বুধবার, ০৫ জুলাই, ২০২৩
24 Nov 2024 06:56 am
২০১৮ সালে এই বিতর্কিত গবেষণার ধারণা প্রকাশ করার পর জিয়ানকুই প্রথম সম্পাদিত ভ্রুণের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন।
অবৈধ চিকিৎসা অনুশীলনের অভিযোগে জিয়ানকুই তিন বছর কারাভোগ করেছেন। গত বছর কারাগার থেকে বের হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবাক করে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, বেইজিংয়ে একটি গবেষণাগার চালু করছেন তিনি। এর পর থেকে তিনি জিন থেরাপির মাধ্যমে বিরল রোগের চিকিত্সার দিকে গবেষণা শুরু করেন।
জিয়ানকুইয়ের নতুন এই গবেষণা প্রস্তাব আবারও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার নতুন গবেষণা মূলত আগের কাজেরই প্রতিফলন। এর আগে তার গবেষণা মানুষের ডিএনএকে প্রভাবিত করার আশঙ্কাসহ অনৈতিক ও বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তার এই গবেষণা চললে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ডিএনএ প্রভাবিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
তার পুরো ব্যাপারটি হলো পাগলামি। নৈতিকতা বিবেচনার পাশাপাশি একটি জটিল রোগকে মোকাবিলা করতে ভ্রূণের জিন সম্পাদনা মানুষকে তাদের জীবনের শেষ দিকে প্রভাবিত করে। অথচ এর স্পষ্ট ও একক কোনো জেনেটিক কারণ নেই। এটি অত্যন্ত সন্দেহজনক।
পিটার দ্রোগ, সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক
একটি সংক্ষিপ্ত গবেষণা প্রস্তাবে জিয়ানকুই পরামর্শ দিয়েছিলেন, তার গবেষণায় ইঁদুরের সম্পাদিত জিন ও জাইগোট—মানব নিষিক্ত ডিম্বকোষের সঙ্গে রূপান্তর করে আলঝেইমার রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
চীনের এই গবেষক লিখেছেন, অধিক জনসংখ্যার এই দেশে মানুষ দ্রুত বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে। বয়স্ক জনসংখ্যা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। আর বর্তমানে আলঝেইমার রোগেরও কার্যকর কোনো ওষুধ নেই।
জিয়ানকুইয়ের সাম্প্রতিক প্রত্যাশিত পরীক্ষায় নিষিক্ত ডিম্বকোষ নারীর ওপর প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত নয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, গর্ভধারণের জন্য কোনো মানব ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হবে না এবং পরীক্ষার আগে সরকারি অনুমতি ও নৈতিক অনুমোদনের প্রয়োজন আছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জিয়ানকুইয়ের প্রস্তাবটি বৈজ্ঞানিকভাবে অসংলগ্ন। তার গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে চীন সরকার জিন সম্পাদনা ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত নৈতিক দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক পিটার দ্রোগ বলেছেন, ‘তার পুরো ব্যাপারটি হলো পাগলামি। নৈতিকতা বিবেচনার পাশাপাশি একটি জটিল রোগকে মোকাবিলা করতে ভ্রূণের জিন সম্পাদনা মানুষকে তাদের জীবনের শেষ দিকে প্রভাবিত করে। অথচ এর স্পষ্ট ও একক কোনো জেনেটিক কারণ নেই। এটি অত্যন্ত সন্দেহজনক।’
পিটার দ্রোগ আরো বলেন, ‘তিনি (জিয়ানকুই) মূলত জিনগতভাবে মানব প্রজাতিকে পরিবর্তন করতে চান। যেন মানুষ আলঝেইমারে না আক্রান্ত হন। আমি সত্যিই অবাক হয়েছি, তিনি আবার এ বিষয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছেন।’
ব্রিটেনের কেন্ট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর গ্লোবাল সায়েন্স অ্যান্ড এপিস্টেমিক জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জয় ঝাং বলেছেন, প্রস্তাবটি ‘প্রমাণিত গবেষণা এজেন্ডার চেয়ে একটি প্রচারমুখী স্ট্যান্ট বলে মনে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমাদের এসব দাবিকে সতর্কতার সঙ্গে নেয়া দরকার। কারণ, এসব দাবি রোগী ও তাদের পরিবারকে যেন বিপথগামী করতে না পারে। এ ছাড়া শুধু চীনের বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, এসব বিষয় বিশ্বব্যাপী গবেষণা প্রচেষ্টায় প্রভাব ফেলতে পারে।’
জিয়ানকুই বলেন, তিনি এখন বিজ্ঞানী ও জৈব নীতিবিদদের (বায়োএথিসিস্ট) কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করছেন। এসব অধ্যয়নের সময়সীমা নেই। তিনি বলেন, ‘আমি পরে আলঝেইমার রোগের প্রস্তাবের একটি সংশোধন করব। সরকারি অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জৈব-নীতিবিদদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নীতিশাস্ত্র কমিটির অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত এসব করব না।’
জিয়ানকুই আরো বলেন, ‘জোর দিয়ে বলতে চাই, এটি একটি প্রাক-ক্লিনিক্যাল গবেষণা। এই গবেষণায় গর্ভধারণের জন্য কোনো ভ্রূণ ব্যবহার করা হবে না। গবেষণাটি উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ হবে। সব পরীক্ষার ফলাফল ও অগ্রগতি টুইটারে পোস্ট করা হবে।’