মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩
24 Nov 2024 02:43 am
সোমবার (২৪ এপ্রিল) শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। টানা দুবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে একই দিন বঙ্গভবন ছাড়লেন মো. আবদুল হামিদ। তার সরলতা এবং সহজ-স্বাভাবিক আচরণের জন্য দেশের মানুষ তাকে বেশ পছন্দ করেন।
দেশে যখন কোনো নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন মানুষের মধ্যে একটা বড় রকমের প্রত্যাশা তৈরি হয়। তারা মূলত রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে রাজনৈতিক ভূমিকাই আশা করেন, যদিও বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রপতির ভূমিকা খুবই সীমিত। একেবারেই আনুষ্ঠানিক।
বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ। এখানে প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান আর রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মূলত দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন বিভিন্ন পর্যায়ে, প্রধানত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। নিয়োগের ক্ষেত্রে তার একটা বড় ভূমিকা আছে। তবে প্রকৃত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর। কারণ, তিনি সরকারপ্রধান। সুতরাং প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে রাষ্ট্রপতির কার্যকারিতা নির্ভর করে বাংলাদেশের জনগণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের পাশাপাশি সেই সময়ের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর। তা ছাড়া দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতাসীন দলের মূল্যবোধ এবং নাগরিকদের নির্দিষ্ট উদ্বেগের মতো অনেক বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে অনেক কিছু।
সংসদীয় গণতন্ত্রে যা আশা করা যায়
সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত্যাশা হলো তিনি দেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখবেন এবং সরকার তার আইনি সীমার মধ্যে কাজ করছে তা নিশ্চিত করবেন। রাষ্ট্রপতি হলেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং সম্প্রীতি বাড়াতে কাজ করবেন—সে প্রত্যাশাই করা হয় সংবিধান অনুযায়ী। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং দেশের জন্য বিশ্বদূত হিসেবে কাজ করবেন।
সংবিধান অনুযায়ী এ-ও আশা করা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশবাসীকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে উৎসাহিত করবেন এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য বৃহত্তর সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে এমন নীতি প্রচার করবেন।
রাষ্ট্রপতি গণতন্ত্রের সুরক্ষায় এবং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রচারে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এবং সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দলের, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশনা ও পরামর্শ দেবেন বলে আশা করা হয়।
অগ্রসরমান বাংলাদেশ
অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করার চেষ্টা করছে। দেশে ১৯৯১ সাল থেকে নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশে সবশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ব্যাপক বিজয় লাভ করে।
স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ তার গণতন্ত্রকে সুসংহত করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করলেও দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা নিয়ে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর এর পেছনে যে কারণগুলো কাজ করছে:
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, গত এক দশকে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির প্রায় ৭ শতাংশ। দেশের মাথাপিছু জিডিপিও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দারিদ্র্য হ্রাস: বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। দারিদ্র্যের হার ১৯৯০-এর দশকের ৫০ শতাংশ থেকে নেমে ২০২০-এ তা প্রায় ২০ শতাংশতে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং শিক্ষায় বিনিয়োগসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এ অর্জনটা এসেছে। স্বাস্থ্যখাতেও উল্লেখযোগ্য অর্জন আছে বাংলাদেশের।
নারীর ক্ষমতায়ন: নারীর ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এখন নারীরা রাজনীতি, ব্যবসা এবং সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে। দেশে মাতৃমৃত্যুও কমেছে বেশ।
দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা: বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশর বড় অর্জন ও স্বীকৃতি রয়েছে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি উন্নয়নশীল দেশ, যার জনসংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশি। দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি, যার গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি। পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী খাত, রফতানিতে যার অবদান ৪০ শতাংশেরও বেশি। তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জ্বালানির মতো খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিতে বেশ বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, বাংলাদেশের সম্ভাবনাগুলো যেমন: অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখা, অবকাঠামোর উন্নতি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং কার্যকর শাসন দেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখবেন, তা বোঝার সময় হয়নি। তিনি এখনও কোনো বক্তব্য দেননি কোথাও। শুধু নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছা। এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।’
তবে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মানুষের হৃদয়ে নতুন করে জায়গা করে নিয়েছেন আজকের দিনের অকৃত্রিম কথাবার্তা দিয়ে। ‘আমি এখন মুক্ত, আবার সাধারণ মানুষের কাতারে’, তিনি বললেন বঙ্গভবন ছাড়ার পর। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ছেড়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি।
খুবই সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত আবদুল হামিদ সবসময় মেতে ছিলেন দলের নেতাকর্মী ও নিজ নির্বাচনী এলাকার হাওড়ের সাধারণ মানুষকে নিয়ে। এখন তা ফিরে পেতে চান তিনি। সেটাই তার আকুলি-বিকুলি।
আমরা সবাই আশা করি, আমাদের নতুন রাষ্ট্রপতিও এগিয়ে আসবেন দু-হাতে নতুন বাতি নিয়ে, যাতে আলোটা পৌঁছে যায় ঠিক সেই জাগায়, যেখানে তা বেশি দরকার। দেশের মানুষ মনে হয় তা-ই চায়। অপেক্ষা তো করাই যায়।নিউজ সময়