মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪
22 Nov 2024 12:48 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- ইসরায়েল দাবি করেছিল যে তারা হিজবুল্লাহকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।কিন্তু হিজবুল্লাহ সম্প্রতি মাত্র কয়েক মিটারের ব্যবধানে দুটি সামরিক অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের কাছে প্রমাণ করেছে যে তাদের কর্মকর্তারা তাদেরকে মিথ্যা বলছে এবং হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি সৈন্যদের মাথার খুলির মাত্র কয়েক মিটারের মধ্যেই অবস্থান করছে।
বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন, লেবাননের সাথে সম্ভাব্য যুদ্ধের বিষয়টি নেতানিয়াহুর উপর নির্ভর করছে, তবে এ মুহূর্তে তিনি সংকটে রয়েছেন এবং একাধিক ফ্রন্টে অনেক চাপের মধ্যে আছেন। এরই মধ্যে ইয়েমেন তার হামলার চতুর্থ ধাপ শুরু করেছে এবং ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তারা মার্কিন এবং ব্রিটিশ সামরিক জাহাজ ধ্বংস করে চলেছে এবং নৌ জোট ইয়েমেনিদের থামাতে সক্ষম হয়নি।ইয়েমেনি ফ্রন্ট একের পর এক হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ইলাত বন্দর পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে এবং এখন ভূমধ্যসাগরকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
গাজা ফ্রন্টে ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতিও অনেক এবং আরো অনেক ইসরায়েলি সৈন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়েছে। অন্যদিকে লেবানন ফ্রন্টে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।এ অবস্থায় নেতানিয়াহু সরকারের পদত্যাগ এবং নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে এমন সম্ভাবনা ক্রমেই জোরদার হওয়ায় নেতানিয়াহু বেশ চাপের মধ্যে আছে।এর পাশাপাশি, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটবে এবং তাকে কারাগারে যেতে হবে। এই অবস্থায় এমন আশঙ্কা রয়েছে যে, সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য নেতানিয়াহু লেবাননে হামলা চালিয়ে বসতে পারে।
যদিও ইসরায়েল দাবি করেছিল যে, তারা হিজবুল্লাহকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে, কিন্তু হিজবুল্লাহ ইহুদিবাদী বসতি স্থাপনকারীদের কাছে প্রমাণ করেছে যে তাদের সরকার তাদেরকে মিথ্যা বলছে এবং তারা পিছু হটেনি।
প্রকৃতপক্ষে, আমরা যখন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করি এবং তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরণ সম্পর্কে জানতে পারি,তখন আমরা দেখতে পাই যে এই অস্ত্রগুলো ক্লাসিক এবং পুরানো অস্ত্র যেমন বি-সেভেন মডেলের মর্টার, পিকাসিয়ার মেশিনগান, কালাশনিকভ এবং কামান। এ থেকে বোঝা যায় যে এই অস্ত্রগুলো দিয়েও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব এবং ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস ও তাদের সৈন্যদের বন্দী করাও সম্ভব। লেবাননের জেনারেলরা দখলদার ইসরায়েলকে জানিয়ে দিয়েছে যে, যদি তারা লেবাননে আক্রমণ করে তাহলে প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদেরকে এর আগের যুদ্ধে ইসরায়েল যখন পরাজিতত হয়েছিল ঠিক সেই অবস্থায় নিয়ে যাবে এবং তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে বড় ধরনের হামলা চালানো হবে।
লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ সম্প্রতি ইসরায়েলের দ্বিতীয় অত্যাধুনিক হার্মিস ৯০০ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।এর মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ন্ত হার্মিস ড্রোনকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। একইভাবে তারা ইসরায়েলি এফ-১৬, এফ-১৫ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানকেও অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট দিয়ে ভূপাতিত করতে পারবে।
এভাবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে মূল যে বার্তা দিয়েছে তা হচ্ছে, তাদেরকে এটা বোঝানো যে, তারা যদি লেবাননে সামরিক অভিযান চালাতে চায় তবে তারা জেনে রাখুক আমাদের কাছে চমকে দেয়ার মতো এমন কিছু রয়েছে যা ইসরায়েলকে অনুতপ্ত করবে।
প্রকৃতপক্ষে, ইসরায়েল এ পর্যন্ত লেবানন ও গাজায় তাদের সামরিক শক্তির বিরাট অংশ ব্যয় করেছে।কিন্তু,লেবাননের হিজবুল্লাহ তার সামর্থ্যের একটি ছোট অংশ ব্যবহার করেছে, যা তাদের সক্ষমতার ২৫ শতাংশেরও কম এবং ইসরায়েলের জন্য অনেক বিস্ময় রয়েছে।
ইসরায়েলের যুদ্ধমন্ত্রীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা লেবাননকে ৮০ বারের বেশি হুমকি দিয়েছে। তবে তারা লেবাননের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপের পরিণতি সম্পর্কে জানেন। লেবাননের রয়ালটি ফেকশন দলের প্রধান মোহাম্মদ রাদসহ অন্য নেতারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি বোকা হয় এবং দক্ষিণ লেবাননে সামরিক অভিযান শুরু করে তবে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইসরায়েলিদেরকে সূর্যের আলো দেখারও সুযোগ দেবে না।