শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩
25 Nov 2024 09:57 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ-বৃদ্ধা জোবেদা বেওয়া (৮১)। তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দেল্লা গ্রামে। এই গ্রামের ঘুনু শেখের স্ত্রী। নিজের কোনো জমিজমা না থাকায় একই গ্রামের কৃষক হায়দার আলীর জমির রাস্তার ধারে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। প্রায় দুইযুগ ধরে এখানে থাকেন তিনি।
গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার গো-হাটি পাড়ার মৃত আবু বক্করের স্ত্রী আমেনা বেওয়া (৬৮)। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে শাহিনুর রহমানের পুকুর পারে একটি ভাঙা ঘরে ২৫ বছর ধরে বাস করছেন। একই মহল্লার মৃত সাদা মিয়ার স্ত্রী রাহেনা বেওয়া (৬৫)। তিনি মকবুল মিয়ার পুকুর পারে ছোট্ট একটি কুঠরি ঘর তুলে ২৩ বছর ধরে আছেন। আরজি খলসি গ্রামের মৃত মেহের আলীর ছেলে আব্দুর রহমান (৭০)। পাশের জরিপপুর গ্রামের ইউনুছ আলীর বাড়িতে ৩৫ বছর ধরে আশ্রয় নিয়েছেন। গোবিন্দপুর মহল্লার মৃত বসু দেবের ছেলে শ্রী সুকমল চন্দ্র দাস কানু (৭৪)। তিনি উপজেলা হাসপাতাল সংলগ্ন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালজার রহমানের বাড়িসহ বিভিন্ন ভাড়া বাসায় যুগযুগ ধরে আছেন।এছাড়া কাটাবাড়ী বেগুনবাড়ী গ্রামের মৃত মাজেদুল্লাহের ছেলে একাব্বর আলী (৭০)। তিনি কুঠারপাড়া গ্রামের ডা. আব্দুল বাকী সরকারের বাড়ির উঠানে আশ্রিত। শালমারা গ্রামের মৃত মোসলেম মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (৫৬)। ওই গ্রামের সোহান মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ছেন। উল্লেখিত ব্যক্তিদের কারোই নেই জায়গা-জমি। সবাই অন্যের ভূমিতে বসবাস করে চলেছেন।
জোবেদা, আমেনা, রাহেনা ও আব্দুর রহমান এছাড়া এমন আরও অনেকে রয়েছেন। সবাই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। অধিকাংশ বৃদ্ধার স্বামী মারা গেছেন। এসব ব্যক্তির কারোই নেই নিজস্ব জায়গা-জমি। অন্যের ভূমিতে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস। জরাজীর্ণ এসব ঘরে তাদের নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকাঘরে বসবাসের ইচ্ছে থাকলেও জোটেনি তাদের কপালে!
শুধু তারাই নয়, এরকম অসংখ্য ভূমি-গৃহহীন মানুষ ওই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অন্যের জমিতে পরিবার-পরিজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। ছিন্নমূল এসব মানুষগুলো ভিক্ষাবৃত্তিসহ অন্যান্য পেশায় কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ইতোমধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমি-গৃহ দেওয়া হলেও তারা বঞ্চিত হয়েছে এই প্রকল্প থেকে।
ওইসব ভূমি-গৃহহীন ব্যক্তিরা বলেন, শেখের বেটি ভূমিহীনদের জন্য জমি ও ঘর দিচ্ছে। তাই খাসজমিতে ঘর দিয়ে আমাদের পূর্ণবাসন করা হোক। যাতে দিন শেষে সেই ঘরে রাতে বিশ্রামের স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে ভূমিহীন নেতা ও উপজেলা ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি এমএ মতিন মোল্লা সংবাদকর্মীদের বলেন, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্প্রতি এই উপজেলাকে গৃহ-ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনো অনেকে ভূমি-গৃহহীন আছেন। এরই মধ্যে প্রশাসন কর্তৃক ভূমিহীনের তালিকা চেয়েছিলেন তা জমা দেওয়া হয়। এসব বাস্তবায়নে অচিরেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভূমিহীনের তালিকা উপজেলায় এসেছে। তা যাছাই-বাছাই করে দেখা হবে।