শনিবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৩
29 Nov 2024 04:49 am
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কুমারপাড়া চরের ছকিনা বেগম। ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে। ১৮ বছর বয়সে ২ সন্তানের মা। ২ সন্তানের সেবাযত্নের কারণে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন খেয়াল রাখার সময় নেই ছকিনা বেগমের। আবার অভাব- অনটনের সংসারে পুষ্টিকর খাবার যোগার করার সামর্থ্যও নেই তার। এদিকে, কোন খাদ্যে কোন ধরণের গুণাগুণ আছে সে বিষয়েও ছকিনা বেগমের ধারণা নেই।
একটি তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের চিন্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী বৌধিত গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার প্রায় ৮ হাজার শিশু পুষ্টিহীনতার মধ্যে চরম মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। আর পুষ্টিহীনতার মধ্যে রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু অর্থাৎ ৫ লাখ শিশু। প্রতিবছর গড়ে এই পাঁচ জেলা থেকে প্রায় ২ শতাধিক মা ও ৩ শতাধিক শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে। করোনা মহামারির কারণে এই সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে ইউনিসেফ এর একটি গবেষণায় জানা গেছে।
কোন শিশু পুষ্টিহীনভাবে বেড়ে উঠছে, এ বিষয়ে নদী ও চরাঞ্চলের মানুষজনের যেমন ধারণা নেই। পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয়ের সাধ্যও নেই তাদের। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী গ্রামের নুর আলম জানান, সন্তান তো বড় হচ্ছে। এখানে পুষ্টি আবার কিসের? তিনি বলেন, পেট ভরে খেতে দিতে পারলেই হয়। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শাকসবজি ক্রয় করা মুশকিল হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান। একই গ্রামের আলী আজম বলেন, গত একবছরে মাত্র একবার মাংস কিনে খেয়েছি, এরপর আর সাধ্য হয়নি। মাংস কেনার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া চরের ছামছুল হক ও শিশুদের। প্রামানিক। তার ৪ সন্তান। একজনের আয়ে চলে পুরো পরিবারের ব্যয়ভার। সন্তানদের দেখেই মনে হয় অসুস্থতা ও আর পুষ্টিহীনতায় বেড়ে উঠছে।
অভাবে উত্তর জনপদের মা ও শিশুরা পুষ্টিহীনতা নিয়ে বড় হচ্ছে। এজন্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের উচিৎ বেশি বেশি সচেতনতামূলক পৌঁছানো। তবে পুষ্টি নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা কথা জানান তিনি। জেলা স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, পুষ্টি ও শিক্ষ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। তবে মানুষজনের মধ্যে প্রথাগত ধারণা পরিবর্তন না হওয়ায় পুষ্টিহীন শিশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে না। এজন্য তিনি পরিবারের সকল সদস্যকে সচেতন হওয়ার আহ্বান করেন। ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা রফিকুজ্জামান রফিক জানান, পুষ্টিহীন মা ও শিশুর জন্য প্রতিটি হাসপাতালে পৃথক চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। এখানে মান ও শিশুদের বিশেষ ব্যবস্থা চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে মানুষজন খুব বেশি ঝুঁকিতে না পড়লে পুষ্টিহীনতার জন্য ভর্তি হতে চায় না তিনি জানান, সন্তানদের রোগব্যাধি লেগেই থাকে। খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অবাক হয়ে বলেন, পেট ভরে খেলেই তো পুষ্টি হয়। সেটিই তো পাচ্ছি না। সদর উপজেলার কুন্দেরপাড়া চরের ছাবিনা বলে তিনি জানান। বেগম বলেন, পুষ্টি না থাকায় অল্প এদিকে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. বয়সে চরের নারীরা বুড়ি হয়। চেহেরায় লাবন্যতা থাকে না। নানা ধরণের রোগব্যাধিতে ভুগতে হয় নারী
এ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান জানান, প্রতিনিয়ত দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি, দারিদ্রতা, পুষ্টিজ্ঞানের নেওয়ার আহ্বান করেন।
আইনুন নিশাত জানান, বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনে ফলে অপুষ্টিতে থাকা মা অপুষ্টি শিশু জন্মদান করছে। তিনি বলেন, একটি জাতির উন্নয়নে সুস্থ-সবল দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ খুবই প্রয়োজন।