শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
23 Dec 2024 05:19 am
নাজমুল হক নাহিদ,আত্রাই (নওগাঁ)প্রতিনিধি:- উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা ছড়িয়েছে।বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।কনকনে শীত,ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের সঙ্গে দেখা দিয়েছে ঝিরিঝিরি তুষারপাত। অনেক সময় দেখা মিলছে না কোন রোদ্দুর।এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠার পাশাপাশি কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।
শীতকালীন বিভিন্ন সবজি আলু, পেঁয়াজ, টমেটো ক্ষেত নিয়ে কৃষকদের চিন্তা-উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।
এদিকে তীব্র শীতে জবুথবু প্রাণ-প্রকৃতি।শিশু ও বৃদ্ধদের পাশপাশি গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত নানা রোগে।ভোগান্তিতে পড়েছেন খামারিসহ প্রান্তিক কৃষক।কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার দাবি কৃষকদের।এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে রবিশস্য ও বোরোর আবাদে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে চাষিদের আশঙ্কা।
জানা গেছে, কয়েক দিনের তীব্র শীতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আলু, সরিষাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কৃষক ও কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন আলুর গাছগুলো সবুজ রং ধারণ করে সজীব হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশা ও কনকনে তীব্র শীতের সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় আলু ক্ষেতে লেটবøাইট বা পাতার মড়ক রোগ দেখা দিতে পারে বলেও ধারণা করছে তারা।
ফলে অধিকাংশ কৃষক আলু ক্ষেত রক্ষায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। টানা শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশার প্রভাবে অধিকাংশ আলু ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পরবে বলে কৃষকেরা ধারণা করছে।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মো. আজাদ সরদার জানান, প্রচÐ ঠান্ডায় আলুর পরিচর্যা করতে কষ্ট হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে শীতের যে তীব্রতা, তাতে আলুর ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তিনি জানান, সার, বীজ, সেচ ও শ্রমিকের দাম বাড়ছে। কখনো কামলাও পাওয়া যায় না। এবার কয়েক বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছি। কিন্তু শীতের তীব্রতায় আলুর পচন রোগ হলে সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে।
উপজেলার গন্ডগোহালী গ্রামের কৃষক ফরিদ জানান,আমি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। হিমাগারে কিছু বীজ রেখেছিলাম আর বাকিটা কিনে জমিতে বপণ করেছি। আবহাওয়া নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আয়েন উদ্দিন জানান, আমি চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে লালপাকরী জাতের আলুর আবাদ করেছি।কোনো ধরনের দুর্যোগ ও রোগবালাই না হলে এ বছর আলুর বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।
উপজেলার ভবানীপুর বøকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মার্জিয়া পারভিন বলেন, আলুসহ শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কৃষকরা যেন সবজি চাষে কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্যা সেখানেই আমাদের উপস্থিতি এবং সমস্যা সমাধানে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।তিনি আরো বলেন, সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই।সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো বীজতলাগুলো ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।বীজতলা এবং আলুর জমিতে কৃষককে আগাম সতর্কীকরণ হিসেবে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক এবং বোরো বীজতলায় বিকেল বেলা পানি দিয়ে সকাল বেলা পনি বের করে দেওয়া অথবা পলিথিন পেপার দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়ার জন্য নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।কৃষকরা এই পরামর্শগুলো গ্রহণ করলে আশা করি আলু এবং বোরো বীজতলা ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।এই লক্ষ্যে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
নাজমুল হক নাহিদ
আত্রাাই, নওগাঁ