শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
29 Dec 2024 06:44 am
রুমানা আমিন ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:- সকালে ঘাসের ডগার শিশিরবিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের শিশির আর সন্ধ্যায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে বগুড়া শহরসহ প্রত্যন্ত গ্রামেও। ফলে শীত নিবারনে শহরতলী ও গ্রামবাসীরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোশকের দোকানে। যে কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষকের কারিগরদের।
শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় লেপ-তোশক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বগুড়া শহরের লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায় এসব শীত বস্ত্রের। বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বগুড়া শহরের বিভিন্ন লেপ-তোষকের দোকানে ঘুরে দেখা গেছে শীতকে সামনে রেখে এমন প্রস্তুতির দৃশ্য।
এদিকে পৌর শহরের পোশাক মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে শীতের গরম কাপড় কেনার ধুম এখনো পড়েনি। প্রতিটি দোকানিরা বলছে, শীতের গরম কাপড় বেচা-কেনা শুরু হয় একটু দেড়িতে। শীতের গরম কাপড়ের তেমন চাহিদা না থাকলেও তুলা বাজারে শুরু হয়েছে তুলার বেচা-কেনা আর লেপ-তোষক তৈরির ধুম। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হরেক রকমের তুলা দিয়ে তৈরি করছেন ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের লেপ। লেপ তৈরির কারিগররা বলছেন শীতের তীব্রতা শুরু হলে লেপ তৈরির ব্যস্ততা আরো বেড়ে যাবে। প্রতি বছরের এ সময়টায় আমাদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। জানতে চাইলে বগুড়া শহরের কাঁঠালতলা তিন নম্বর রেলগেট মার্কেটে আইয়ুব ট্রেডার্সের লেপ তৈরির কারিগর ইকবাল হোসেন জানান, প্রতি বছরই শীতের সময় আমরা লেপ তোষক তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করি। তবে আমাদের মজুরী সে ভাবে বাড়েনি। চলতি মৌসুমে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই লেপ-তোষক তৈরিতে খরচ বেড়ে গেছে। কাপড় ও তুলার মান বুঝেই লেপ-তোষকের দাম নির্ধারণ করা হয়। বড় আকারের লেপ তৈরির মজুরী ৩৫০ টাকা আর মাঝারি আকারের লেপ তৈরির মজুরী ২৫০ টাকা। তুলা, কাপড়, কভার এবং মজুরীসহ একটি বড় লেপ তৈরিতে মোট খরচ পড়ে দুই হাজার ৫০০ টাকা। আর মাঝারী আকারের লেপে মোট খরচ পড়ে এক হাজার ৫০০ টাকা। আর তোষক তৈরিতে দাম পড়ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। সারাদিনে ৭-৮ টি লেপ তৈরি করা যায়।
তিনি আরও বলেন, ভালো মানের তুলা ২৫০ টাকা প্রতি কেজি। আর গার্মেন্টেস এর বিভিন্ন রকমের তুলা ৫০-১০০ টাকা প্রতি কেজি। একটি বড় লেপ তৈরি করতে ৪ কেজি তুলার প্রয়োজন হয়। আর মাঝারী আকারের লেপে আড়াই কেজি তুলা লাগে। বড় আকারের লেপে ১০ গজ লাল কাপড়ের প্রয়োজন হয়। আর বেশিরভাগ লেপ লাল কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়ন থেকে লেপ তৈরি করতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুম চলে আসছে। এখন আর পাতলা কাঁথায় শীত মানছেনা। তাই পুরোনো লেপ নতুন করে তৈরি করতে এসেছি। কাপড় ও তুলার দাম বাড়ার কারণে খরচ বেশি লাগছে।
লেপ তৈরি করতে আসা শহরের কালিতলা এলাকার রাজিয়া সুলতানা বলেন, বাড়িতে যে লেপ আছে তা দিয়ে আগের লোকসংখ্যার চাহিদা পূরণ হয়েছে। তবে কিছু দিন আগে আমার মেয়েকে বিবাহ দিয়েছি। জামাই বাড়িতে নতুন লেপ দিতে হবে তাই শীত শুরুর আগে-ভাগেই পছন্দমত লেপ তৈরি করে নিচ্ছি। তুলা ব্যবসায়ী ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, এখন শীতের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। শীতের প্রভাব এখনো তেমন পড়েনি।
তবে শীতের পূর্ব প্রস্তুতির জন্য লোকজন আগাম লেপ তৈরি করছেন। আরো কয়েকদিন পর কাজ-কাম বেশি হবে। আমার দোকানে কারপাল, উল, কাপাস, শিমুল ও গার্মেন্টেস এর কালার জাতের তুলা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান শীতের শুরু থেকে অন্তত ৪টি মাস লেপ-তোশক বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এ সময় সবচেয়ে বেশি লেপ বিক্রি হয়ে থাকে। যে কারণে চাহিদার কথা মাথায় রেখে লেপ সেলাই কর্মীদের সংখ্যাও বাড়াতে হয়।