বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
12 Feb 2025 04:39 pm
![]() |
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ):- উত্তর জনপদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রতিটি এলাকার আম গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। শীত যেতে না যেতেই আমের মুকুল জানান দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। বর্তমানে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত আত্রাই উপজেলার প্রতিটি এলাকা।
‘আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা / ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে / মামার বাড়ে যাই। ঝড়ের দিনে মামার দেশে / আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে / রঙিন করি মুখ...।পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি কবিতার পংক্তিগুলো বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কিছু দিন। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ।
বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা।
এ বছর কৃষিবিদ ও আম চাষীরা আশা করছেন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার আমের ভাল ফলন হবে। আমচাষী ও বাগান মালিকেরা বাগান পরিচর্যা করছেন। অবশ্য গাছে মুকুল আসার আগ থেকেই গাছে পরিচর্যা করছেন তারা। গাছে গাছে বালাইনাশক স্প্রে করার দৃশ্য চোখে পড়ছে।
উপজেলার প্রতিটি একাজুড়ে এখন সর্বত্র গাছে গাছে শুধু আমের মুকুল আর মুকুল। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম যেন প্রতিটি আমগাছ। সেই সুবাদে মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। রঙিন-বন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে, তেমনি নতুন সাজে যেন সেজেছে আত্রাই উপজেলার আম বাগানগুলো। আমের মুকুলে ভরপুর আর ঘ্রাণে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। শোভা ছড়াচ্ছে নিজস্ব মহিমায়। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা, উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে আম চাষ না হলেও প্রাথমিক ভাবে এবছর ব্যক্তি উদ্যোগে উপজেলায় প্রায় ১২৫ হেক্টরের জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে আম বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বাগানে আমরুপালি, ফজলি, খিড়সা, মোহনা, ল্যাংড়া, রাজভোগও গোপালভোগসহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও ছোট ছোট পরিত্যাক্ত এবং বাড়ীর আশেপাশের জায়গাগুলোতে অনেক গাছ রয়েছে।ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গাছে মুকুল আসতে শুরুও করেছে। আগামী ফাল্গুন মাসের ১ম সপ্তাহ নাগাদ মুকুলে ছেঁয়ে যাবে প্রতিটি আম গাছ।এ উপজেলার উৎপাদিত আম এলাকার চাহিদা পুরনের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
এব্যাপারে উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের সফল আম চাষী মো. মজিদ মন্ডল জানান, পুরাপুরিভাবে এখনো সব গাছে মুকুল আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যেই সব গাছেই মুকুল আসবে। আমি এ আম থেকে অনেক টাকা আয় করেছি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমচাষীরা জানান, এখনো সব গাছে মুকুল আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যেই সব গাছে মুকুল আসবে। প্রতি বছরই তারা আম গাছ থেকে অনেক টাকা আয় করে থাকেন। এছাড়াও অনেকেই আমের বাগান করেছেন তারাও প্রতিবছর আম থেকে অনেক টাকা আয় করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ইতিমধ্যে আম চাষীদের আম গাছে মুকুল আসার আগে এবং আমের গুটি হবার পর নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জৈব বালাইনাশক ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে আমসহ অন্যান্য ফল চাষে কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের ফলন ভাল হবে আশা করছেন তিনি।