শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
14 Dec 2024 05:04 am
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ-গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা চলছে।কোথাও পাওয়া যাচ্ছে, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও দোকানি বলে দিচ্ছেন— তেল নেই।আবার কোথাও তেল পেতে গেলে সঙ্গে কিনতে হচ্ছে অন্য কোনও পণ্য।আবার কোথাও কোথাও অতিরিক্ত দামেও এই ভোজ্যতেল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।সয়াবিন তেল না পেয়ে অনেক গ্রাহক কিনে নিচ্ছেন রাইস ব্র্যান তেল (চালের কুড়ার তেল) কিংবা সরিষার তেল।সয়াবিনের এই ‘পাওয়া-না পাওয়া’ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষই।
গত ৯ ডিসেম্বর বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে সৃষ্ট নৈরাজ্য নিরসনে সরকার আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় ৮ টাকা করে। পাশাপাশি সয়াবিন তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবায়নে তিনটি সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।তবে সরকারের এই দাম বাড়ানোর পরও বাজারে রয়েছে তেলের সংকট। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে তো কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।আবার পুরোনো মূল্যের তেলও এখন বেশ কয়েকটি দোকানে দেখা যাচ্ছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) পলাশবাড়ী কালিবাড়ি কাঁচাবাজার ও মহল্লার মুদি দোকান মাঠের বাজার,কিশোরগাড়ী এলাকার কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
মৌলা স্টোরের বিক্রেতা শরিফুল বলেন,‘আজ পর্যন্ত আমরা সয়াবিন তেল পাইনি।আরও ১০-১৫ দিন আগে অর্ডার দিয়েছি। কোম্পানির লোক বলে আজ আসবে, কাল আসবে,কিন্তু তেল আর আসে না।’
পাশ্বের বিক্রেতা শরিফ বলেন,‘আমাদের এলাকার কোনও দোকানেই সয়াবিন তেল নেই।আমার দোকানে তো কোনও কোম্পানির লোকই আসেনি।’
কাঁচাবাজারের বিক্রীতা সাইফুল বলেন,‘আমরা তো তেল পাচ্ছি না। কোম্পানির কাছ থেকে তেল নিতে গেলে তাদের অন্য প্রোডাক্ট নিতেই হয়। গতকালও আমাকে এভাবে নিতে হয়েছে।আমাকে পোলাওয়ের চাল (আতপ) নিতে বলেছে।অথচ তাদের দেওয়া আগের চালই আমি এখনও বিক্রি করতে পারিনি।কিন্তু কিছু না নিলে তারা তেল দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে সরিষার তেল নিয়েছি। আমাকে দুই কার্টন সয়াবিন তেলের সঙ্গে এক কার্টন সরিষার তেল কিনতে হয়েছে।’
খুচরা বিক্রেতা আসাদ বলেন, আমরা নতুন পুরান কোনও দামেরই তেল পাচ্ছি না। কোম্পানি তো আসছেই না।এক লিটারের তেলের বোতল ছিল কয়েকটা, বিক্রি করে দিয়েছি। এখন কেউ এলে সরাসরি মানা করে দেই। মনে হয়, আগামী শনি-রবিবারের মধ্যে নতুন রেটের তেল আমাদের কাছে আসবে।’
নির্ধারিত মূল্যে (বোতলে উল্লেখিত মূল্য) বিক্রি করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার দোকান থেকে অন্য কিছু কিনলে আমি বোতলের গায়ের রেটেই বিক্রি করি। কিন্তু শুধু তেল কিনতে এলে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করি। কারণ আমার অন্য যে প্রোডাক্ট নিতে হয়েছে সেটার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য।’
বাজারটির আরও কয়েকটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়,তাদের দোকানে সয়াবিন তেল আছে।যা দুই দিন আগে ছিল না।এরকম একটি দোকান জুনাইয়েদ স্টোর।এই দোকানের বিক্রেতা বলেন,এই কয়দিন আমার দোকানে তেল ছিল না।আমি বিক্রি করতে পারিনি। গতকাল রাতে আমাকে কোম্পানি এক লিটারের তেল দিয়ে গেছে।’
এগুলো নতুন দামের তেল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এগুলো আগের দামের তেলই দিয়ে গেছে। এতদিন কেন এই তেল আসেনি জানতে চাইলে বলেন,‘এটা তো আমার জানার কথা নয়।’
এদিকে মাঠের বাজারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। এতদিন তেল নেই বলা হলেও এখন সেখানে পুরোনো মূল্য বসানো তেলই বিক্রি হচ্ছে।এই বাজারগুলোর মুদি দোকানের বিক্রেতারা বলছেন,‘কোম্পানি থেকে আমাদের আগের দামের তেলগুলো এখন দিচ্ছে বলে বিক্রি করতে পারছি।’ তারা এও বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ুক বা কমুক সেটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ এখন মানুষ বেশি দামে খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।এখন দরকার প্রোডাক্ট। প্রোডাক্ট থাকলে আমরাও ব্যবসা করতে পারবো; সেটা বেশি দাম হোক বা কম দাম হোক।’
বেসরকারি চাকরিজীবী আজাদুল আকন্দ এসেছিলেন বাজার করতে।এ সময় তিনি বলেন, ‘কয়দিন পরপরই আমাদের বাজারে কোনও না কোনও সমস্যা লেগেই থাকে। এখন যেমন তেলের সমস্যা চলছে, তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আমি শিওর যে তেল আছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা দিচ্ছে না। একই জিনিস নতুন লেবেল লাগিয়ে বেশি দামে বিক্রি করবে।’
মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘দোকান থেকে অন্য কিছু না কিনলে তেল বিক্রি করে না দোকানদাররা। এটা কেমন কথা? অন্য কিছু আমার না লাগলেও কী নিতে হবে?’
বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক নুরনব্বী বলেন, ‘সয়াবিন তেল না থাকাতে কয়েকদিন সরিষার তেল কিনেছি।কিন্তু এটা দিয়ে চালানো সম্ভব না।সরিষার তেলের দাম তো সয়াবিনের থেকে বেশি।বাধ্য হয়েই ওটা কিনতে হয়েছে।’
বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘সয়াবিন তেল কিনতে হলে অন্য কিছু কিনতে হবে, তাই কিনিনি। রাইস ব্র্যান কিনেছি।’
চলতি বছরের অক্টোবর থেকে সরকার সয়াবিন তেল এবং পাম তেলের সরবরাহে কিছু কর সুবিধা পুনর্বিবেচনা করেছিল। পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেল সরবরাহের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত মূসক ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত ৫ শতাংশ মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া একই সময়ে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত পাম তেল এবং পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেলের আমদানিতে মূসক হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল। এই কর সুবিধাগুলো আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলেও জানানো হয়েছিল।