সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
24 Nov 2024 09:43 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- চালের বাজারে উত্তাপ কমছেই না। এখনো দফায় দফায় বাড়ছে দাম। এক মাস আগেও রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা জাতের চাল ব্রি ও পাইজাম প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এখন তা কিনতে হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকায়।
শুধু মোটা চাল নয়, গত এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চাল কয়েক দফা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। চালের বাজারের এই টালমাটাল অবস্থা দেখে হতবাক খোদ ব্যবসায়ীরাও।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চালের বাজারে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে, যার কারণে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও অস্থির চালের বাজার।
ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙা না গেলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে না।
গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজার রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার প্রভাবে সরবরাহ সংকটসহ নানা অজুহাত দিয়ে মিলাররা চালের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছেন। এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি।
মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম কেজি ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় খুচরায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, চালের বাজারে এখনো সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেট না থাকলে চালের দাম কমার কথা ছিল। কারণ এ বছর প্রচুর পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। তাই মিল পর্যায়ে জোরালো তদারকি বাড়ানো গেলে চালের বাজারের অস্থিরতা কমে আসবে বলেও তাঁরা জানান।
জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মেসার্স ঢাকা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা সায়েম হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে চালের কোনো সংকট নেই, এখনো পর্যাপ্ত ধান ও চাল মজুদ রয়েছে।
তার পরও নানা অজুহাত দিয়ে মিলাররা দাম বাড়াচ্ছেন। মিল পর্যায়ে অভিযান চালালেই তাঁদের ধান ও চালের মজুদের চিত্র উঠে আসবে। তখন দেশের বাজারে চালের দামও কমে আসবে।’
রাজধানীর দক্ষিণ কুড়িলের মুদি দোকানদার মো. হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন প্রতি সপ্তাহেই পাইকারিতে বস্তাপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বাড়ছে। এক মাস আগে পাইজাম চাল বিক্রি করেছি ৫৮ টাকা কেজি, সেটি এখন ৬৪ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এ নিয়ে পরিচিত কাস্টমারদের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়তই কথা-কাটাকাটি হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘দেশে চালের দাম কয়েকজন লোক নির্ধারণ করে বিধায় দাম কমছে না। তাদের হাতে মানুষজন জিম্মি। এদের আইনের আওতায় এনে ফৌজদারি মামলা করা উচিত। একই সঙ্গে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে সরু চালের (মিনিকেট) দাম ৯.৯ শতাংশ বেড়েছে। মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজামের দাম ৯.৫২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাৎ এক বছরে চালের পেছনে ভোক্তার খরচ এই পরিমাণ বেড়েছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘বন্যার কারণে রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হওয়ায় চালের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। এটি দীর্ঘদিন চলবে এমন নয়। যদি আমনের ভালো উৎপাদন হয় এবং পরবর্তী বোরো মৌসুমেও ভালো উৎপাদন করা যায়, তাহলে একটি স্থিতিশীল মূল্য বাজারে বিরাজ করবে বলে আমি আশা করছি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বাজার সিন্ডিকেটের দোহাই দেওয়া হতো। ক্ষমতার পালাবদলের পর অনেক কিছু বদল হলেও বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাব এতটুকুও কমেনি। পরিবহনে চাঁদাবাজিও কমেনি, যদিও চাঁদাবাজদের চেহারা বদল হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনাও চলছে আগের মতোই। এ অবস্থায় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা প্রায় অসম্ভব। তাই বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে খোলাবাজারে বিক্রি বাড়াতে হবে। কারণ এবার সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বাজারে নজরদারি জোরদারের পরামর্শও দিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সিন্ডিকেটের কবজায় মোটা চালের বাজার
উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহের চালের বাজার। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত। তবে সরু চালের দাম বেড়েছে তুলনামূলক কম। হঠাৎ করেই মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
চালকল মালিকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ধানের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে ধানের সংকট। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করে মোটা চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে চালকল মালিক ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন।
জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে ঝিনাইদহের বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায়। কাজল লতা ৫৬-৫৮ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ টাকায়। আর সরু চাল মিনিকেট ৬৫ থেকে এখন ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাসমতী চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি, যা আগে বিক্রি হয়েছিল ৮২ থেকে ৮৪ টাকায়।
গত শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা, হামদহ ও ওয়াপদা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। এ ছাড়া কাজল লতা ৬৫, আঠাশ ৬২, মিনিকেট ৭০ ও বাসমতী চাল আকারভেদে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বাজারে আগের মতো ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মোটা চাল ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা উৎপাদন করতে পাচ্ছি না। এ জন্য মোটা চালের দাম অল্প কিছু বেড়েছে। আমাদের এখানে অবৈধ মজুদদার ও সিন্ডিকেট নেই।’
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুদদারদের সন্ধান পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কালের কণ্ঠের