মঙ্গলবার, ০৯ মে, ২০২৩
30 Nov 2024 10:30 pm
খোকন হাওলাদার, গৌরনদী(বরিশাল)প্রতিনিধিঃ- আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নৌকা মার্কার সমর্থনে এলাকাবাসীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় ও মিছিল করায় এক ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতাকে পিস্তল ও রামদা ঠেকিয়ে প্রাননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী রইস আহম্মেদ মান্নাসহ ১৭ জন নামোল্লেক করে আরও অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে নগরীর কাউনিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে সাধারণ ডায়েরী করার কথা স্বীকার করে কাউনিয়া থানার ওসি আবদুর রহমান মুকুল বলেন, অভিযোগের তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্রমতে, জিডিতে অন্য অভিযুক্তরা হলো-ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মান্নার ভাই রিসাদ আহমেদ, সহযোগি মিঠু, ফয়সাল বিন জাবেদ, রাজু, মুরাদ, ইমরান হোসেন সজীব, কসাই মামুন, সম্পদ, রনি, বেল্লাল, সবুজ, ধলু সুমন, নগেন সুভ, বাবলু ও বড় রনি।
থানায় সাধারণ ডায়েরী করা নগরীর ২ নাম্বার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কর্মী ও জানুকি সিংহ রোডের বাসিন্দা মো. কাওছার শেখের ছেলে শেখ মো. সোহাগ জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে ২ নাম্বার ওয়ার্ডসহ কাউনিয়া এলাকার কেউ প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারনা করতে সাহস পায়না। মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান মেয়র সাদিক অনুসারী রইস আহম্মেদ মান্নার ভয়ে এলাকাবাসী নৌকার প্রার্থীর সাথে অতিগোপনে যোগাযোগ যোগাযোগ রেখে প্রচারনা চালাতো। সোহাগ আরও বলেন, সকল বাঁধা ও ভয়কে জয় করে গত ৫ মে বিকেলে আমি ছাত্রলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী ও নৌকার সমর্থক এলাকাবাসীকে নিয়ে জানুকি সিংহ রোড এলাকায় প্রথম প্রকাশ্যে নৌকার সমর্থনে প্রচার-প্রচারনা নামি। এমনকি ওইদিন নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে মিছিল করা হয়। এতে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মান্না চরমভাবে ক্ষুব্দ হয়।
শেখ মো. সোহাগ অভিযোগ করে বলেন, নৌকার সমর্থনে সাংগঠনিক কাজ শেষ করে গত ৬ মে দিবাগত রাতে সঙ্গী সজিবুর রহমান ও সোহেল হাওলাদারকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথিমধ্যে জানুকিং সিংহ রোডের ভূঁইয়া বাড়ি সংলগ্ন এলাকার পৌঁছলে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মান্নার নেতৃত্বে তার ৩০/৩৫ জন সহযোগিরা এসে আমাদের ঘিরে ধরে। তারা আমার ঘাড়ের ওপর রামদা ধরে এবং মান্না পিস্তল উঁচিয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা হলে আমাকে হত্যা করা হবে।
অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্না বলেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমি ২ নাম্বার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হবার জন্য মৌখিকভাবে ঘোষনা দিয়েছি। এতেই স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি আমাকে হয়রানীর করার জন্য সোহাগকে ব্যবহার করে থানায় অভিযোগ দায়ের করিয়েছে।
সূত্রমতে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে রইস আহম্মেদ মান্নাকে আহ্বায়ক করে তিনমাসের কমিটির অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু এখনও সেই কমিটি বহাল রয়েছে। অপরদিকে গত ৬ মে সন্ধ্যায় শেবাচিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক অর্নব ও পঞ্চম বর্ষের ছাত্র হৃদয় নৌকা মার্কার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর ছবি ফেসবুকে আপলোড করে। এতে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মান্নার ভাই গণপূর্তের ঠিকাদার রিসাদ আহমেদ ক্ষিপ্ত হয়ে অর্নব ও হৃদয়কে ক্যাম্পাস থেকে বিতারিত এবং হলের সিট বরাদ্ধ বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে।
জাকের পার্টির প্রার্থী ঘোষণা ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাকের পার্টির গোলাপ ফুল মার্কার মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও দলের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদেও অংশগ্রহণ করা হবে। পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দারের উপস্থিতিতে বরিশাল মহানগর নেতৃবৃন্দের মতামতের উপর ভিত্তি করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পার্টির মহানগর সভাপতি আলহাজ মো. মিজানুর রহমান বাচ্চুকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়। সোমবার সকালে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জাকের পার্টি বিভাগীয় কমিটির সদস্য নাজমুল হক মুন্না।
বিএনপির সাপোর্ট চাচ্ছেন হাতপাখার প্রার্থী ॥ নির্বাচনের দিন যতই সামনে গড়াচ্ছে, ততই নাটকীয় ভঙ্গিতে এগুচ্ছে বরিশালের রাজনীতির মাঠ। একদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে দুই ভাইয়ের (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি ও নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত) ঠান্ডা মাথার লড়াই, অন্যদিকে বরিশালে বিএনপির ঘাঁটি হলেও সেখানে এবার প্রার্থী না দেওয়া নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপি এ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেনা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একইসাথে ৭ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হওয়ার পর নগরীজুড়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিসিসি নির্বাচনে চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের মেয়ের বিয়েতে যোগ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জেষ্ঠ কয়েকজন নেতা। ঢাকার একটি অভিযাত ক্লাবে ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতারাও যোগ দিয়েছিলেন। তবে বিএনপি নেতারা ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে চরমোনাই পীরের দলের একাধিক নেতার সাথে মতবিনিময় করেছেন।
এ সময় বরিশাল সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে চরমোনাই পীরের ভাই ও মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করীম নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিবের কাছে দোয়া ও সমর্থন চান। বিএনপির মহাসচিব কোন উত্তর না দিলেও অনান্য নেতারা বলেন, আমরাতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছিনা। তবে সমর্থকরা ভোট দেবে নিশ্চয়ই ভালো কাউকে সমর্থন দিবো।
সূত্রমতে, ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস উপস্থিত হয়ে বিএনপির মহাসচিবের সাথে করমর্দন করলেও ততটা খোলামেলা কথা বলেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি সিটি নির্বাচনে জোর না দিলেও সামনে আগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে ইসলামি আন্দোলনকে পাশে পেতে তাদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। সে অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারী মাসে চরমোনাই পীরের বার্ষিক মাহফিলেও দলের প্রতিনিধি এসেছিলো। সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে অত্যন্ত সু-কৌশলে বিএনপি তাদের বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে এবং আওয়ামী লীগের একাংশের কর্মী সমর্থকরা চরমোনাই পীরকে গোপনে সমর্থন দিতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তবে ওই বিয়েতে উপস্থিত বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, সামাজিকতা ও সুসম্পর্ক থেকে আমি কিংবা আমাদের দলের সিনিয়র নেতারা বিয়ের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এখানে রাজনৈতিক কোন স্বার্থ নেই।