সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
21 Nov 2024 04:27 pm
মহান আল্লাহ তায়ালা বছরের বিভিন্ন মৌসুমকে বিভিন্ন ফসলের জন্য অপেক্ষাকৃত উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। যদি সেই নির্দিষ্ট মৌসুমে তার উপযোগী ফসলের চাষ করা হয় তবে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তেমনি করে বছরের কোন কোন মাস ও তার দিবা রাত্রিকেও তিনি ইবাদতের জন্যে বিশেষভাবে বরকতময় ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে রেখেছেন।
এ সকল বরকতময় সময়গুলোতে সামান্য মেহনত করে যে বিশাল প্রতিদানের অধিকারী হওয়া সম্ভব, তা অন্য সময়ে অধিক মেহনত করেও অর্জন করা সম্ভব নয়। এই ধরনের বরকতময় সময়গুলোর মধ্য হতে পবিত্র রমজান সর্বশ্রেষ্ঠ। হযরত উবায়দা ইবনে সামেত (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসের ফজিলত ও তার গুরুত্ব বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের বলেন, রমজান একটি বরকতের মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দিকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং তোমাদের উপর খাস রহমত অবতীর্ণ করেন। তিনি তোমাদের গুনাসমূহ ক্ষমা করে দেন। তোমদের দোয়া কবুল করেন। আর তাঁকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে তোমরা নেক কাজ করার জন্য যে প্রতিযোগিতা করে থাক তিনি আনন্দের সাথে তা দেখে থাকেন, আল্লাহ তার ফেরেশতাদের সাথে তোমাদের বিষয়ে গৌরব করে থাকেন।
ফেরেশতারা মানুষকে সৃষ্টি করার প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছিলেন। তাই আল্লাহ পাক মানুষের নেক কাজের প্রতিযোগিতা দেখায়ে ফেরেশতাদের সম্মুখে গৌরব করেন। অতপর মহানবী (সাঃ) বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহ পাককে নিজ নিজ নেকী দেখাও। জেনে রাখ, সে ব্যক্তি বড়ই হতভাগ্য, যে ব্যক্তি এ পবিত্র মাসে আল্লাহ তায়ালার রহমত হতে বঞ্চিত থাকে। (তারগীব)
পবিত্র রমজান মাস খুবই ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের যে কোন ইবাদতের ছওয়াব অন্যান্য মাসের অপেক্ষা ৭০ গুণ বেশী। এ মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছেন, যা মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক, আর এর মধ্যেই হক্ক ও বাতিলের স্পষ্ট দলিল রয়েছে। রমজানের প্রতিটি নফল ইবাদতের মর্যাদা ফরজের সমতুল্য। এ মাসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মুহম্মদী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রোজাকে ফরজ করেছেন।
এ মাসের এমন একটি রাত আছে যে রাত হাজার মাসের চেয়েও অতি উত্তম রাত বলে মহান আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন। হাদীসে কুদসীতে এরশাদ হচ্ছে “ক্বালাল্লাহু তায়ালা আচ্ছাওমুলী ওয়া আনা আজযীবিহী”
অর্থঃ আল্লাহ পাক এরশাদ করেন রোজা শুধুমাত্র আমারই সন্তুষ্টির জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান প্রদান করব। শুধুমাত্র কোরআন শরীফই এ মাসে অবতীর্ণ হয়নি বরং এর পূর্বের অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহ এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন আমার উম্মতকে রমজান মাসে এরূপ পাঁচটি খাস নেয়ামত দান করা হয়েছে, যা পূর্বের কোন উম্মতকে দান করা হয়নি। সে নিয়ামতগুলো হচ্ছে,
(১) রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মেশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধি বলে বিবেচিত।
(২) রোজাদারের জন্যে পানির মাছ ও গর্তের পিপিড়িকাসহ সকল মাগলুকাত আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।
(৩) রমজান মাসে প্রতিদিন নতুন নতুন সাজে বেহেশতকে সাজানো হয়, রোজাদার নেক্কার বান্দাদের জন্যে।
(৪) রমজান মাসে শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়। যার কারণে এ মাসে পাপের মাত্রা কমে যায়।
(৫) এ মাসের শেষ রাতে নেক্কার রোজাদার বান্দাদের দোযখ থেকে মুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়।
ফলে বলা যায় যে, রমজান মাস খুবই পবিত্র ও বরকতময়। এই মাসের পবিত্রতা রক্ষায় গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যথাঃ
(১) মহান আল্লাহর প্রতি প্রত্যেক মুসলমানের ভালবাসা ও ভক্তি রয়েছে। গণমাধ্যম তার প্রচারণার মাধ্যমে এই সকল মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি অধিক মনোযোগি করে তুলতে পারে।
(২) রমজান মাসে অশ্লীল বিজ্ঞাপন ও ইসলাম পরিপন্থী অনুষ্ঠান প্রচার না করে ইসলামী অনুষ্ঠানাদি গণমাধ্যম প্রচার করে তারাও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।
(৩) রমজানের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
(৪) গণমাধ্যম রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কীত প্রতিবেদন/ অনুষ্ঠান অধিক প্রকাশ ও প্রচার করতে পারে ফলে এতে ইবাদতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
(৫) সকল প্রকার অশ্লীলতার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
(৬) ইফতার, সেহেরীসহ রমজান মাসে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণে গণমাধ্যম মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারে। রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে মানুষের মধ্যে যেমন আমলের আগ্রহ বৃদ্ধি পায় তেমনি সরকার ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কে গড়ে তুলতে এমনকি যে কোন বিষয়ে জনগণের মতামত তেরীতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে বলা যায় রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী।
লেখক পরিচিতি ঃ
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, গবেষক, কলাম লেখক ও সংগঠক)
সভাপতি, টেপিরবাড়ী জামে মসজিদ, শ্রীপুর, গাজীপুর।
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি