রবিবার, ০৭ জানুয়ারী, ২০২৪
24 Nov 2024 02:42 am
মাক্সার টেনকোলজিসের তোলা এসব চিত্রে দেখা গেছে, ২০২১ সালেও উপত্যকার যে যে অংশ ফাঁকা ছিল, ২০২৩ সালে সেখানে গড়ে উঠেছে ইমারত।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পক্ষ থেকে ভুটানের জমি দখলের স্যাটেলাইট চিত্রে উঠে এসেছে। যেসব চিত্র মাত্র এক মাসেরও কম সময় আগে তোলা হয়েছে।
ভারতের দার্জিলিংয়ের উত্তরে চীনের সীমান্তে ভুটানের অবস্থান। মাত্র ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই পাহাড়ি দেশটির ক্রমে চীনের গ্রাসে চলে যাচ্ছে। এনডিটিভির প্রতিবেদন মতে, সম্প্রতি ভুটানের জাকারলুং উপত্যকার বেশ কিছু উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে এসেছে।
মাক্সার টেনকোলজিসের তোলা এসব চিত্রে দেখা গেছে, ২০২১ সালেও উপত্যকার যে যে অংশ ফাঁকা ছিল, ২০২৩ সালে সেখানে গড়ে উঠেছে ইমারত। চীনা সেনারা ভুটানের সীমানা লঙ্ঘন করে ভেতরে ঢুকে অব্যাহতভাবে অবৈধ নির্মাণ করে চলেছে। পাহাড়ি জঙ্গল কেটে একের পর এক গড়ে উঠছে বহুতল ভবন।
ভুটানের জমিতে মূলত গ্রাম ও সেনাছাউনি তৈরি করছে চীন। উপগ্রহচিত্রে দেখা গেছে, ভুটানের যে অংশে চীন জমি দখল করছে, সেখান থেকে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে।
সম্প্রতি যেখানে চীনের অবৈধ নির্মাণের খোঁজ মিলেছে, সেই জাকারলুং প্রদেশ সংস্কৃতিগত দিক থেকে ভুটানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। ভুটানি সংস্কৃতিও চীনা আগ্রাসনের গ্রাসে ডুবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এনডিটিভি বলেছে, চীনের এই আগ্রাসনের বিষয়ে সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই ভুটানের প্রশাসনের। কারণ চীনকে ঠেকানোর মতো ক্ষমতা দেশটির নেই। তাই সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে চীনের সঙ্গে সীমান্তের বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করছে ভুটানের কর্মকর্তারা। যা আগেও করেছেন তারা।
১৯৯৮ সালে জাকারলুংসহ একাধিক বিতর্কিত এলাকার মর্যাদা প্রসঙ্গে চীন ও ভুটানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে। সেখানে ভুটানে হস্তক্ষেপ না করতে রাজি হয় চীন। কিন্তু ওই চুক্তিকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চীনের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য বারবার উদ্যোগ নিয়েছে ভুটান। তারা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে। সুসম্পর্ক গঠনের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক কথায় কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভুটান সরকার।
ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তান্ডি ডোরজি গত অক্টোবরে চীন সফরে যান। যা আগে কখনও হয়নি। ওই একই মাসে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং চীন ও ভুটানের মধ্যে সীমারেখা নির্দেশক এঁকে দেয়া হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি দ্য হিন্দু পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী চীনের সঙ্গে ভুটানের জমি বিনিময়ের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। জল্পনা ছিল, চীন যদি ডোকলাম মালভূমির উপর তাদের দাবি ছেড়ে দেয়, তবে জাকারলুঙে যে জমিতে তারা টাউন তৈরি করছে, সেই জমি ভুটান তাদের দিয়ে দিতে রাজি আছে। এই জল্পনা উড়িয়ে দেননি শেরিং।
২০১৭ সালে ডোকলামে চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই এলাকায় চীনের অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল ভারত। ভুটান সে সময় জানিয়েছিল, ভারত ও চীন উভয় পক্ষকেই খুশি করে, এমন সিদ্ধান্ত নেবে ভুটান।
ভারতের সঙ্গে ডোকলামে সংঘর্ষের পরও চীন ওই অঞ্চলে অন্তত অন্তত তিনটি গ্রাম নির্মাণ করে ফেলেছে। দক্ষিণ দিকে আর এক চুলও এগোলে নয়াদিল্লির কাছে তা বড় উদ্বেগের কারণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভুটানের জমি ধরে চীন দক্ষিণে আর অগ্রসর হলে শিলিগুড়ি করিডরের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলবে বেইজিং। ওই করিডরের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একাধিক বার সতর্কতা জারি করেছে ভারতীয় সেনা।
তবে ভারতের লাগাতার বিরোধিতা সত্ত্বেও ভুটানের জমিতে চীনের অগ্রসর অন্যদিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ওই এলাকায় একটি ভূ-কৌশলগত পুনর্বিন্যাস হতে পারে। অনেকের মতে, ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে ভারতের পড়শি ভুটান। তারা চীনের সঙ্গে সমঝোতায় চলে যেতে পারে।