সোমবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৩
23 Nov 2024 11:01 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নজিরবিহীন বোমা হামলা বন্ধ ও নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশে ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাকার্তার এই বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নিয়েছে দেশটির প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
রোববার (৫ নভেম্বর) দেশটির রাজধানী জাকার্তার ন্যাশনাল মনুমেন্ট (মোনাস) চত্বরে বিক্ষোভ-সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এটা ছিল গত এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ-সমাবেশ।
পর্যবেক্ষক ও আয়োজকরা বলছেন, সকালেই লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে জাকার্তার মোনাস চত্বর। এই বিক্ষোভে অন্তত ২০ লাখ মানুষ অংশ নেয়। বিক্ষোভ-সমাবেশের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদন মতে, প্রধানত সাদা পোশাক ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক সাদা-কালো রঙের কুফিয়াহ পরে ইন্দোনেশীয়রা এই বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেয়।
এ সময় তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা ও নানা প্রতিবাদী বক্তব্য ও স্লোগান লেখা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড। গাজা অবরোধ ও ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দেয়।
মোনাস স্কয়ার তথা ন্যাশনাল মনুমেন্ট চত্বরে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। এছাড়া বিক্ষোভ-সমাবেশের পুরো এলাকাজুড়ে বসানো হয় বড় বড় টিভি স্ক্রিন। সেসব স্ক্রিনে দেখানো হয় গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার ও বর্বর হামলা ও ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য।
বিক্ষোভ-সমাবেশ বক্তব্য রাখেন দেশটির মুসলিম নেতারা। তারা অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের পাশাপাশি ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দেন।
এ সময় পুরো এলাকাজুড়ে ধ্বনিত হয়, ‘ইসরায়েলিরা নিপীড়ক, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর’ স্লোগান। আরও শোনা যায়, ‘ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে ইন্দোনেশিয়া’।
শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে দেশটির সর্বোচ্চ ইসলামি কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশিয়ান উলেমা কাউন্সিল। এতে অন্যান্য মুসলিম সংগঠনগুলোর পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় সংগঠনগুলোও অংশ নেয়।
ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কানাডা, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। এসময় দ্রুত যুদ্ধবিরতির দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।
শনিবার লন্ডনে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে, স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। তারা দ্রুত যুদ্ধবিরতির দাবি জানান। হামাস ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর চতুর্থ সপ্তাহের মতো বিক্ষোভে নামলো লন্ডনবাসী। বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সেও গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। প্যারিসের রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে। বিক্ষোভকারীরা দ্রুত যুদ্ধবিরতির দাবি জানান। পুলিশের দাবি প্রায় ২০ হাজার মানুষ এতে অংশ নেন।
তবে বামপন্থী সিজিটি ইউনিয়নের দাবি এতে ৬০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। ফ্রান্স সরকার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা উপেক্ষা করে প্রতি সপ্তাহেই বিক্ষোভে নামছে ক্ষুব্ধ জনতা। গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হত্যা মেনে নিতে পারছেন না তারা।
বিক্ষোভ হয়েছে জার্মানির বার্লিনেও। গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। এতে অংশ নেন ৬ হাজারের বেশি মানুষ। নিষেধাজ্ঞা না মেনে রাজপথে নেমে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান তারা
কানাডার টরোন্টো এবং অটোয়াতেও গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। মানবিক বিপর্যয়ের কারণে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের বর্বরতার নিন্দা জানান তারা।
গাজায় বর্বর হামলায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন তুরস্কের মানুষ। ইস্তাম্বুল এবং আঙ্কারার রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ। তারা যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানান। ইরানেও গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে সমাবেশ হয়েছে।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় বর্বর হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।
এছাড়া প্রায় ৮ হাজার ৫০০ আবাসিক ভবন ও ৪০ হাজার আবাসন ইউনিট ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি মসজিদ, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি গির্জা এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি ভবন রয়েছে।
এছাড়াও ইসরায়েলির আগ্রাসনে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ১০৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, ১৬টি হাসপাতাল, ৩২টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র ও ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ২ লাখ ২০ হাজার অন্যান্য ইউনিটের ক্ষতির পাশাপাশি ৮৮টি সরকারী সদর দফতর এবং ২২০টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।