রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
23 Nov 2024 02:03 pm
তিন জোটের আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
তখন ইত্তেফাক পত্রিকায় চিঠিপত্র বিভাগে জনৈক পাঠক একটি গল্প লেখেন এভাবে- আসাদ নামে একজন বাস ড্রাইভার বাসে প্যাসেঞ্জার ভর্তি করে ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়েছেন।ড্রাইভার দক্ষ হাতে গাড়ি চালালেও তার বৈধ লাইসেন্স ছিল না।প্যাসেঞ্জারের মধ্যে খালেদ ও হাসান নামে দুই ব্যক্তি চেচামেচি শুরু করে দেয়। তারা যাত্রীদের বুঝাতে থাকে ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই ।লাইসেন্স ওয়ালা ড্রাইভার চাই।কেউ কেউ মৃদু সমালোচনা করে বলেন- ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকলেও গাড়িতো ঠিক মতো চালাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ প্যাসেঞ্জার খালেদ ও হাসানের পক্ষ নেয়।শেষে আসাদকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে খালেদকে ড্রাইভারের আসনে বসিয়ে দেয়া হয়। এরপর খালেদ দ্রুত গতিতে বাস চালাতে থাকে। খানা-খন্দ কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না। বাসের ধাক্কায় একটি রিকশা ছিটকে গিয়ে খাদে পড়ে। প্যাসেঞ্জাররা হৈচৈ শুরু করে দেয়। মহিলারা কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন খালেদ ড্রাইভার হুঙ্কার দিয়ে বলতে থাকে- চুপ করে বসে থাকো। আমার বৈধ লাইসেন্স আছে।
" এখন অনেকে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন স্বাধীনতার পর বৈধ লাইসেন্সধারী শাসকরা আমাদের কী উপহার দিলেন?
এরশাদ সরকারের (১৯৮২-৯০) শাসনামলে ১৯৬ জন,
বিএনপির (১৯৯১-৯৬) শাসনামলে ১৭৪ জন,
আ.লীগ( ১৯৯৬-২০০০) শাসনামলে ৭৬৭ জন,
বিএনপি(২০০১-২০০৭) শাসনামলে ৮৮৬ জন,
তত্ত্বাবধায়ক সরকার( ২০০৭-২০০৮) শাসনামলে ১১জন,
আ.লীগ ( ২০০৯-২০১৩) শাসনামলে ৫৬৪ জন,
আ. লীগ ( ২০১৪-২০১৮) শাসনামলে ৯৯৬ জন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আ.লীগের( ২০১৮ -২৪) শাসনামলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় দুই হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। এই দুই হাজার মানুষের মধ্যে রয়েছে জুলাই মাসের শেষ ১৪ দিন প্রায় ৮৭৫ জন এবং ৫ আগস্টের আগে ও পরে আরও নয় শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে (সুত্র: বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা)। আহত হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ।
(এখানে একটি কথা উল্লেখ্য, শাসকের হাতে যেরকম অস্ত্র থাকবে নৃশংসতাও সেরকম হবে)।
৭৩ সালে সংবিধান রচিত হয়। বহু বিশেষজ্ঞের মুখে শোনা যেতো- এটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান। সমন্বয়করা প্রথম থেকেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে আসছেন। তাঁরা আরও বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বীজ লুকায়িত রয়েছে। সারজিস আলম এক বক্তৃতায় বলেছেন- এই সংবিধান বজায় রেখে তাকেও যদি প্রধানমন্ত্রী বানানো যায়, তাহলে তিনিও ফ্যাসীবাদী হতে বাধ্য। বর্তমান অন্তরবর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৬ কমিশন গঠন করেছেন। তাঁরা তিন মাসের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব পেশ করবেন।
আমরা প্রায় ১২ বছর যাবৎ একাধিক সরকার ব্যবস্থা, স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও প্রধানমন্ত্রী- প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলে আসছি। একই কথা বার বার লেখাতে কোনো কোনো পত্রিকা বিরক্তি প্রকাশও করেছে। আমরা শুধু পত্রিকায় লিখেই ক্ষান্ত হয়নি। সংস্কারের ডিজাইনটি শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া সহ বহু রাজনীতিকের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে পৌঁছে দিয়েছি( তাদের মধ্যে বর্তমান কয়েকজন উপদেষ্টাও রয়েছেন)।
এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিন জোটের রূপরেখা গৃহীত হয়। সেটা বিএনপি ও আওয়ালীগ কোনো সরকারই বাস্তবায়ন করেনি।
গত বিএনপি ও আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কারোর মুখে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কথা শোনা যায়নি। বরং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সকল এমপি ও আমলারা সচেষ্ট থেকেছেন।
সেক্ষেত্রে এরশাদকে কী করে স্বৈরাচারী বলা যায় ! তিনি তো আন্দোলন ছাড়াই মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করেন, উপজেলা ব্যবস্থা চালু করেন, ৬ টি হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করেন।তাছাড়া গুচ্ছগ্রাম, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ঢাকার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন(কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়) সহ প্রায় ১০০ টি ব্যতিক্রমী কাজ শুরু করেন। তার কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেয়ায় আসম রবকে দালাল আখ্যা দেয়া হয়।
এখন প্রমাণীত হয়েছে তাঁর মতো আরও কয়েকজন দালাল পাওয়া গেলে তার কাছ থেকে প্রদেশ ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সহ বহু কিছু আদায় করা সম্ভব ছিল। অথচ তৎকালীন সময়ে প্রিয় রাজনীতিকদের অনুসরণ করে আমরা শ্লোগান দিতাম- এক দফা এক দাবি, এরশাদ তুই কবে যাবি।
" এ বিষয়ে চিত্রনায়ক সোহেল রানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- 'এরশাদকে নয় বছরের স্বৈরশাসক বলা হয়। আমি বলি, যদি উনাকে স্বৈরশাসক বলা হয়, তাহলে গত ১৬ বছরের ক্ষমতায় থাকা কথিত সরকারের স্কুলে এরশাদ সাহেবকে ভর্তি করতে হবে ; সেটাই শিখতে যে, স্বৈরতন্ত্র কী, স্বৈরশাসন কাকে বলে,সেটা কীভাবে করা উচিত এবং স্বৈরশাসনের অবস্থানটা কী!( ঢাকা পোস্ট, ১০ সেপ্টেম্বর'২৪)।
লেখক: মোশাররফ হোসেন মুসা,গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক ও সদস্য, সিডিএলজি।cell-01712638682