রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪
23 Nov 2024 07:52 am
দেশে ব্যাপক সহিংসতার পর নতুন করে আরো ১৭৭ থানার কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ।শনিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে গতকাল ঢাকার ১০টি থানায় গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে এখনো রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ।পুরো থানা ঘিরে রয়েছে সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীরা।
আর থানার পুলিশ সদস্যরা সবাই সাদা পোশাক (সিভিল ড্রেস) পরা অবস্থায় ছিলেন।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখনো বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।বিশেষ করে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা নিয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন।পুলিশি সেবা নিতেও আসছে না সাধারণ মানুষ।
গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে মিরপুর মডেল থানা ঘুরে দেখা যায়, তিনতলা ভবন পুরোটাই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।পুরো থানা ঘিরে রয়েছে সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীরা।
আর থানার পুলিশ সদস্যরা সবাই সাদা পোশাক (সিভিল ড্রেস) পরা অবস্থায় ছিলেন। তবে থানার ওসি, এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল সবাই ফেরত এসেছেন।
মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সী সাব্বির আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের থানাটি পুরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেখতেই পারছেন কিচ্ছু নেই। আমাদের অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজে যোগদান করেছেন।
বাকি সদস্যরাও খুব দ্রুত যোগদান করবেন। এর মধ্যেই আজ সকাল থেকে আমরা ম্যানুয়ালি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি।পুরোদমে কাজ শুরু হতে কত দিন লাগবে তা বলা এখন সম্ভব নয়।’
মিরপুরের রূপনগর থানা ঘুরে দেখা যায়, পুরো ভবনটি অক্ষত। ওসি আব্দুল মজিদ জানান, থানার ৯টি কম্পিউটার, সব নথিপত্র ও অস্ত্র লুট করা হয়েছে। থানায় মোট ১২৩ জন সদস্যের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩১ জন যোগদান করেছেন। পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে সময় লাগবে।
পল্লবী থানার ছয়তলা ভবনের প্রতিটি তলায় ভাঙা কাচ আর আসবাবের ধ্বংসাবশেষ। এখানেও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। এখনো কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা পাওয়া গেলেও ওসি আসেননি।
গতকাল দুপুরে হাতিরঝিল থানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেটে সেনা সদস্যরা দাঁড়িয়ে। ডিউটি অফিসারের কক্ষে দায়িত্বরত পুলিশ কম্পিউটারে কাজ করছেন। পাশেই পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। বেশ কয়েকটি কক্ষে পুলিশের অবস্থান লক্ষ করা যায়। সেখানে দায়িত্বরত কয়েকজন জানান, এই থানায় হামলা বা লুটের ঘটনা ঘটেনি। তবে সরকার পতনের পরে গতকাল থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
পল্টন মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো থানা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ কারণে আপাতত থানার ভেতরে পুলিশের কার্যক্রম করা সম্ভব নয়। তবে অনেক পুলিশ সদস্য এসে হাজিরা খাতায় নাম লিখে তাঁরা আবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে চলে গেছেন।
তেজগাঁও থানায়ও সকালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ সদস্যরা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
বনানী থানায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কনস্টেবল ছাড়া তেমন পুলিশ সদস্য নেই। ওসি, ডিউটি অফিসার থেকে শুরু করে কোনো উপপরিদর্শকও ছিলেন না থানায়।একজন কনস্টেবল জানান, সকালে ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য থানায় এসেছিলেন। পরে চলে যান।
রমনা মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার সামনে ও ভেতরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা থানার নিরাপত্তায় পাহারা দিচ্ছেন। থানায় ডিউটি অফিসারকক্ষে উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামানসহ (এসআই) আরো কয়েক সদস্যকে সাধারণ পোশাকে দেখা যায়। এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এখনো আমরা আতঙ্কে রয়েছি। হামলার আশঙ্কায় পুলিশের পোশাক পরছি না।’
শাহবাগ থানায় গিয়ে দেখা যায়, ডিউটি অফিসারের রুমে দুজন উপপরিদর্শকসহ (এসআই) কয়েকজন পুলিশ সদস্য থানায় রয়েছেন। তবে তাঁরাও পুলিশের পোশাক পরেননি।
ছয় দিন পর এনায়েতপুর থানার কার্যক্রম শুরু
১৩ পুলিশ নিহত হওয়ার ছয় দিন পর চালু হয়েছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা পুলিশের আইনি কার্যক্রম। গতকাল শনিবার দুপুরে থানাটির কার্যক্রম চালু হয়। এর আগে শিক্ষার্থীরা বিধ্বস্ত থানা কম্পাউন্ড পরিষ্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে। এ ছাড়া এদিন চালু করা হয়েছে জেলার কাজিপুর ও সলঙ্গা থানার কর্মকাণ্ডও।
এর আগে চলতি মাসের ৪ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালে হামলায় নিহত হন এনায়েতপুর থানার ওসিসহ ১৩ জন পুলিশ সদস্য এবং তিন আন্দোলনকারী। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এনায়েতপুর থানার সব স্থাপনা ও যানবাহন।
কালের কণ্ঠ