সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
23 Nov 2024 11:22 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- টানা হামলায় বহু প্রাণহানির পর সাত দিনের জন্য ছিল যুদ্ধবিরতি, তবে সেই বিরতি শেষ হওয়ায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ফের ইসরাইলি হামলা শুরু হয়েছে। এবারের হামলাটি অবরুদ্ধ গাজায় সবচেয়ে বড় হামলা। উত্তর গাজায় হামলা শুরুর পর এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে দক্ষিণ গাজায় চলে যেতে বলা হয়। এখন সেই দক্ষিণ গাজাতেও হামলা হচ্ছে। বিমান হামলা হচ্ছে খান ইউনিস শহরে, এই হামলার যে তীব্রতা; যুদ্ধ শুরুর পর তা কখনও দেখা যায়নি।
ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ৭ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর থেকে রক্তক্ষয়ী হামলায় উপত্যকাটির ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গতকাল গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের মুখপাত্র এই তথ্য জানিয়েছেন। ইসরাইলের নির্বিচার হামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না দক্ষিণ গাজার মানুষও। হামলা জোরদার করার জন্য খান ইউনিসের পার্শ্ববর্তী কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। সেখানে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার পরিচালক থমাস হোয়াইট বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে হেপাটাইটিস এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এদিকে দখল করা ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের কালকিলিয়া শহরে অভিযান চালিয়ে ২১ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের প্রিজনারস সোসাইটি জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে গতকাল শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ সময় তারা অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। বিবিসি বলছে, খান ইউনিস শহরে ৪০০-এর মতো হামলা হয়েছে। হামাস এই শহরে লুকিয়ে আছে এমন সন্দেহে হামলা করছে ইরসায়েল। ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন হামলায়। হামাসও ইসরাইলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি হামলায় সবমিলিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে নির্মূল এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত ইসরাইলি সামরিক অভিযান চলবে। নেতানিয়াহু বলেন, একটি কঠিন যুদ্ধ আমাদের সামনে।
যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো বন্দিবিনিময় নয় : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসরাইলের গণহত্যা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তেল আবিবের সঙ্গে আর কোনো বন্দিবিনিময় করবে না হামাস। ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপ-প্রধান সালেহ আল-আরুরি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে বন্দিবিনিময় নিয়ে আর কোনো আলোচনা হচ্ছে না। হামাসসহ সব প্রতিরোধ আন্দেলন এখন এই বিষয়ে একমত যে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের তাণ্ডব পুরোপুরি ও চূড়ান্তভাবে বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো বন্দি বিনিময় হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘হামাসের হাতে এখন ইসরাইলি যেসব বন্দি আছে তারা সেনা সদস্য এবং এমন বেসামরিক ব্যক্তি, যারা ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে এর আগে কাজ করেছে। যুদ্ধবিরতি ছাড়া তাদের ছাড়া হবে না। একই সঙ্গে মুক্তি দিতে হবে সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে। যুদ্ধকে তার গতিতে চলতে দেয়া হোক। সিদ্ধান্ত ফাইনাল। এ নিয়ে কোনো আপস করব না আমরা।’
এদিকে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করার কথা জানিয়েছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। ২০১৪ সাল থেকে ওই অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধের যেসব অভিযোগ আছে তা তারা তদন্ত করবে। এমন তদন্তে অনুমোদন আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি)।
ইসরাইলকে শায়েস্তা করতে সবকিছু করবে তুরস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, গাজা উপত্যকায় গণহত্যার কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ইসরাইলকে শাস্তি দেয়ার জন্য সবকিছু করবে তার দেশ। দুবাইয়ে কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফিরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন এরদোগান।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এই গণহত্যার জন্য (ইসরাইলকে) শাস্তি দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। এটি শুধু (ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর) ওপর নয়, নেতানিয়াহুর সরকারের পাশাপাশি সেই দেশগুলির ওপরও দায় বর্তাবে যারা নিঃশর্তভাবে এটিকে সমর্থন করে। আগামী দিনে তাদের নীরবতার জন্য তাদেরও মূল্য দিতে হবে।’ বিশ্ব এই উদাসীনতা ভুলবে না এবং ভুলতে দেয়া হবে না- উল্লেখ করে তুর্কি নেতা বলেন, তুরস্কসহ প্রায় তিন হাজার আইনজীবী গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার বিষয়ে আইসিসির কাছে আবেদন করেছেন। ‘আমরা আশা করি, গাজার এই কসাইরা, গণহত্যার নায়করা, বিশেষ করে (ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী) নেতানিয়াহু প্রয়োজনীয় শাস্তি পাবেন,’ বলেন এরদোগান।
ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা : বাগদাদ থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার দূরে ইরাকি শহর ইরবিলের উত্তরে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে কামিকাজে ড্রোন দ্বারা আক্রমণ করা হয়েছিল, দুবাই-ভিত্তিক আল হাদাথ টেলিভিশন রোববার ভোরে জানিয়েছে। হামলায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও জানানো হয়নি।
শিয়া আন্দোলন ইসলামিক ফ্রন্ট ফর ইরাকি রেজিস্ট্যান্স হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটি এর আগে ঘোষণা করেছিল যে, গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরে তারা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করছে। ফক্স নিউজের মতে, ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর উপর ১৭ অক্টোবর থেকে মোট ৭৪টি হামলা নিবন্ধিত হয়েছে। প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা সিরিয়ায় এবং প্রায় ২,৫০০ ইরাকে মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্র : আল-জাজিরা, আনাদোলু, তাস।