শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪
22 Nov 2024 05:46 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- গিবত বা পরনিন্দা ঘৃণিত অভ্যাস হলেও ইসলামি শরিয়ত এমন ছয়টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করেছে, যেসব ক্ষেত্রে গিবত করা জায়েজ। অর্থাৎ ওই ৬টি বিশেষ ক্ষেত্রে গিবত করলে কোনো গুনাহ নেই। সেগুলো হলো—
১. জুলুম থেকে নিজে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে গিবত করা যাবে। এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।
২. খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চেয়ে এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করা যাবে যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।
৩. শরয়ি সমাধান জানতে গিবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন বলা যে, অমুক ব্যক্তি আমার ওপর জুলুম করেছে, তাই আমারও কি তাকে আঘাত করা জায়েজ আছে? ইত্যাদি
৪. সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনি ও দুনিয়াবি ধোঁকা ও খারাবি থেকে বাঁচাতে গিবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদিস-আসার-ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা ইত্যাদি সম্পর্কে দোষ জনসম্মুখে বলে দেওয়া, যেন তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। মূলত এই গিবত মানুষের কাছে বলা ঈমান আমল হেফাজতের জন্যই জায়েজ।
৫. প্রকাশ্যে যদি কেউ শরিয়তগর্হিত কাজ করে, তাহলে তার খারাবি বর্ণনা করা এমন ব্যক্তিদের কাছে জায়েজ, যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন কেউ বিদআতে জড়িত। মানুষকে সাবধান হওয়ার জন্য তার বিদআতি কাজগুলো তুলে ধরা জায়েজ। এছাড়াও ধরেন কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে তার মদ খাওয়ার বিষয়টি সরাসরি জনসম্মুখে তুলে ধরা জায়েজ। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।
৬. কারো পরিচয় প্রকাশ করতে গিবত জায়েজ। যেমন কেউ কানা। তার পরিচয় দেওয়া দরকার। নাম বললে কেউ চিনছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনছে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গিবত হলেও তা জায়েজ আছে। এভাবে ল্যাংড়া, বধির, অন্ধ ইত্যাদি ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশে ওসব শব্দ ব্যবহার করা যাবে। তবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এসব নামে ডাকা অকাট্যভাবে হারাম। যদি এ সকল বিশেষণ ছাড়া তাদের চেনার অন্যকোনো উপায় না থাকে এতে গিবতের গুনাহ হবে না।
(সূত্র: তাফসিরে রুহুল মাআনি: ১৪/২৪২, সুরা হুজরাত: ১২)
উল্লেখিত কারণগুলোর আলোকে গিবত বৈধ হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তা হলো-
ক. নিয়তের খুলুসিয়াত বজায় রাখা। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা।
খ. শুধুমাত্র কল্যাণের জন্য দোষ বর্ণনা করা, কাউকে নীচু করার জন্য নয়।
গ. ব্যক্তিগত আক্রোশ ও মনের ঝাল মেটানোর জন্য বৈধ গিবতের আশ্রয় না নেওয়া।
ঘ. যতটুকু দোষ বর্ণনা করা প্রয়োজন কেবল ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা।
ঙ. নাম উল্লেখ না করেও যদি উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যায়, তবে নাম প্রকাশ না করা।
চ. নিজের ভুল-ত্রুটির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
উল্লেখ্য, হাদিসের ভাষ্যমতে, ‘গিবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম: ৬৪৮৭) ইসলামে গিবত কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। গিবতকে পবিত্র কোরআনে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ‘সামনে-পেছনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুজরাত: ১২; সুরা হুমাজাহ: ০১)
ইসলামের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি গিবত শোনে সেও গিবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। তাই যে আসরে গিবত হয়, সেই আসর বর্জন করা জরুরি। আল্লাহ তাআলার আদেশ- ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়েদা: ২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গিবত থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। প্রত্যেক বিষয়ে ইসলামি নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পিএনএস