রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
24 Feb 2025 04:12 am
![]() |
৭১ভিশন ডেস্ক:- আজ ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ (রবিবার) সকাল ১০:০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবীতে নন-এমপিও সংগঠনের মোর্চা “সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ” এর উদ্যোগে শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
উক্ত কর্মসূচীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেটর এ বি এম ফজলুল করিম বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর হলেও বাংলাদেশে সব চাইতে বেশি বৈষম্যের শিকার শিক্ষকরা। বিগত স্বৈরাচার সরকার সবকিছু দলিয় করণের মাধ্যমে শিক্ষকদের মাঝে বৈষম্য তৈরী করছে আকাশপাতাল। জাতিগড়ার কারিগর শিক্ষকরাই আজ সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত অবহেলিত। এখন স্বৈরাচারী দলান্ধ সরকারের পতন হয়েছে। জনগনের ম্যানডেট নিয়ে অন্তবর্তিকালিন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। তাই আমরা এই সরকারের কাছে আবেদন আনাবো বৈষম্য দূর করে স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন-এমপিও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ডিগ্রি কলেজ) একযোগে এমপিওভুক্ত করুন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচীতে উপস্থিত হয়ে তিনি তার বক্তব্যে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ২০২১ সালে অযৌক্তিক এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও-বঞ্চিত করেছে। অথচ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ২০-২৫ বছর ধরে এমপিও-বিহীন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক-কর্মচারীরা নিরলসভাবে পাঠদান কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন এবং জাতীয় শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিও থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের এবং শেখ পরিবারের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল, সেগুলো এমপিওভুক্ত করেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, শিক্ষাকে উন্নত করে তুলতে হলে যোগ্য, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ শিক্ষকের তুলনা নেই । আর এ ধরনের যোগ্য শিক্ষক পেতে হলে চাই তাদের জন্য উপযুক্ত সম্মানী, বেতন-ভাতা, পদোন্নতি, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ইত্যাদি যা একান্তই প্রয়োজন। কারণ শিক্ষাই জাতীর উন্নতির চাবিকাঠি একথা মনে রেখে জাতিকে সুশিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে আর্থিকভাবে অভাব-অনটনে কষ্টে রেখে উপযুক্ত সুশিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি, বাসা ভাড়া বৃদ্ধি, যাতায়াত খরচ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সকল বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক শিক্ষক আজ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাই অন্তত পক্ষে শিক্ষকরা যেন পরিবারের সাথে আনন্দের সহিত ঈদ উৎযাপন করতে পারে, সে জন্য ঈদুল ফিতরের পূর্বেই এমপিওভুক্ত সকল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ অনুদানসহ পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদান করার জন্য অন্তবর্তিকালিন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহব্বান জানাচ্ছি।
কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে প্রধান সমন্বয়ক, অধ্যক্ষ মোঃ দবিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিবছর এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেয়া হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত চার বছর কোন আবেদন নেয়া হয়নি। ২০২৫ সালে যদি আবেদন না নেয়া হয় তাহলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে বিনা বেতনে কেউ চাকরি করতে পারেনা।
তিনি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সামাজিক মর্যাদা ও সীমাহীন কষ্টের কথা চিন্তা করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপিও নীতিমালা ২০২১ বাতিল করে স্বীকৃতিই একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও’র নীতিমালা কার্যকর করে সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, ভোকেশনাল, কৃষি ও ডিগ্রি কলেজ) একযোগে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানান।
প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মোঃ নাজমুছ সাহাদাৎ আজাদী বলেন, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাজেটে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। উক্ত টাকা দ্বারা অবিলম্বে নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে।
নন-এমপিও সংগঠনের মোর্চার সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মোঃ মনিমুল হক বলেন, নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন প্রদান রাষ্ট্রের একনম্বর অগ্রাধিকার হতে হবে। দেশে আন্দোলনরত যতগুলো পেশাজীবী সংগঠন যত দাবী করছে তার মধ্যে নন-এমপিও (বেতন বিহীন) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন দেয়া সবচেয়ে যৌক্তিক ও মানবিক দাবী। শিক্ষা মৌলিক অধিকার। শিক্ষকের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নত না হলে দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থী তথা আদর্শ নাগরিক গঠন করা সম্ভব নয়। আদর্শ নাগরিক ছাড়া দেশের স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়। তিনি আরো বলেন, দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন নন-এমপি শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি প্রিন্সিপাল মোঃ সেলিম মিঞা, সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মোঃ ইমরান বিন সোলায়মান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মোঃ আফতাবুল আলম, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ বাকী বিল্লাহ, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর মোঃ এরশাদুল হক, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমান বাবুল, সমন্বয়ক সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন বাবুল, সুপার মোঃ আজাহার আলী, প্রভাষক মাহবুব আলমসহ আরো অনেকে।