শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩
23 Nov 2024 03:28 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে 'নদী রক্ষার অঙ্গীকার’সহ ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে নোঙর ট্রাস্ট।
আজ শুক্রবার সকাল ১১ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাব সড়কে ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতিয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে 'নদী সংরক্ষণের অঙ্গীকার চাই’ মানববন্ধন থেকে ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সংরক্ষের সামাজিক সংগঠন নোঙর ট্রাস্ট।
মানববন্ধন কর্মসূচীর শুরুতে নোঙর ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান সুমন শামস তার বক্তব্যে বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে গত ৫২ বছর ধরে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ভরাট করে দখলের প্রতিযোগিতা বেড়েই চলছেই। একদিকে, উজানে সীমান্তের ওপারে বাঁধ তৈরি করে একতরফা পানি সরিয়ে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশের নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে পানি সঙ্কট। অন্যদিকে, দেশের মধ্যেই অতিরিক্ত পলি জমে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মনুষ্য সৃষ্ট নানা ধরণের শিল্পবর্জ্যের দূষণে আমাদের নদীমাতৃক দেশের প্রাণবৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। পাশাপাশি কিছু স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে নদী ভরাট করে অথবা বালু উত্তোলন করে নদীগুলোকে ধ্বংস করেই চলছে! কেউ আবার হবিগঞ্জের শুটকি নদীসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক নদীকে ব্যাক্তি মালিকানায় দখলে রেখেছেন!বাংলাদেশে নদী সংরক্ষণে আইনের শাসন কার্যকর না থাকায় নদীখেকো দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন অঞ্চলের নদীর তলদেশ পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। দেশের নদী সংরক্ষণের আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না করার কারণে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনার কারণে দখলদারিত্ব বন্ধ হচ্ছে না। এমন অবস্থায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষার অঙ্গীকার এবং বাস্তবায়ন জন্য ৯টি দাবি তুলে ধরছে নদী ও পা্রণ-প্রকৃতি সংরক্ষণের সামাজিক সংগঠন নোঙর ট্রাস্ট।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীতে ‘দেশের সকল নদী কে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করো’ দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর। এর পর ২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে একই দাবিতে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান সভার আয়োজন করে সংগঠনটি। তারপর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচাপতি মো. আশরাফুল কামালের স্বাক্ষরে মহামান্য হাইকোর্ট দেশের সকল নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের নদ-নদী হাও-বাওর খাল-বিল ইত্যাদির অভিভাবক হিসেবে আইনি মর্যাদা প্রদান করেছেন। চলতি বছরের (২০২৩) ২৪ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশের ১০০৮ টি নদ-নদীর সংখ্যা নির্ধারণ পূর্বক কমিশন অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা এবং সংখ্যা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে। নদী গবেষকদের মতে দেশে নদ-নদীর সংখ্যার প্রায় ১৯০৮ এর বেশী।
১) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইস্তেহারে দেশেরে সকল নদী, খাল, বিল, বিল, হাওরবাওর, পুকুর, জলাশয়, প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণের অঙ্গীকার এবং বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদের সকল সদস্যদের শপথ গ্রহণ করতে হবে।
২) আদালতের নির্দেশ মেনে ১৯৪০ সালের সিএস নকশা অনুযায়ী সকল জেলার নদী-শাখা নদী ও খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে করে এবং সীমানা পিলার স্থাপন করে পুণরায় প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৩) রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া ৪৭টি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে বৃত্তাকার নৌপরিবহণ চালু করতে হবে।
৪) নদীর সকল বাঁধ, স্বল্প উচ্চতার সতেু-কালর্ভাট অপসারন করে পরিবহন যোগ্য নৌপথ তৈরী করতে হবে।
৫) নদী দখল-দূষণকারী, বালু খেকো, ভূমি দস্যুদের নির্বাচনে অংশগ্রহনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
৬)সমুদ্র-পাহাড়, বনভূমি, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠর ভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
৭) জলবায়ূ ন্যায্যতার দাবিতে দেশের স্বার্থে 'জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭' অনুস্বাক্ষর করার মাধ্যমে সকল অভিন্ন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের বাধা অপসারণ করতে হবে।
৮) ফারাক্কা-তিস্তাসহ ৫৪টি আর্ন্তজাতিক নদীর পানি ন্যায্যতার সঙ্গে ব্যবহারের চুক্তি স্বাক্ষর করা এবং ভারতের নদী সংযোগ প্রকল্প বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৯)দেশের নৌপথে নিহত সকল শহীদের স্মরণে আগামী দিনের নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চত করতে ‘২৩ মে, কে জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণা করে সরকারি ভাবে গেজেটভূক্ত করতে হবে।
এ সময় বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ ‘সারা দেশের নদীখেকোদের সরকারি তালিকা চাই’ দাবি উঠলে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় ৪৮ নদীর সমীক্ষায় ৫৭ হাজার ৩৯০ জন দখল-দূষণকারীদের নাম প্রকাশ করার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।এর মধ্যে মোট ১৬ হাজার ৫৯০টি স্থাপনা উচ্ছেদের পর ২০২০ সালে আবার দখল-দূষণকারীদের সংখ্য বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ হাজার ২৪৯ জন। চলতি বছর (২০২৩ সালে) জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তিন বছর মেয়াদী ৩০ কোটি টাকা ব্যায় করে ৪৮ নদী সমীক্ষার নদী দখল-দূষকারীদের তৈরী করা তালিকা এখনো প্রকাশ করেনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বরং ১৯৪০ সালের সিএস নকশা অনুযায়ী দেশের সকল নদী দখদারদের উচ্ছেদ করতে আদালতের যে নিদের্শনা আছে তা অমাণ্য করে ২০১৩ সালের পনি আইন দেখিয়ে ৩৭,৩৯৬ জনকে নদী দখলদারের নামের তালিকা প্রকাশ করেনি নদী কমিশনের সম্প্রতি চাকুরিচ্যুত চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। যদিও জলাধার ও পনি আইনেও ১৯৪০ সালের সিএস নকশা অনুযায়ী দেশের সকল নদী দখদারদের উচ্ছেদ করা কথা বলেছেন মহামান্য আদালত।
নদীমাতৃক দেশের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণের ৯ দফা দাবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন নোঙর কেন্দ্রী কমিটির সদস্য লোকশিল্প ও গবেষক ইমরান উজ্জামান, পরিবেশবাদি লেখক ও প্রকাশক নাজমুল হুদা রতন, ফজলে সানি, জাহাঙ্গীর নিপু, আমিনুল হক চৌধূরী, আহমেদুর রহমান রুমি, সংস্কৃতি কর্মী আব্দুস সামাদ, প্রকাশক কামাল মুস্তফাসহ আরো অনেকে।