শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৫
10 Jan 2025 04:43 pm
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:- বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত শরনাংকর মহাথেরোর আগামী ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের ফলহারিয়া জ্ঞান শরণ মহারণ্য বৌদ্ধ বিহারে আগমন করবেন এবং স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করবেন- এই খবরে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজের পর কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।স্থানীয় ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় ও হেফাজত ইসলাম এবং বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন তার আগমন ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে স্থানীয় ফলাহারিয়া পাঠান আউলিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সদকাকৃত গরু' বিহারের এলাকায় ঢুকে ঘাস খাওয়ার দায়ে ভদন্ত শরনাংকর মহাথেরোর অনুসারিরা মাদ্রাসায় হামলা ও ভাঙচুর করে।এছাড়াও আজান ও নামাজের সময় বৌদ্ধ ভিক্ষু মাইক বাজিয়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতো।এরপর ২০১৪ সালে পদুয়া ইউনিয়নের ফলাহারিয়া এলাকায় বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষ প্রধান সড়ক থেকে শাহ্ সুফী হযরত পাঠান আউলিয়ার মাজার ও বিহারের দিকে প্রবেশ পথে বৌদ্ধ মূর্তি সম্বলিত গেট নির্মাণের চেষ্টা করলে মাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় মুসলমানদের সাথে বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ বিহার ও বনবিভাগের মধ্যে বনবিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনাংকর মহাথেরোর নেতৃত্বে বনবিভাগের জায়গা দখল চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। একই সময়ে ভিক্ষুর অনুসারী প্রায় অর্ধশত লোক বনবিভাগের কর্মীদের ওপর হামলা করে।
এ ঘটনায় একই বছরের ৩০ অক্টোবর বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনাংকর মহাথেরোর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩৫ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করে বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৭ জুন খুরুশিয়া রেঞ্জের বনবিভাগের নার্সারির আনুমানিক ৭৫ হাজার চারাগাছ কেটে ফেলা হয়।ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে ৯ জুন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করে বনবিভাগ।বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনাংকর মহাথেরোরের অনুসারিদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্থানীয় হিন্দুদের শ্মশানের জায়গা দখল করার অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে ভিক্ষুর অনুসারিদের মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়াও তিনি বিশ্ব নবীকে অবমাননাসহ ইসলাম ধর্মে কটূক্তির একাধিক অভিযোগ রয়েছে, এবং তার বিরুদ্ধে স্থানীয় কিছু মুসলিমদের পানি পড়া দিয়ে মুশরিক বানানোর অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভদন্ত শরনাংকর মহাথেরোর চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার বড়ুয়া পাড়া মধ্যম মার্দাশা এলাকার দিলীপ বড়ুয়ার ছেলে। তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক ইউনিয়নের ফিরিঙ্গিরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেন এবং শিলক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি রাউজান উপজেলার হাজী বাদশা মাবিয়া কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। পরে তিনি ২০০৪ সালের ২৪ অক্টোবর সন্ন্যাসী জীবন গ্রহণ করেন। তিনি ২০১১ সালে ফলাহারিয়া এলাকায় বসবাসকারী বৌদ্ধ ধর্মাবল্বীদের সহায়তায় বনবিভাগের ৫ শতাংশ জায়গা দখল করে পাহাড়ের ওপর গর্তে ধ্যান শুরু করেন। তৎকালীন বনবিভাগের উদাসীনতা ও নজরদারি না থাকার সুযোগে পর্যায়ক্রমে তিনি পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস বন বীটের আওতাধীন খুরুশিয়া রেঞ্জের প্রায় ২০১ একর জমি দখল করে 'জ্ঞান শরণ মহারণ্য বৌদ্ধ বিহার' প্রতিষ্ঠা করেন।
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভদন্ত শরনাংকর মহাথেরো তার কর্মসূচি বাতিল করেন।তিনি কিছুদিন রাউজানে অবস্থান করে বিদেশ যাওয়ার পূর্বে কক্সবাজারের রামুতে যাবেন বলে জানা গেছে।
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনাংকর মহাথেরোর আগমন উপলক্ষে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো।গত ৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। আজ উপজেলা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে বৌদ্ধ ভিক্ষুর পক্ষ থেকে রাঙ্গুনিয়া আসার কর্মসূচি বাতিলের কথা জানানো হয়েছে।’