শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
24 Nov 2024 11:54 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- আরব আমিরাত কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে নিয়মিত ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য সিলভার আয়োডাইড নামে এক ধরনের হলদেটে লবণের মিশ্রণ মেঘে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুবাইয়ে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় চার ইঞ্চি (১০০ মিমি) বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা শহরটির সারাবছরের মোট বৃষ্টিপাতের সমান। ৭৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এ বৃষ্টিপাতে মরুভূমির দেশটির বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে।
দুবাইয়ে সচরাচর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতের সময় পানি নিষ্কাশনের অবকাঠামো সীমিত। তাই মঙ্গলবারের প্রবল বৃষ্টিপাতে শহরটি বন্যার কবলে পড়ে। ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য দুবাইয়ের রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে এবং বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বিমানগুলো বন্যার পানিতে নৌকার মতো চলাচল করছে।
আকস্মিক এ বন্যার জন্য অনেকেই ক্লাউড সিডিং নামক কৃত্রিম বৃষ্টির দোষারোপ করলেও দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ক্লাউড সিডিং-এর জন্য এই বৃষ্টিপাত হয়নি। এ কৌশলের মাধ্যমে বৃষ্টি ঝরাতে সক্ষম হলেও বন্যা অবস্থা তৈরি করার মতো ভারী বৃষ্টিপাত হওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন।
ক্লাউড সিডিং-এর বড় ধরনের কোনো সাফল্য এখনও দেখা না গেলেও কৃত্রিমভাবে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ কয়েক দশক ধরে এই পদ্ধতির ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে।
ক্লাউড সিডিংয়ের কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান এবং ইরানে ভারী বৃষ্টিপাতে ঘটনা এখনো ঘটেনি। কয়েকদিন ধরে আরব উপদ্বীপ এবং ওমান উপসাগর হয়ে এগোতে থাকা বড়, ধীরগতির ঝড়ের কারণে এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ এসরা আলনাকবি মনে করেন, ঝড়ের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে। তার মতে দুবাইয়ে ভারী বৃষ্টিপাত বিভিন্ন উচ্চতায় নিম্নচাপ ব্যবস্থার কারণে বায়ুমণ্ডল ‘সংকুচিত’ হওয়ার কারণে ঘটেছে। গত সপ্তাহেই উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে বড় ধরনের বন্যার ঝুঁকির বিষয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছিল।
ক্লাউড সিডিং কী?
ক্লাউড সিডিং এমন একটি কৌশল যা আবহাওয়ার পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত প্ররোচিত করতে। এটিতে সিলভার আয়োডাইড, পটাসিয়াম আয়োডাইড বা তরল প্রোপেনের মতো পদার্থগুলো বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটির লক্ষ্য মেঘের মধ্যে বৃষ্টির ফোঁটা গঠনকে উৎসাহিত করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ানো।
ক্লাউড সিডিং কি আসলেই কাজ করে?
ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে আসলে কতটুকু বৃষ্টি বা তুষারপাত হয় তা নির্ধারণ করা কঠিন। বিজ্ঞানীরা এর প্রভাব পরিমাপ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কারণ ক্লাউড সিডিংয়ের ফলে কতটুকু বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং প্রাকৃতিকভাবে কতটুকু বৃষ্টিপাত হয়েছে এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা মুশকিল।
ইউসিএলএ’র (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস) জলবায়ু বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল সোয়াইন এর আগে সিএনএনকে বলেছিলেন, আপনি কীভাবে জানেন যে প্রাকৃতিকভাবে নাকি ক্লাউড সিডিংয়ের কারণে বৃষ্টি হচ্ছে? পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা করতে না পারলে নিশ্চিতভাবে এর কার্যকারিতা বলা যাবে না।
ক্লাউড সিডিং কী ক্ষতি করতে পারে?
মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকায়, বিশ্বের কিছু অংশ উষ্ণ এবং শুষ্ক হয়ে উঠেছে। ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে এক অঞ্চলে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরালেও, প্রক্রিয়াটি অন্যান্য অঞ্চলকে আরও শুষ্ক করে তুলতে পারে। ব্যাপারটা এক জায়গা থেকে জল নিয়ে অন্য জায়গায় দেওয়ার মতো। তাই আপনি যখন এক জায়গায় জোরপূর্বক বৃষ্টি ঝরাবেন তখন অন্য কোথাও কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এছাড়া সিলভার আয়োডাইড এবং অন্যান্য রাসায়নিকগুলোর অপব্যবহার পরিবেশ দূষণের একটি শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া শুরু করতে পারে, যা নেতিবাচকভাবে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য বাস্তব ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।