শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
03 Dec 2024 11:17 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শুক্রবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ইব্রাহিম আকিল নামে হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কমান্ডারও রয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির খবরে বলা হয়েছে। বৈরুতের দক্ষিণাংশে হেজবুল্লাহর ‘এলিট ইউনিট’ রাদওয়ানের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তিনি।
হামলায় ইউনিটটির সদস্যরাও মারা গেছেন।
ইসরায়েল বলছে, তারা লেবাননে ‘টার্গেটেড স্ট্রাইক’ চালাচ্ছে। দক্ষিণ বৈরুতের দানিয়েহ এলাকাটিতে হিজবুল্লাহর শক্ত অবস্থান রয়েছে। হামলার পরপর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার আকাশে।
বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
দানিয়েহ থেকে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো বাচেগা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই খুবই উদ্বেগের। হামলার স্থানটি জনবহুল এলাকায় অবস্থিত। সেখানে হেজবুল্লার সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন তারা। ঘটনাস্থলে কোনো সাংবাদিককে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে নিকট অতীতে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল এমন পূর্ণ যুদ্ধের কাছাকাছি আর যায়নি বলে মনে করেন বিবিসি পার্সিয়ানের মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা নাফিসেহ কোনাভার্দ। একই সময়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলেও কিছু পাল্টা রকেট হামলা প্রতিহত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতা পল অ্যাডামস। হিজবুল্লাহ সারা দিনে ইসরায়েল অভিমুখে শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে।
রকেট হামলায় ইসরায়েল অধিকৃত গোলান উপত্যকায় অগ্নিকাণ্ড হয়।
গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে লেবানন। যার মধ্যে পেজার (বার্তা পাঠানোর যন্ত্র), ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের মতো অভিনব ঘটনাও দেখা গেছে। এসব বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এই দুই সিরিজ হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘ইসরায়েল যুদ্ধের একটি নতুন পর্ব সূচনা করছে।’
সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কেনা পাঁচ হাজার পেজারের ভেতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র ও অন্য একটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর প্রকাশ করে। তবে ইসরায়েলি ও মার্কিন সূত্র সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিয়স ও আল-মনিটরকে বলেছে, হিজবুল্লায় এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনে গেছে, এমন আশঙ্কার পরপরই বিস্ফোরকগুলো বিস্ফোরিত হয়।
কোন দিকে যেতে পারে পরিস্থিতি?
এমন পরিস্থিতির পর সামনে লেবাননে কী হতে পারে তার সম্ভাব্য কয়েকটি গতিপথ তুলে ধরেছেন বিবিসির সামরিক বিষয়ক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস।
প্রথমটি হলো, হিজবুল্লাহ দুর্বল হওয়ার চিন্তা থেকে নিশ্চিত জয়ের উদ্দেশ্যে আরো হামলা।
হিজবুল্লাহর যোগাযোগব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অনেক সেনাই আহত অবস্থায় রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক এহুদ ইয়ারির মতে, হিজবুল্লাহ বর্তমানে ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধের পর সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে, যা ইসরায়েলের জন্য বড় সুযোগ। এটি কাজে লাগাতে পারে ইসরায়েল।
দ্বিতীয় চিত্রটি হলো, হিজবুল্লাহর ইসরায়েলে হামলা।
আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক চাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অ্যাসোসিয়েট ফেলো আমজাদ ইরাকির মতে, এই হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলকে উসকানি দেওয়া হয়েছে, যেটা মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি আরো খারাপ করতে পারে। তার মতে হিজবুল্লাহ চাপে পড়লে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে এবং তা হলে ইসরায়েলও লেবাননে স্থল অভিযান চালাতে পারে। যেহেতু ইসরায়েল গাজায় মূল উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম হয়নি, ফলে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলে প্রতিরোধ গড়তে চাইবে।
তৃতীয়ত, সংঘাত এড়ানোও সম্ভব হতে পারে, তবে শক্তি ফুরায়নি হেজবুল্লাহর।
পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লার তীব্র আঘাত হানার হুঁশিয়ারি দেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, হিজবুল্লাহ কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে। বৈরুতে বিবিসি সংবাদদাতা নাফিসেহ কোহনাভার্দ জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ আহত অভিজাত তরুণ দলের অংশ, যারা উচ্চ প্রশিক্ষিত যোদ্ধা। সংঘাত চললেও আরো তীব্র হামলার সক্ষমতায় কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। হিজবুল্লাহ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে সংঘাত এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
তবে এখন কিছুটা দুর্বল পরিস্থিতিতে পড়লেও তাদের শক্তি ফুরিয়ে যায়নি। সেটা হামলা অব্যাহত থাকা থেকে বুঝা যাচ্ছে। তবে তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা রয়েছে। যেমন ইরান, ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া বা ইয়েমেনের হুতিরা। তাদের অনেকের লেবাননে যাতায়াতও রয়েছে। তারা একে অপরের জন্য যুদ্ধ করে অভ্যস্ত। ফলে লেবাননে হামলা কার্যকরী হলেও তাদের একটা গভীর আঞ্চলিক সমর্থন থাকবে।
সবশেষ, পেজার বিস্ফোরণ হয়তো বড় কৌশলের অংশ ছিল না।
অনেকে ধারণা করছেন, হিজবুল্লাহর ভেতরে পেজারে কারসাজি হয়ে থাকতে পারে, এ নিয়ে এক রকম সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। ফলে মোসাদ বেশ দ্রুতই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেছে। নয়তো সে পরিকল্পনা কাজে নাও আসতে পারতো।
চ্যাথাম হাউজের ইরাকির মতে এই পরিকল্পনা কমপক্ষে কয়েক মাসের ছিল। এখন এটা কেন ঘটলো তা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক ধরণের জল্পনা কল্পনা রয়েছে। গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনে যেমন হিজবুল্লাহর পেজারে সন্দেহের কথা বলা হয়েছে, পাশাপাশি অনেক জায়গায় এটাও ধারণা করা হচ্ছে, এটা ইসরায়েলের গাজা অভিযান থেকে কিছুটা পেছনে সরে এসে লেবাননের দিকে নজর দেওয়ার একটা চেষ্টা হতে পারে।