সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪
25 Nov 2024 03:07 am
পীরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধিঃ- রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু লুটের মহোৎসব শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছেন। বালু লুটের এই কাজে সামনের সারিতে রয়েছেন কতিপয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এর আগে মামলা মেশিন জব্দ এবং বালু বোঝাই গাড়ি আটক করার পর কয়েক সপ্তাহ বন্ধ ছিল। এর পর আবারও বালু খেকোদের সংঘবদ্ধ কাজ শুরু হয়েছে।
রোববার এবং সোমবার উপজেলার করতোয়া নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।উল্লেখ্য,নদীর পাড় ঘেষে পৃথক ১৩ টি স্থানে ড্রেজার ও স্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপ দিয়ে টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে বালু। ইটের গাথুনির কাজে মোটা বালু এবং মাটি যুক্ত বা (ভিট) বালু ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে গ্রামীণ জনপদের খানাখন্দের সৃষ্টিসহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ পাকা সড়কগুলো। উপজেলার ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া সেতু উত্তর পাশে সাজেদুল ইসলাম তার পাশেই কাচদহ্ ঘাটে মুক্তার মিয়া মেশিন দিয়ে বালু টানছেন। মাহিন্দ্র যোগে দিনরাত রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসনের চাপ রয়েছে বালুর পয়েন্টর উপর, তার পরেও এই ব্যবসা চালিয়ে নিতে হবে।
সেতুর দক্ষিণ পাশে বোয়ালমারী গ্রামে করতোয়া নদীতে আনোয়ার মিয়া,আমিনুল ইসলাম, কিনা মিয়াসহ ৩ টি স্যালো মেশিন বসিয়ে বালুর ব্যবসা করে আসছেন টানা কয়েক বছর ধরে। তাদের সাথে বলে জানা যায়, মাঝে মধ্যে প্রশাসন এসব বালু পয়েন্টে গিয়ে পাইপ কেটে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এতে তাদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে দাবি করেন। এখানে মোটা বালু নেই। তাদের ৩ টি পয়েন্টেই মাটি যুক্ত বা (ভিট) বালু উত্তোলন করা হয়। মোটা বালু তাদের এলাকায় নেই। যে কারনে তারা এই ব্যবসায় পুষিয়ে উঠতে পারছে না।
খালাশপীর বাজার থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে বাঁশপুকুরিয়া বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন গ্রামের লোকজন এবং তাদের পার্টনার রয়েছে প্রায় ৫০ জন। পয়েন্টের লোকজন বলছেন, এখান থেকে দিনাজপুর এলাকার ২ কিলোমিটার দূরে পাইপ দিয়ে বালু টানা হচ্ছে। তাদের পয়েন্টে মোটা বালুর চাহিদা প্রচুর সেই কারনে একটি ভেকু দিনরাত গাড়ি ভর্তি করার কাজে ব্যস্ত থাকে। এখানে থেকে প্রতিদিন শতাধিক গাড়ি বালু উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এটি এই এলাকার সবচাইতে বালুর বড় পয়েন্ট। পতœীচড়া বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে রামনাথপুর করতোয়া নদীর বানুর ঘাট নামক স্থানেও স্যালো মেশিন দিয়ে বিপ্লবসহ গ্রামের অর্ধ-শতাধিক যুবক এ ব্যবসার সাথে জড়িত।
গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রামের রাস্তা অচল করে বালুর ব্যবসা করা হয় সেই কারনে পয়েন্ট বন্ধের জন্য এলাকার সাধারন মানুষ নানাভাবে চাপ দেয়। যে কারনে গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি কে নিয়ে চালানো হচ্ছে বালুর ব্যবসা। পয়েন্টে কখনো প্রশাসনের লোকজন বা সাংবাদিক ঢুকলে মেশিন চালককে বা শ্রমিককে গ্রামের লোকজন আগে থেকেই সংকেত দেয়। সংকেত পাবার পর পরই তারা মেশিন বন্ধ করে সটকে পড়ে।
কাঞ্চন বাজার (গড়ের) বাজার থেকে পশ্চিমে হোসেনপুর এর পাশের্^ করতোয়া নদীর কুলানন্দপুর ঘাট। সেখানে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার কুলানন্দপুর গ্রামের শামীমসহ পীরগঞ্জের হোসেনপুর গ্রামের প্রায় ১৪/১৫ জন যুবক সংঘবদ্ধভাবে বালু তুলছে। তাদের লোকজন জানান, প্রতিগাড়ী বালু ৭’শ টাকায় বিক্রি হয়।
চতরা ইউনিয়ন পরিষদ হইতে পশ্চিমে ৫ কিলোমিটার দূরে কুয়াতপুর হামিদপুর বিহারি পাড়া। বর্তমান ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ গোল্লাসহ কমপক্ষে ১৫ জন সদস্য জড়িত বিহারি পাড়া বালুর পয়েন্টে। করতোয়া নদী শাসন ব্যবস্থা জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বøকের কাজ করেছেন অথচ বøকের পাশে থেকে দেদারছে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, বিহারি পাড়া পীরগঞ্জ থানা এলাকা হলেও নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রশাসনের লোকজন কম আসে। কারন ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে এখানে আসতে হয়।
অবশ্য চতরা ইউপি সদস্য নূর মোহাম্মদ গোল্লা মিয়ার এই পয়েন্টে রমরমা ব্যবসা চলে সারা বছর।তিনি এই পয়েন্টের বালু দিনাজপুর এলাকায় বিক্রি করে থাকেন।অপরদিকে চতরা ইউনিয়নের সোনাভরি বিলের পাশে আশ্রয়ণ কেন্দ্র ঘেঁষে মালিকানা জমি থেকে বালু উত্তোলন করছে বকুল নামে এক ব্যক্তি তার বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এবং সরকারি বিলের পাড়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ বালুর গাড়ি এলাকার কাঁচাপাকা রাস্তাঘাট নষ্ট করে দাপটের সাথে যাতায়াত করে। এইসব গাড়ির দাপটে গ্রামের পুরুষ-মহিলা এবং স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে সবসময় আতংকের মধ্যে থাকে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মোঃ আকতারুজ্জামান রানা,পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি