মঙ্গলবার, ০৯ মে, ২০২৩
30 Nov 2024 10:46 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ- দিনমজুর পরিবারের রমজান আলী। এক বোন ও দুই ভাইয়রে মধ্যে সবার বড়। পড়ছিল দশম শ্রেণিতে। চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতো। কিন্তু এই পরীক্ষার ফরম পূরণের আগেই ভ্যানচালক বাবা রফিকুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি সার্বক্ষণিক বিছানায় থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করতে হয় সবাইকে। এরই একপর্যায়ে মারা যান রফিকুল। পরিবারে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। বাধ্য হয়ে স্কুলের বই-খাতা ছেড়ে রমজান আলী ধরেছে ভ্যানের হ্যান্ডেল। এ গাড়িটি চালিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে এই শিশুকে।
জীবনের এই করুণ গল্পের রমজান আলীর বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়া কথা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে কাঁধে তার সংসারের হাল। এখন মা-ভাই-বোনের অন্ন যোগাতে ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন সড়কে।স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন ভ্যানচালক ছিলেন। তার দাদী, স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়েসহ ৬ সদস্যের সংসার। নিজের সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই। পরিবার নিয়ে থাকতেন স্বজনদের বাড়িতে। ছেলে রমজান আলী দশম শ্রেণি, রহমত আলী চতুর্থ শ্রেণি ও মেয়ে রনজিনা খাতুন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। এই সংসারে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বেড়ে যায় ঋণের বোঝা। এ ঘানি টানতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয় পরিবারটির। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটে রফিকুলের। এরই ধারাবাহিকতায় দেড় মাস আগে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা গেছেন রফিকুল। এখন বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরে শিশু রমজান আলী। নিয়েছে বাবার সেই পেশা। সারাদিন রিকশাভ্যান চালিয়ে যেটুকু রোজগার হয় তায় দিয়ে কোনোমতে চলছে ৫ সদস্যের সংসার। পাশাপাশি রমজানের মা রওশন আরা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করছেন। এই রমজান আলী অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিগুলোতে ভালো ফলাফল তার। এখন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পারছে না স্কুলে যেতে। দরিদ্র বাবার সংসারের ভার নিয়ে বন্ধ হয়েছে তার লেখাপড়া।
রমজান আলী বলে, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে দরিদ্র বাবার মুখে হাসি ফুটাবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন আমার ভেঙে চুড়মাড় হয়ে গেছে। এসএসসি ফরম পূরণের আগে বন্ধ হয়েছে স্কুলে যাওয়া। বাবার দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর মুত্যুর কারণে লেখাপড়া বাদ দিয়ে রিকশাভ্যান চালাচ্ছি। তবে বয়স কম হওয়ায় আমার গাড়িতে কোনো যাত্রী কিংবা মালামাল বহন করতে চায় না অনেকে। তবুও অতি কষ্টে যেটুকু ভাড়া পাই তায় দিয়ে কোনোমতে চলছে সংসার। আর নিত্যপণ্যের দাম বেশি হওয়া টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রমজান আলীর মা রওশন আরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের ৫ সদস্যের সংসার। অবুঝ শিশু রমজানের উপার্জনে সংসার চলছে না। এখন আমরা কীভাবে বাঁচবো।
স্থানীয় ব্যক্তি একরামুল হোসেন বলেন, মৃত রফিকুলের পরিবারটির একদম নাজুক পরিস্থিতি। মেধাবী শিশুশিক্ষার্থী রমজান আলী তার লেখাপড়া ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ভ্যান চালাচ্ছে। কিন্তু এ রোজগার দিয়ে তো এই সংসারটি চালানো সম্ভব নয়। ফলে রওশন আরা বেগমের একটি বিধবা ভাতা কার্ড দেওয়াসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান শুভ (কাওছার মণ্ডল) জানান, মৃত রফিকুলের পরিবারের বিষয়টি অবগত আছেন। পরিষদের পক্ষ তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।