সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪
04 Dec 2024 02:33 pm
রাকিবুর রহমান রকিব,ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে;- ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা পথে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।এটি যে পরিকল্পিত কোনো হামলা নয় সেটি স্পষ্ট করেছেন বাসের চালক মো. আসাদুল হক।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। ঘটনার সময় যাত্রীদের সঙ্গে কারো কোনো ধরনের বিবাদ তো দূরে কথাও হয়নি বলে তিনি জানান।তবে ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন ত্রিপুরার পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। একইসঙ্গে ভারতীয় একাধিক পত্রিকায় এ নিয়ে প্রকাশিত খবরে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণেদিত বলে উল্লেখ করা হয়।
একাধিক সূত্র জানায়, বাসটি শনিবার সকাল ১১টার দিকে আগরতলা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দুপুর ১২টার দিকে বাসটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর এলাকায় আসার পর একটি ট্রাক উল্টোদিক থেকে অতিক্রম করতে গেলে বাসটি ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে থামানোর চেষ্টা করে ও সড়কের একপাশে সরে পড়ে।
এ সময় পেছনে থাকা পণ্যবাহী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বাসে ধাক্কা দেয়। এতেটোরিকশাটি বাসে আটকে যায়। সামান্য ব্যথা পান অটোরিকশার চালক। পরে একটি রেকার এসে বাস থেকে অটোরিকশাটিকে সরিয়ে দেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বাসটিতে ভারতীয়সহ ২৬ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১৬ জন ভারতীয় নাগরিক।
শ্যামলী পরিবহনের ওই বাসের চালক মো. আসাদুল হক তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, ‘একটি ট্রাক উল্টা দিক থেকে অতিক্রম করতে গেলে আমি ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যাই। এ সময় পেছনে থাকা একটি অটোরিকশা বাসটিতে ধাক্কা খায়। এতে অটোরিকশাটি বাসের পেছনে আটকে যায়।'
তিনি আরো জানান, তাৎক্ষণিকভাবে নেমে একটি রেকার আনার ব্যবস্থা করে অটোরিকশাটি সরিয়ে নিই। বিষয়টি হাইওয়ে থানা পুলিশকেও অবহিত করা হয়।পুলিশ আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র দেখে চলে যেতে বলে। দুর্ঘটনায় বাসের কোনো ক্ষতি হয়নি কিংবা যাত্রীরা আঘাতপ্রাপ্ত হননি।
সংবাদ সম্মেলনে চালক বলেন, 'চলার পথে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এমনই একটি দুর্ঘটনা এটি। দুর্ঘটনাও একেবারে সাধারন। এটি মোটেও পরিকল্পিত নয়। পরিকল্পিত হামলার কথা শুনে রীতিমতো হাসি পায়।'
সংবাদ সম্মেলনে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট বায়জিদ মাহমুদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তারা ছুটে যান। দুর্ঘটনায় অটোরিকশাচালক মো. ইব্রাহিম সামান্য আহত হন। বাসের চালক ও অটোরিকশাচালকের মধ্যে সমঝোতা করে যে যার মতো চলে গেছেন।
এদিকে রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন জানান, ত্রিপুরা রাজধানী আগরতলা থেকে আন্তঃদেশীর শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস চলাচল করে। দুপুরে সদর উপজেলার চান্দিয়ারা এলাকায় এই বাসটি দুর্ঘটনার কাবলে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রং দেওয়া হচ্ছে, যা আজও সত্য নয়। এটা নিচক একটা নরমাল দুর্ঘটনা। এখানে সাম্প্রদায়িক গন্ধ খোঁজার কোন সুযোগ নেই।
তিনি আরো জানান, এই সড়কটি ভারতীয় একটি কোম্পানি নির্মাণ কাজ করছে। এই সড়কের এক লেনে যান চলাচল করে। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায় সময় ঘটে থাকে। দুর্ঘটনার পর তৎক্ষণাৎ শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ও ডেলিভারি ম্যান কর্তৃপক্ষের লোকজন কথা বলে নিষ্পত্তি করেন। বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়া এ দুর্ঘটনা নিয়ে রং ছড়াচ্ছেন। এটা স্রেফ দুর্ঘটনা, কোন হামলা নয়।
এদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খাদ্য, নাগরিক সরবরাহ, ভোক্তাবিষয়ক, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেন।শনিবার বিকেলে তার ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। তবে বাসটি যে বাংলাদেশের বিআরটিসি পরিবহনের, সেটি তিনি লেখায় উল্লেখ করেননি।
রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, 'একটি সাধারন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতেই চালকসহ সংশ্লিষ্টদেরকে এখানে আনা হয়েছে সত্যটা জানার জন্য।