বৃহস্পতিবার, ০৪ মে, ২০২৩
30 Nov 2024 10:30 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ- নানা সমস্যায় জর্জরিত গাইবান্ধা জেলা সদরের ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। আছে অনিয়ম দুর্নীতি ও ওষুধ সংকট। ২৭ লাখ জনপদের এ হাসপাতালে নেই আইসিইউ। হার্টের রোগী গেলেই করা হয় রেফার্ড। খাবার দেওয়া হয় নিম্নমানের। মোটা অংকের টাকা না দিলে মর্গ থেকে লাশ বের হয় না।
আধুনিক যন্ত্রপাতি, ডাক্তার, নার্সসহ জনবল সংকট দীর্ঘদিনের। ফলে চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ২৭ লাখ মানুষ। হাসপাতালের দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে গাইবান্ধায় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ মানববন্ধন করেছে।
গাইবান্ধা নাগরিক সংগ্রাম পরিষদের নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম মিঠু জানান, জরুরি বিভাগে মিনিটে মিনিটে গুনতে হয় টাকা। সেলাই করা, সেলাইয়ের জন্য সুতা কিনতে হয় ৫-৭শ টাকায়। মোটা অংকের টাকা না গুনলে প্লাস্টার করে দেওয়া হয় না। যেখানেই যাবেন দালালরাই সব করে দেবে। মর্গে ময়নাতদন্তের পর ডোম ও বহনকারীদের নগদ টাকা না দিলে পচে গেলেও লাশ বের হয় না।
এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। সে কারণে সামান্য কোনো রোগ নিয়ে এলেও রোগীকে রেফার্ড করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে নেই কোনো আইসিইউ ইউনিট। ফলে হার্টের কোনো রোগী এলে হয় মরতে হয়, না হয় রংপুরে যাওয়ার পথে রাস্তায় জীবন নিভে যায় সেই রোগীর। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে দুটি ভেন্টিলেটর মেশিন থাকলেও সেগুলো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে চালু করা হচ্ছে না। ফলে মূল্যবান মেশিনগুলো যেমন নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নানান অভিযোগ। বিজলী বাতি নেই বললেই চলে। গোটা হাসপাতালের রোগীদের ওয়ার্ডজুড়ে মাত্র কয়েকটি বাল্ব জালানো হয়। ফলে অন্ধকারে ডুবে থাকে হাসপাতালের অধিকাংশ ওয়ার্ড। আর যদি বিদ্যুৎ চলে যায় তাহলে ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয় হাসপাতাল। হাসপাতালের নিজস্ব জেনারেটর থাকলেও তা ব্যবহার করা হয় না।
খাবার মান নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। একেবারে ভালো নয়। রোগীদের দেয়া হয় নিম্নমানের পাউরুটি, কলা, ডিম, দুধ, ভাত ও তরকারি। দুধের অবস্থা যেন সাদা পানি। আর ডিম কলা দেখলে মনে হবে কোথাও থেকে বিনা পয়সায় নিয়ে আসা হয়েছে। বেকায়দায় না পড়লে কোনো রোগী হাসপাতালের খাবার খায় না।
সিপিবি কেন্দ্রীয় নেতা মিহির ঘোষ বলেন, অনেক রোগী তার আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে হাসপাতালে খাচ্ছেন। হাসপাতালজুড়ে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন। চারপাশে ময়লার স্তূপ জমে থাকলেও তাদের চোখে পড়ে না। পানি ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার বেহাল দশা। করনাকালীন হাত ধোয়ার জন্য হাসপাতাল চত্বরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়। সেটি এখন হয়েছে অপরিষ্কার পানির হাউস। রোগীদের স্বজনরা কোথাও পানি না পেয়ে ওই হাউসেই কাপড় কাচা থেকে শুরু করে খাবার পানি পর্যন্ত সংগ্রহ করেন।
হাসপাতালের আরএমও ডা. বিশ্বেশ্বর চন্দ্র বর্মণ জানান, হাসপাতালটি ২৫০ বেড ঘোষণা দিলেও জনবল বাড়ানো হয়নি। ৪২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১৮ জন ডাক্তার দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, মেডিসিন, ইএনটি, চক্ষু, কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌন রোগ, সার্জারিসহ বিভিন্ন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এখানে দুটি এক্সরে মেশিন থাকলেও একটি বিকল অপরটিতে রেডিওলজিস্টের অভাবে কাজ হয় না। গাইবান্ধা পৌরসভা একটি ইসিজি মেশিন প্রদান করেছে। কিন্তু সেটি চালাবার স্থায়ী কোনো জনবল না থাকায় বিভিন্ন সময় রোগীদের বাইরের ক্লিনিক থেকে হাসপাতালে ইসিজি মেশিন নিয়ে এসে পরীক্ষা করাতে হয়।
আরএমও ডা. বিশ্বেশ্বর চন্দ্র বর্মণ জানান, ক্লিনারের পদ ১৫ জনের থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র চারজন। হাসপাতালের বিভিন্ন পদে ১৮৭ জন কর্মচারী থাকার কথা; কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬৫ জন। ফলে প্রশাসনিক এবং অন্যান্য দাপ্তরিক কাজকর্ম সঠিকভাবে হচ্ছে না।
টাকা না দিলে মর্গ থেকে লাশ বের হয় না- এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন থেকে খোঁজ নেওয়া হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবল সংকটসহ নানা অসুবিধার মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। সীমিত সংকট চিকিৎসক রোগীর সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন।