শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩
24 Nov 2024 03:45 am
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ-বেড়েই চলেছে কৃষিতে শ্রমিক সংকট। বিশেষ করে ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে তীব্র আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় যন্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে সমান তালে। সনাতনী কৃষিকে স্মার্ট করতে এরই মধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’র মাধ্যমে শুরু হয়েছে ধানের চারা রোপণ। এতে কম সময়ে বেশি জমিতে ধানের চারা রোপণে কমেছে কৃষকের সময়, শ্রম আর ব্যয়। ফলে স্বস্তি ফিরেছে প্রান্তিক কৃষকের মনে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় ধানের চারা রোপণ করা যায়। একজন শ্রমিক ঘণ্টায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতক জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন। যন্ত্রটি ব্যবহার করতে ঘণ্টায় মাত্র আধা লিটার পেট্রোল প্রয়োজন হয়। ফলে জ্বালানি খরচও খুব কম। এছাড়া আছে নিয়ন্ত্রিত ও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে চারা রোপণ করার সুবিধা। নেই চারা নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কাও।যন্ত্রটি ব্যবহার করলে বীজতলা তৈরির জন্যও আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানেই বীজতলা তৈরি করা সম্ভব। বৃষ্টির মধ্যেও খুব সহজে চারা রোপণ করা যায়। অত্যন্ত কম খরচ, শ্রম ও সময়ে বেশি জমিতে চারা লাগানো সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা যন্ত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুর বিভাগে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে কৃষকদের চাষাবাদ করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে এবং কৃষকদের উৎসাহিত করতে উপজেলা কৃষি অফিস রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধানের চারা রোপণে সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে। এমনকি কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিনে ধান রোপণের পদ্ধতি প্রান্তিক কৃষকদের শেখাচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণে কোনো ধারণা না থাকলেও এ নিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চাষ করে শ্রমিক সাশ্রয়ী ও কম সময়ে বেশি ফলনে লাভবান হওয়া সম্ভব।উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের কৃষক রাসেদ মিয়া বলেন, ‘শ্রমিক সংকটে ধানের চারা রোপণে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে ২ হাজার ৩০০ টাকা শ্রমিকরা চেয়েছিল। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় কম খরচে কম সময়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে ধান রোপণ করেছি।’কৃষক মজিদ হোসেন বলেন, ‘জমিতে ধানের চারা রোপণ করলে শ্রমিকের খরচ যদি ২ হাজার টাকা হয়, সেখানে এই মেশিন দিয়ে ধান রোপণ করলে খরচ হবে ৩০০ টাকা।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফাতেমা মিশুক বলেন, ‘শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে ধান আবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হতে পারছেন না। শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়াই এর মূল কারণ। এ জন্য সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে স্মার্ট কৃষির উদ্যোগ নিয়েছে। যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপণ ও মাড়াই করলে কৃষকেরা অনেক লাভবান হবেন। যন্ত্র কিনতে সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তাও করছে।’