সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩
24 Nov 2024 04:44 am
সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম:- কুড়িগ্রাম সদর আসন (কুড়িগ্রাম-২ সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলা) জাতীয় পার্টির হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে একাট্টা কুড়িগ্রাম আওয়া মীলীগ। একই সঙ্গে অপর তিনটি আসন থেকে বর্তমান দলীয় এমপিদের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে সড়াতে দলের নেতারা জোট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। এ নিয়ে বিরোধ এখন প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ অভিযোগের শীর্ষ তালিকায় কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী) আসনের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপিও রয়েছেন। অপর দুই এমপি হলেন- কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) আসনের সাংসদ আসলাম হোসেন সওদাগর এবং কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের অধ্যাপক এম এ মতিন এমপি। জেলার চারটি আসনে আ'লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৫১জন প্রার্থী। প্রতিমন্ত্রীর আসনে (কুড়িগ্রাম-৪) সর্বোচ্চ ১৭জন মনোনয়ন ক্রয় করেছেন। এরপরে রয়েছে জাতীয় পার্টির দখলে থাকা কুড়িগ্রাম সদর (কুড়িগ্রাম-২) আসন। এ আসনে মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে ১৩টি। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে মনোনয়ন জমা করেছেন ১২জন এবং কুড়িগ্রাম-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন ক্রয় ও জমা হয়েছে ৯টি।
কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) আসনের আ’লীগের বর্তমান এমপি আসলাম হোসেন সওদাগরের দুর্নীতির কারণে ইমেজ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। তাই দলের ইমেজ ফিরিয়ে আনতে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ মেহেদি হাসান প্রধান সুমন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ডাঃ মাহফুজার রহমান উজ্জল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান মন্ডল ও ইসাহক আলী। আবারো মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান সাংসদ আসলাম হোসেন সওদাগর।
কুড়িগ্রাম সদর আসন (কুড়িগ্রাম-২ সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলা) জাতীয় পার্টির হাত থেকে পুন:রুদ্ধার করতে জোট বেধেছেন আওয়ামীলীগ। দলকে শক্তিশালী এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় করতে যেকোন মূল্যে এ আসনটি ছিনিয়ে নিতে চায় আওয়ামীলীগ। আ'লীগের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে এ আসনে। দলের মনোনয়ন ক্রয় করেছেন ১৩জন। তারা হলেন-জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ প্রবীন রাজনীতিবিদ মোঃ জাফর আলী, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক একুশে পদকে ভূষিত খ্যাতিমান আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু, ডাঃ হামিদুল হক, অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন দুলাল, আবু মোঃ সাঈদ হাসান লোবান, শাহনাজ বেগম, মাহবুবা বেগম, আবু সুফিয়ান, জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী ও ফরহাদ হোসেন ধনু। মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, দলের সার্থে ও উন্নয়নের স্বার্থে এ আসনটি আমরা চাইছি। আমাদের অভিভাবক দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের সে আস্হা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমাদের হতাশ করবেন না তিনি। তিনি যাকেই মনোনয়ন দিবেন আমরা সবাই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকাকে বিজয়ী করবো।
কুড়িগ্রাম -৩ (উলিপুর) আসনের বর্তমান সাংসদ অধ্যাপক এম এ মতিন এবারো মনোনয়ন চেয়েছেন। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির লিখিত অভিযোগ করে মনোনয়ন না দেয়ার লিখিত আবেদন করেছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর। বর্তমান সাংসদকে সড়াতে আরো ১১জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন-উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আহসান হাবীব রানা, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, সাবেক কেন্দ্রিয় প্রভাশালী নেতা হাবিবুল হক সরকার (ফুলু সরকার), মতি শিউলী, সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা, সরদার মোঃ আল মামুন, সাজু আহমেদ সরকার, সালমান হাসান ডেভিড, তারকা শিল্পী সাজু আহমেদ, সাজাদুর রহমান তালুকদার ও নারায়ন চন্দ্র বর্মণ।
কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী) আসনের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপিকে চ্যালেঞ্জ করে তিন উপজেলার দলের শীর্ষ ১৬জন নেতা মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে তারা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে দুর্নীতিবাজ, ভুমিদস্যু, মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনকে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ পত্রে জাকির হোসেন ছাড়া অন্য যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
অভিযোগকারী মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশ, রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিউল আলম, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও কুড়িগ্রাম বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাসুম ইকবাল, চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম লিচু,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপকমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ লতিফ, স্বাচিব নেতা ফারুকুল ইসলাম, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক অধ্যক্ষ ফজলুল হক মনি, রৌমারী আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ খোকা, রাজিবপুরের সহ-সভাপতি মশিউর রহমান রতন, চিলমারী উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রাহিমুজ্জান সুমন ও অ্যাডভোকেট সাজেদ হোসেন তোতা।
কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগের তিন এমপিকে নিয়ে দলীয় নেতাদের সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগের চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য ফাঁস হলে তোলপাড় শুরু হয়। নেতা কর্মী সমর্থক চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন এমপিদের নিয়ে। জেলার হাটবাজার, চায়ের দোকান, অফিস-আদালত সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রে এখন মন্ত্রী জাকির হোসেন, অধ্যাপক এন এ মতিন এমপি ও আসলাম হোসেন সওদাগর এমপি। তাদের নানা অপকর্ম অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।