বুধবার, ০৫ জুন, ২০২৪
22 Nov 2024 09:24 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে গেলেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতে গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে এবার তৃণমূল কংগ্রেসকে তলানিতে নামাতে চেয়েছিল বিজেপি। ৩০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নির্বাচনে জোর প্রচারণ চালালেও উল্টা ২২ থেকে বেড়ে মমতার তৃণমূলই এখন ৩০ আসনের বেশি দখল করতে চলেছে।সর্বশেষ ফলাফলে এমনই আভাস দেখা যাচ্ছে। রাজ্যে তৃণমূল সরকারে থাকলেও লোকসভা নির্বাচন তথা কেন্দ্রে মাত্র ২২ আসন পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস।সেখান থেকে এবার মোদি ম্যাজিক উড়িয়ে দিয়ে বাজিমাত করেছেন মমতা।
মমতা এবার গতবার হারানো কিছু আসন পুনরুদ্ধারে এবং কিছু আসন ধরে রাখতে ‘তারকা ট্রাম্পকার্ড’ ব্যবহার করেন। যাদবপুর আসনে এই ট্রাম্পকার্ড ছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। ২ লাখ ২৪ হাজার ৫০৫ ভোটের ব্যবধানে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপির অনির্বাণ গাঙ্গুলি। তৃতীয় স্থানে সিপিআইএম-এর সৃজন ভট্টাচার্য।
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা আসন এই যাদবপুর। সেখানকার শক্ত মাটিতে এবার পদ্ম ফোটানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ফল বেরোতেই দেখা গেল, সায়নীর ‘ঝড়ে’ যাদবপুরে কার্যত উড়ে গেছেন অনির্বাণ-সৃজন। এই আসনের ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, তৃণমুল প্রার্থী সায়নী ঘোষ পেয়েছেন মোট ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অনির্বাণ গাঙ্গুলী পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ হাজার ৪৬ ভোট।
নির্বাচনে এই যাদবপুরে জয়ী হন তৃণমূলের আরেক তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী।
পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল আসনে হ্যাটট্রিক করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা দেব। এই লোকসভা কেন্দ্রে সহকর্মী ও বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে এক লাখ ২০ হাজারেও বেশি ভোটে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো জিতলেন নায়ক-প্রযোজক দেব অর্থাৎ দীপিক অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে করলেন জয়ের হ্যাটট্রিক। হুগলির আসন পুনরুদ্ধারে এবার তারকার পরিবর্তে তারকা অর্থাৎ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলেছেন মমতা। গতবারের লোকসভা নির্বাচনে তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে তৃণমূলের কাছ থেকে হুগলি আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। এবার হারানো আসন পুনরুদ্ধারে অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জীকে প্রার্থী করেন মমতা। ফলও পেলেন হাতে-নাতে। বিজেপির অভিজ্ঞ প্রার্থী লকেটকে ৩০ হাজার ভোটে হারিয়ে ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ হয়ে জেতেন রচনা। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে বহরমপুর পুনরুদ্ধারে ইউসুফ পাঠানের ক্রিকেটীয় জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করেছে তৃণমূল। ৮৬ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী তারকা ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান।
ইতোমধ্যে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কেন গো-হারা হারল বিপরীতে তৃণমূল কীভাবে নিজেদের আসন বাড়াল। এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। প্রথমত পশ্চিমবঙ্গ সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ইত্যাদির মতো যেসব সামাজিক প্রকল্পগুলি চালায় যেগুলোর মাধ্যমে সরাসরি অর্থ পৌঁছায় ভোটারদের হাতে। বিশেষত নারীদের হাতে। সেই ব্যবস্থায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটেÑ তা সুনিশ্চিত করতে চেয়েছেন ভোটাররা। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের প্রচারে এটা বারেবারে বলেছে যে বিজেপি যদি সরকারে আসে তাহলে এধরনের প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘সাধারণ মানুষ স্থিতাবস্থা চান। তারা দেখলেন, যদি বিজেপি সরকারে আসে, হোক না তা কেন্দ্রীয় সরকার, যদি তখন এই ধরণের সামাজিক প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তো সমস্যায় তারাই পড়বেন। আবার বিজেপি নেতারা বলছিলেন গতবারের থেকে সামান্য বেশি আসন পেলেও তারা রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দেবেন। এই হুমকিতে মানুষ কিছুটা হলেও আতঙ্কিত হয়েছেন।’
অন্যদিকে কয়েক বছর ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রচার চালাচ্ছে যে কেন্দ্রীয় সরকার বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অর্থ আটকিয়ে রেখেছে। সাধারণ মানুষ নিজেরা প্রত্যক্ষভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছেন গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে কাজ করেও তারা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। বিজেপির বিরুদ্ধে এই দুটি প্রচার তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্বাচনি সাফল্য এনে দিতে অনেকটা সহায়তা করেছে। দ্বিতীয় দফার ভোটের পর থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করে তার আগে নিজেদের দশ বছরের কাজের খতিয়ান দিচ্ছিল তারা। কিন্তু সেটা কতটা কাজ করছে ভোটে, তা নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয় বিজেপি নেতাদের মনে। তাই মোদী নিজেই ধর্মীয় মেরুকরণের বিষয়গুলো সামনে আনতে থাকেন। যেমন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে, হিন্দুদের ধনসম্পত্তি ছিনিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে ইত্যাদি।
যখনই এই মেরুকরণ শুরু করলেন তারা, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ভোটার, যার হয়তো একটা সময়ে ভাবছিলেন কংগ্রেস-বাম জোটকে ভোট দেওয়ার কথা, তারা সম্ভবত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে বিজেপিকে আটকাতে হলে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দলকেই ভোট দেওয়া দরকার।
এদিকে ফল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ চেয়ে তীর্যক বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।
মমতা বলেন, ‘এবার কেন্দ্রেও বিজেপির নৈতিক পরাজয় হয়েছে। তারা এককভাবে সরকার গড়তে পারছে না। ভর করতে হবে বিহারের নীতীশ কুমার ও অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর ওপর। তাই এই পরাজয়ের নৈতিক দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়া উচিত।’
পশ্চিমবঙ্গের এই মুখমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন, তার পদত্যাগ করা উচিত। এর ফলে আমি খুশি, কারণ বিজেপি— কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সি এনআইএ, সিবিআই, ইডি সব কিছু দিয়ে আমাদের ওপরে এবং অন্যান্য দলের ওপরে নানাভাবে অত্যাচার করছিল।তাদের অহংকার অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। আমি বলব, এখন প্রধানমন্ত্রীর সময় এসেছে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার।ওনার উচিত নিজের সরে গিয়ে অন্যদের জায়গা করে দেওয়া।’
এবার আর মোদিকে ছেড়ে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোটের অপর সদস্যরাও ছেড়ে দেবেন না। আপনার (মোদি) ম্যাজিক শেষ। এবার পদত্যাগ করতে হবে।’