সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
25 Nov 2024 05:07 am
আমার মেজো কন্যা সুবর্ণ স্কলারশিপ (টিউশন ফ্রি ওয়েভার) নিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে (Uppsala) UPPSALA UNIVERSITY তে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন(Joint Nordic programme in environmental law) এর উপর এলএলএম করার জন্য সুইডেন গমন:
সে প্রথমে ঈশ্বরদী সবুজ কুঁড়ি কিন্ডার গার্টেন, পূর্ব টেংরী উচ্চ বিদ্যালয়, ঈশ্বরদী মহিলা কলেজে পড়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অনার্স করে। আমার তিন কন্যার মধ্যে এটি ছিল বেশি দুরন্ত।ওকে নিয়ে আমার দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ভালো নম্বর পায় কিন্তু দেশীয় সাধারণ জ্ঞানে কাঙ্খিত নম্বর না পাওয়ায় ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আজিমপুর গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে ভর্তি করে দেই।
একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক ছাত্র না কি তাকে উদ্দেশ্য করে বলে -গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের মেয়েরা পড়ে। এতে তার মনে জেদ চাপে। পরবর্তীতে রাতদিন পড়াশোনা করে দ্বিতীয়বার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তিন বিষয়ে( অর্থনীতি ও আইনে) ভর্তির সুযোগ পায়। আইনে অনার্স কমপ্লিট করে স্কলারশীপ(৮০%) পেয়ে সুইডেন যাত্রা করে ৷
আজ ৩০ আগস্ট ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমরা তাকে বিদায় দেই। সে সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড তিনদেশে এলএলএম কোর্স শেষ করবে। দেশের রাজনীতি ও পরিবেশের প্রতি চরম বিরক্ত( কারণ সে একবারও স্বাধীন মতো ভোট দিতে পারে নাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থ ছাত্র রাজনীতি ইত্যাদির প্রতি তার ক্ষোভের অন্ত নেই)। তার উচ্চাকাঙ্খা, সাহস ও ডেম কেয়ার ভাব দেখে অনেকে প্রশংসা করতো( কেউ কেউ নিন্দাও করতো)। তার হাত থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়ায় একজনের কলার চেপে ধরেছিল। সে সময় সে ' ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সরকার কী ম্যাসেজ দিল' শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিল। লেখাটি তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছেপেছিল( তার ফলাফল জাতি ৫ আগস্ট দেখলো)।
আরেকদিন এক রাজনৈতিক দলের কর্মী তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় ওই কর্মীকে মারধর করেছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকেল নিয়ে সারা চত্ত্বর ঘুরে বেড়াতো। এর পিছনে ছিল আমার উৎসাহ। পশ্চাৎপদ কিছু মানুষ আমাকে পরামর্শ দিতো, বেশি পড়িয়ে লাভ কি! বিয়ে দিয়ে দেন৷
আমার কন্যা নিন্দুকদের এসব কথা শুনে বিন্দুমাত্র দমে যায়নি। আমি মনে করি, আমার মেয়েকে দেখে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণা নিক এবং সাহসী হোক। তারপরেও সে দেশকে ভালবাসে। আশা করি, উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বিশ্ব পরিবেশ রক্ষার্থে সে আইনী লড়াইতে নিবিষ্ট থাকবে।
পরিশেষে তার পড়ালেখার বিষয়ে যেসকল শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও হিতাকাঙ্ক্ষীরা সাহস যুগিয়েছেন এবং আর্থিক সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট চলনবিলে এক নৌকাডুবিতে সে তার মাকে হারায়। এমন খুশীর দিনে তার কথা মনে পড়ছে।