলার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন।
ঘোড়াধাপ গ্ৰামের মাসুম বলেন,জামাই মেলা উপলক্ষে শশুর পক্ষ মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিদের দাওয়াত করে নিজ বাড়িতে আনে। জামালপুরের আঞ্চলিক ভাষায় নাইর বলে।নতুন জামাইয়ের হাতে তুলে দেয় সেলামির টাকা। আর জামাই স্ত্রী, শালা-শালিকে নিয়ে মেলায় গিয়ে মিষ্টি, নানা মিঠাই মন্ডা ও বিভিন্ন পণ্য কিনে আনেন।শালা-শালীকে কিনে দেন নানা খেলনা উপহার সামগ্রী। এছাড়াও শশুর পক্ষ থেকে জামাই বাড়িতে পাঠানো হয় মিঠায় মন্ডা ও প্রসাধনী সামগ্রী। জামাইরা মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সারা বছর। কবে মেলা আসবে। কবে হাতে পাবেন শশুর শাশুড়ির সেলামির টাকা। শুধু জামাইরা কেন, মেলা উপলক্ষে নিকট আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধদের দাওয়া দেয়া হয়। তাদের তুলে দেয়া হয় মিষ্টির প্যাকেট।
শরিফপুর এলাকার বাসিন্দা হেলাল জানান, আমি গোপালপুরেব ভারুয়াখালী বিয়ে করেছি। বিয়ের পর থেকেই আমার শশুর শাশুড়ি দাওয়াত দেয় ।
মেলা করার জন্য হাতে তুলে দেয় নগদ টাকা। আঞ্চলিক ভাষায় বলে পূরবী । এভাবেই চলছে প্রায় এক যুগ ।মেলার মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো বালিশ মিষ্টি। এখানে ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি ওজনের একেকটি বালিশ মিষ্টি ও চমচম পাওয়া যায়। এছাড়াও কাঁচা মরিচের সবুজ মিষ্টিসহ নানা ধরনের মিষ্টির বিশাল সমারোহ ঘটে। জামাই মেলায় পুতুল নাচ, নাগরদোলা ও লাঠি খেলা, মোটরসাইকেল খেলা, টয় ট্রেনসহ ইত্যাদি খেলার আয়োজন করা হয়। মিষ্টি-মন্ডার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে চমচম, গোল্লা, বালিশ মিষ্টি, কাঁচা মরিচের মিষ্টি, সন্দেশ, মুড়ি-মুড়কি, ঝুরি, বাতাসা, কদমা, নৈ-টানা ও সাজ। শিশুদের জন্য আছে বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও নানা প্রসাধনী সামগ্রী ছাড়াও গৃহস্থালি মসলা মধ্যে হলুদ, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন,আদাসহ নানা মসলাজাত সামগ্ৰী ।
৩ চৈত্র মূল মেলা শেষ হলেও ঘর-গৃহস্থের যাবতীয় ফার্ণিচার ও আসবাবপত্র থাকবে আরো ১৫ দিন।
ঘোড়াধাপ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জানান, ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা উপলক্ষে সমগ্র পূর্বাঞ্চল যেন প্রাণ ফিরে পায়। আনন্দ উৎসবের সীমা থাকে না। মেলাটি এবার মাঝ রমজানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারপরেও লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি। মেলায় জুয়া,অশ্লীল নৃত্য না থাকায়
মেলায় সার্বিক নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান তিনি।