শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৩
24 Nov 2024 07:23 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:-আড়াই বছর ধরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেদ্ধ ডিম বিক্রি করেন মো. মানিক। তিনি জানালেন, ছয় দিন ধরে তাঁর বিক্রিতে মন্দা। আগে বিকেল হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতেন। এখন কার্যালয়ের আশপাশেও তাঁদের কেউ ঘেঁষছেন না, সেখানে শুধু পুলিশের উপস্থিতি।
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেদিন থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। কার্যালয় ভবনের সামনের অংশটুকু বাদ দিয়ে রাস্তার দুই পাশে এখন দিন–রাত পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো নেতা-কর্মী নেই। কার্যালয়ের ভবনের দুই পাশে পুলিশের কিছু সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন, কয়েকজন বেঞ্চ-চেয়ার পেতে বসে আছেন। কার্যালয়ের ঠিক সামনের ফুটপাত দিয়েও পথচারীদের চলাচল বন্ধ। তবে পথচলতি মানুষ উৎসুক হয়ে কার্যালয়ের আশপাশে উঁকি দিচ্ছেন। কার্যালয়ের তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেটের ভেতরে একটি চেয়ারের ওপর কয়েকটি চিঠি পড়ে আছে। বাইরে থেকে দেখা যায়, সাদা রঙের খামে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া চিঠিও রয়েছে। এই চিঠির প্রাপকের জায়গায় লেখা—মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি।
মূলত বিএনপিকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের একজন বার্তাবাহক এই চিঠি নিয়ে যান সেখানে। কিন্তু কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকায় কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও দলটির কারও হাতে চিঠি দিতে পারেননি তিনি। পরে কলাপসিবল গেটের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে চেয়ারের ওপর চিঠিটি রেখে যান তিনি।
নির্বাচন কমিশন আগামীকাল শনিবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা করবে। বিএনপি এতে অংশ নিচ্ছে না।
আজ বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে একটি মিছিল বিএনপি কার্যালয়ের দিকে আসে। পরে দেখা যায় এই মিছিল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণ অধিকার পরিষদের (নুরুল-রাশেদ) নেতা–কর্মীদের। মিছিলটি কার্যালয়ের সামনে এগিয়ে আসার পর পুলিশ সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠেন। তবে মিছিলকারীদের বাধা দেয়নি পুলিশ। মিছিলটি কার্যালয়ের সামনের রাস্তা পার হয়ে ফকিরাপুল মোড়ের দিকে চলে যায়।
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মিছিল করার বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের পর কিছুটা ভীতিকর পরিস্থিতি আছে, নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার–আতঙ্কও রয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের শরিক হিসেবে গণ অধিকার পরিষদ তাদের কার্যালয়ের সামনে মিছিল করায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার হবে।
বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশে বেশ কয়েকটি বিপণিবিতান রয়েছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের এক দিনের হরতাল ও তিন দিনের অবরোধে এসব দোকানের অধিকাংশই বন্ধ ছিল। আজ এসব বিপণিবিতান খুললেও লোকজন না আসায় ব্যবসা হয়নি। ফুটপাতের দোকানিদেরও একই অবস্থা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় তাঁদেরই বেশি ক্ষতি হয়।
কার্যালয়ের পাশের জোনাকি সুপারমার্কেটের নিচতলার কাপড়ের দোকান নুসরাত এন্টারপ্রাইজের কর্মী মো. জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা খারাপ। রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে এদিকে লোকজন কম আসে।’
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে নেতা-কর্মীদের ভিড় থাকত। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন। কার্যালয়ের আশপাশ এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের সহকারী কমিশনার গোলাম রুহানি প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার পর বিএনপির নেতারা ব্রিফ করে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যালয়ে আসতে কোনো বাধা নেই।