শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩
01 Apr 2025 09:19 pm
![]() |
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বেশ সরব হয়ে উঠেছে বিদেশি কূতনীতিকরা। তৎপর মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের একটা অংশও। বাংলাদেশকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে কখনও মার্কিন কংগ্রেসে, কখনও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আবার কখনও জাতিসংঘের কাছে একের পর এক চিঠি দিয়ে আসছেন এসব কংগ্রেসম্যান।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়েছেন ১৪ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বব গুড। বিরোধীদল রিপাবলিকান পার্টির এ রাজনীতিক ভার্জিনিয়া রাজ্যের ফিফথ ডিস্ট্রিক্ট থেকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ডকে লেখা ওই চিঠিতে আবারও বাংলাদেশ সরকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) জাতিসংঘে চিঠি দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন বব গুড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আমি আমার আরও ১৩ সহকর্মীর সঙ্গে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে একটি চিঠি দিয়েছি। তাতে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি।’
বব গুড তার টুইটার পোস্টে চিঠিটি যুক্ত না করলেও বিএনপি সমর্থকরা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার করেছেন।
কংগ্রেস সদস্যদের এ চিঠিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের সামিল বলে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা। শুধু তাই নয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতায় যেতে মরিয়া বিরোধীদের প্রোপাগান্ডায় সায় দিয়ে মিথ্যাচার করছেন এই কংগ্রেসম্যানরা।
১৪ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠির ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশকে না নিতেই একটি পক্ষ বিদেশিদের কাছে তদবির করছে। তিনি বলেন, ‘একটা দল তদবির করছে। যাতে আমাদের এই লোকগুলোকে জাতিসংঘ মিশনে না নেয়া হয়। তারা সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করছে। শেইম অন দেম।’
দলটির নাম না করেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তোমরা সরকারকে অপছন্দ কর। কিন্তু তার ফলে (জাতিসংঘ মিশনে) এই যে একটা ভালো অবস্থান, তা ধ্বংস করার পক্ষে এত মাদবরি কেন?'
এর আগেও গত ২৫ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে চিঠি পাঠান কংগ্রেসের ৬ সদস্য। সেখানেও নেতৃত্ব দেন বব গুড। ২ জুন চিঠিটি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে শেয়ার করেন তিনি। এরপর সেটা বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার করেন।
সেই চিঠিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সংখ্যা কমে যাওয়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো হয়। যদিও ওই চিঠির তথ্যে অতিরঞ্জন, অসঙ্গতি ও ফাঁক আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এছাড়া ওই চিঠিতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর সংখ্যা কমে আসার তথ্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, অতিরঞ্জন ও একপেশে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে লিখিত আবেদন করেন দেশটিতে বসবাসকারী ১৯২ মার্কিন বাংলাদেশি। তারা বলেন, লবিস্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইতিহাস বিকৃত করে পরিসংখ্যানবিহীন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন ওই কংগ্রেসম্যানরা।
১৪ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে যা রয়েছে
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ডকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও তত্ত্বাবধানে’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জাতিসংঘকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিটি শুরু করা হয়েছে এমন বক্তব্য দিয়ে যে ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্যাতন, এমনকি হত্যার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করতে আপনাকে এই চিঠি লিখছি’।
২০২১ সালে র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উল্লেখ করার পাশাপাশি র্যাব এখনও নির্যাতন, হত্যা ও গুম করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আরও দাবি করা হয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গত ছয় থেকে আট মাস ধরে বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু এসব বিক্ষোভে পুলিশ ও সরকার সমর্থকরা সহিংসতা করেছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনে কারচুপি, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ইতিহাস রয়েছে দাবি করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আগামী নির্বাচন যে অবাধ ও স্বচ্ছ হবে, সে ব্যাপারে আমরা সন্দিহান।’ নেতিবাচক ও ভিত্তিহীন এসব অভিযোগের পর জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে র্যাবের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত এর কোনো সদস্যকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ ও মোতায়েন বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সবশেষে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিশ্বের ‘নিরপেক্ষ’ দেশগুলোর সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে ‘সুষ্ঠু ও অবাধ’ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েন করার কথাও বলা হয়েছে। চিঠিতে যে ১৪ জন কংগ্রেসম্যান সই করেছেন তারা হলেন- বব গুড, স্কট পেরি, আনা পলিনা-লুনা, জোশ ব্রেচেন, রাল্ফ নরম্যান, অ্যান্ড্রু ক্লাইড, এলি ক্রেন, কোরি মিলস, পল এ গোসার, ডগ লামালফা, রনি এল জ্যাকসন, র্যান্ডি ওয়েবার, ব্রায়ান বেবিন ও গ্লেন গ্রোথম্যান।
১৪ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের এই চিঠিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই। তারা বলছেন, বিশ্বের ‘নিরপেক্ষ’ সরকারগুলোর সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘকে বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজন ও তদারকিতে অংশগ্রহণের আহ্বান স্পষ্টতই কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং একই সঙ্গে স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গিও। কেননা এমনটা আর কোনো দেশের ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায় না।
বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক মাস আগে বিএনপির প্রপাগান্ডার সঙ্গে সুর মিলিয়ে শান্তিরক্ষীদের ‘খুনি’ বলে অভিহিত করেছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান মূলত তারই প্রতিধ্বনি। এটা স্পষ্ট যে, নির্বাচনে অংশ না নিয়েই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে এটা বিএনপির আরেক তদবির প্রচেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী শাহ আলি ফরহাদ বব গুডের টুইটের জবাবে বলেছেন, `কংগ্রেসম্যান, আমি ভেবেছিলাম যে, বাংলাদেশ নিয়ে আপনার শেষ চিঠির ব্যাপারে মূলধারার নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর আপনার উপলব্ধি হবে যে আপনি একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দ্বারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগে প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করেছে।’
‘কিন্তু দেখা যাচ্ছে একটি গোষ্ঠীর প্রচারিত বিভিন্ন বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করার মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে একটি পক্ষ নিচ্ছেন। এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামপন্থি দলগুলোর সাথে সম্পর্কিত একটি শিবিরকে শক্তিশালী করছেন।’
ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে অতিরঞ্জন ও অসঙ্গতি
গত ২৫ মে বাংলাদেশ নিয়ে আরও পাঁচ কংগ্রেসম্যানকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি চিঠি দেন কংগ্রেসম্যান বব গুড। বিতর্কিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হামলা, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন। এছাড়া অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন।
সেই সময় ওই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এতে অনেক অতিরঞ্জন ও অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চিঠিটি সংগ্রহ করেছি। অন্য যেকোনো চিঠির মতো এখানে কিছু বাড়তি বলা হয়েছে। এমনকি তথ্যের বড় ধরনের ঘাটতি আছে, অসামঞ্জস্য আছে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের দেশেও রাজনীতিবিদরা, সংসদ সদস্যরা বিশেষ করে অন্য দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু বলেন। কেউ হয়তো লেখেনও, কিন্তু আমরা সেটি জানি না। হয়তো আমার বিরুদ্ধে বলেন বা লেখেন। এটি রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানের ওপর নির্ভর করে তিনি ওই চিঠি বা কথাগুলো বিবেচনায় নেবেন কি নেবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরকম চিঠি অতীতেও এসেছে, ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে আসতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এই ধরনের কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে।’ বিভিন্ন লবিস্ট ফার্ম বা শক্তি কাজ করছে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা তাদের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন বাংলাদেশের মানুষ আমাদের শক্তি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে কারো কাছে ধর্না দিয়ে বা কারো চাপে পড়ে বা কারো সঙ্গে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতেই হবে- এরকম কোনও নীতির প্রতি অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পেছনে ফেলে দেওয়ার নীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না।’
৬ কংগ্রেসম্যানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান কার্ডিনাল আর্চবিশপের
৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বর্তমান সরকারের আমলে ‘নির্যাতিত’ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হয় তা প্রত্যাখ্যান করেন কার্ডিনাল আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও। ঢাকার সাবেক এ আর্চবিশপ কংগ্রেসম্যানদের আনীত অভিযোগ ‘অসত্য’ উল্লেখ করে বলেন, উগ্রপন্থিদের হাত থেকে রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে।
ডি রোজারিও বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে। চিঠিতে যা বলা হয়েছে, তার থেকে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। বর্তমান সরকারের অধীনে খ্রিষ্টানরা অনেক বিষয়ে সমর্থন পেয়েছে; বরং বলা ভালো যে, সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও অতীতে কিছু ঘটনা ঘটেছে; তবে এ সরকার আমাদের সম্প্রদায়কে রক্ষায় একটি নিষ্পত্তিমূলক অবস্থান নিয়েছে।’ তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়া আপনি কী অন্য কোনো কারণকে সন্দেহ করতে পারেন, যা এ ধরনের ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে পারে।’
মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে অসত্য তথ্য উল্লেখ করে সুপরিকল্পিত অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। সংগঠনটির আহবায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমের সূত্র থেকে জানতে পেরেছি যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে কয়েকজন মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে এবং হিন্দুরা এদেশে ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। এ সবই নাকি ঘটছে শেখ হাসিনার শাসনামলে।’
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর দেশব্যাপী পরিচালিত নির্যাতন ও বর্বরতার কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গিয়ে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর রাষ্ট্রীয় মদতে যে নৃশংস বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল, তা একাত্তরের ইতিহাসকেও হার মানায়। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান এবং নিজামী-মুজাহিদদের শাসনামলের ভয়াবহ ঘটনাবলীকে বর্তমান সময়কালের উল্লেখ করে ধূর্ততা ও চাতুর্যের সঙ্গে প্রচার করার অপচেষ্টা চলছে।’
কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে মিথ্যা ও বাস্তবতা বিবর্জিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সেকুলার সিটিজেন, বাংলাদেশ। কংগ্রেসম্যানদের মিথ্যা তথ্যের চিঠিতে আতঙ্কিত ও হতবাক হওয়ার কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
এছাড়া রানা দাশগুপ্তসহ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা এ চিঠির সমালোচনা করেন। চিঠিতে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিষয়ে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেন রানা দাশগুপ্ত। ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর হিন্দু জনসংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে’- চিঠিতে কংগ্রেসম্যানদের এমন দাবি নাকচ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ততই সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’
বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ
সম্প্রতি এমন বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত ও প্রতিবেদন সামনে এসেছে, যেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে বিএনপি লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করেছে বলে প্রমাণিত। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অসংখ্য রাজনীতিবিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছে বিএনপি ও তার আদর্শিক মিত্র কট্টর ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামী। পশ্চিমা এসব আইনপ্রণেতার কাছ থেকে রাজনৈতিক প্রভাব ও অনুগ্রহের বিনিময়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢালছে দল দুটি।
সম্প্রতি একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিএনপি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনকে লবিস্ট হিসেবে নিযুক্ত করেছে। মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে উৎখাত করে সেই জায়গায় বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে বাইডেন প্রশাসনের ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। আর পুরো ব্যাপারটির পরিচালনায় রয়েছেন তারেক রহমান।
প্রতিবেদন মতে, ব্লু স্টার স্ট্রাটেজিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী লবি ফার্ম। এই লবি ফার্মকে বিএনপি এবার ভাড়া করেছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য। এসব নিয়োগের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করতে হয়। আর এই টাকার উৎস কী, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রতিবেদন মতে, জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন এখন ব্লু স্টার লবিং ফার্মের পক্ষে কাজ করবেন। হান্টার বাইডেন কেবল বাইডেনের পুত্রই ন়ন, মার্কিন রাজনীতিতে তিনি অনেক প্রভাবশালী একজন লবিস্ট হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের যে লবিস্টদের সবচেয়ে উচ্চমূল্য, তার মধ্যে হান্টার বাইডেন অন্যতম। আর তার নিয়োগের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আরও বেশি প্ররোচিত করার কাজ সহজ হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির এই লবিস্ট ফার্ম গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। লবিস্ট ফার্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কাছে, বিশেষ করে হোয়াইট হাউস, সিনেট ও কংগ্রেসের প্রভাবশালী সদস্যদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশবিরোধী এই অপপ্রচারগুলোকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উত্থাপনের জন্য লবিস্ট ফার্মগুলো নানা রকম তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করে উপস্থাপন করে।
এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা ও হোয়াইট হাউসের নীতি নির্ধারকরা প্রভাবিত হন এবং তারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে বিএনপি নিয়োগকৃত এইসব লবিস্ট ফার্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বিএনপির কৌশলগত অবস্থান হলো- যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করা যায়, তাহলে সরকার চাপে পড়বে এবং বিএনপির সভা-সমাবেশে বাধা দেয়ার কাজটা সহজ হবে না। বিএনপির সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। কোটি কোটি ডলার খরচ করে র্যাবের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
এখন দ্বিতীয় ধাপে এই লবিস্ট ফার্মগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে- আগামী নির্বাচন যেন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়- এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটা অবস্থান নেয়ার জন্য।
এ নিয়ে বর্তমানে অন্তত চারটি লবিস্ট ফার্ম কাজ করছে। সর্বশেষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এই মুহূর্তে অন্যতম প্রভাবশালী লবিস্ট ফার্ম ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিক। আর ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিকের পক্ষে যদি হান্টার বাইডেন লবিং করেন, তাহলে এটি মার্কিন প্রভাবশালী মহলে ভালো প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আর এমনটি আশা করেই বিএনপি নেতারা তাদের পেছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছেন। এরই মধ্যে মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা বলেছেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক যেন হয়- সেটি নিশ্চিত করার জন্য সতর্কবাণী দিয়েছেন।
পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতিও ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বাংলাদেশের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে বিএনপি ও তার মিত্র জামায়াতে ইসলামী। নিউজ সময়