শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩
23 Nov 2024 03:08 pm
বিভিন্ন অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হলে ড. ইউনূস নিজ অনুসারী ও পশ্চিমা লবি ব্যবহার করে নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে প্রচারণা চালান। তবে এসব প্রচারণা মিথ্যা বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
সবশেষ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নতুন কৌশল ব্যবহার করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। যা গেল ৭ মার্চ মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞাপনকে খবর আকারেও প্রকাশ করেছে দেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার।
তবে সরকারের কোনো অন্যায় আচরণের শিকার তিনি হচ্ছেন না বরং ড. ইউনূসই নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যবহার করে নিজ স্বার্থ আদায়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে মেতে আছেন বলে জানান অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
এমডি পদ হারিয়েই ষড়যন্ত্রের শুরু
সম্প্রতি এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আরাফাত বলেছেন, ‘মূলত গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ হারানোর পরেই ড. ইউনূস দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। এ জন্য তিনি আমেরিকান লবি ব্যবহার করেন। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তিনি বাংলাদেশ সরকারের ওপর অন্যায় চাপ দিতে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনভুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে দাতাদের দেয়া অর্থ এক খাত থেকে অন্য খাতে সরিয়ে ফেলার। এ বিষয়ে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটি তথ্যচিত্রও প্রচারিত হয়। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়সে পদ ছাড়ার কথা তার। কিন্তু বেআইনিভাবে ৭১ বছর পর্যন্ত এমডির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে অব্যাহতি দিলে হাইকোর্টে যান ইউনূস। সেখানেও হেরে যান তিনি।’
পদ হারানোর পর ড. ইউনূস মরিয়া হয়ে ওঠেন। হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ড. ইউনূস তার সঙ্গে তিনবার দেখা করেন এবং কয়েকবার টেলিফোনেও কথা বলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্বে থাকতে হিলারির সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি। হিলারিকে দিয়ে কাজ করাতে তার ফাউন্ডেশনে ২০ কোটি টাকা অনুদানও দেন ইউনূস।
অধ্যাপক আরাফাত এ বিষয়ে বলেন, ‘হিলারি ড. ইউনূসকে সুযোগ পাইয়ে দিতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে রেভিনিউ নিয়ে কাজ করা মার্কিন সংস্থা আইআরএসকেও ব্যবহার করেন হিলারি। পরে তার এই কর্মকাণ্ড নিয়ে কংগ্রেসেও প্রশ্নের সম্মুখীন হন হিলারি।’
শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার সঙ্গে তার তুলনা হয় না
শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কার পাননি বলে ড. ইউনূসকে অপছন্দ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে তার পরিচিতি বেশি এমন প্রচারণার বিষয়ে অধ্যাপক আরাফাত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন শান্তিচুক্তি করে পাহাড়ে শান্তি এনেছিলেন তখনই তিনি শান্তিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। কিন্তু ড. ইউনূস শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো কাজ না করেই শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। এটা খুবই হাস্যকর। তিনি যে প্রচুর টাকা খরচ করে এই নোবেল পেয়েছেন তা স্পষ্ট। শুধু পাহাড়ে শান্তি আনা নয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের অধিকার লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভূমিকা রেখেছেন তা আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। কিন্তু শেখ হাসিনা কখনো নোবেলের পেছনে দৌড়াননি। তার দেশ ও বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষিরা এ নিয়ে কাজ করতে চাইলেও তিনি তাতে রাজি হননি।’
শেখ হাসিনাকে বিশ্ব নেতারা সবাই চেনেন এবং বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষও তাকে চেনেন দাবি করে ড. আরাফাত বলেন, ‘শুধু উন্নয়ন সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন দেশের কিছু রাজনীতিবিদ ড. ইউনূসকে চেনেন। কিন্তু আজ শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের সভায় বলা হয়েছে, মধ্যমণি বা মাথার মুকুট। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টে বিশ্বে এক নম্বর হওয়ায় তিনি আজ বিশ্ব মঞ্চে প্রশংসিত। পর্তুগালের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশ ও রাজনীতির জন্য শেখ হাসিনার ত্যাগ ম্যান্ডেলার চেয়েও তাকে বড় করেছে। বাংলাদেশ আসলে তার সঠিক মূল্যায়ন ও প্রচার করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া ভারতের নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন এবং কৈলাশ সত্যার্থী সবাই শেখ হাসিনার কাজে মুগ্ধ। সম্প্রতি নোবেলজয়ী চার নারী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তারাও মানবতার জন্য শেখ হাসিনার অবদান ও কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সব মিলিয়ে ড. ইউনূসের জনপ্রিয়তা কখনোই শেখ হাসিনার ধারে কাছেও হতে পারে না। এ নিয়ে তুলনা করাও হাস্যকর।’
১/১১ সরকারের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র
ড. ইউনূসের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নাগরিক শক্তি’ নামে দল গঠন করে নবম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান ড. ইউনূস। ওই সময় ইউনূস রয়টার্সকে জানান, রাজনীতির বাইরে থাকার আর কোনো পথ নেই। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা সবাই কলুষিত এবং তাদের কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আসা এবং কমিটির মাধ্যমে প্রচার চালানোর পরিকল্পনার কথাও জানান।
উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া একটি তারবার্তা বলছে, রাজনৈতিক দল গঠনের অভিলাষে সে সময় কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেন ড. ইউনূস।
সেনা সমর্থিত সরকারের মাধ্যমে ড. ইউনূসের রাজনীতিতে আসা ও গণতান্ত্রিক ধারা নষ্টের ষড়যন্ত্র বিষয়ে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের পরিচালক বলেন, ‘ড. ইউনূস এমন এক সময় রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দেন যখন দেশের রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার পরিকল্পনা করছে সেনা সমর্থিত সরকার। ঠিক তখনই সামরিক কর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন তিনি। এ সময় তিনি রাজনীতিবিদরা কলুষিত এবং পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুশীল সমাজের রাজনীতির পক্ষে কথা বলেন। তিনি দেশের গণতান্ত্রিক ধারা নষ্ট করে সেনা সমর্থনে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কোনো প্রক্রিয়া পছন্দ করেন না। তিনি রাজনীতি করতে চাইলে স্বাভাবিক ধারায় রাজনীতি করতেই পারেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে গণতান্ত্রিক ধারা নষ্ট করে রাজনীতি করবেন তাতো হতে পারে না।’
একজন মানুষ নিজ স্বার্থে যেখানে দেশবিরোধী কাজ করতে পিছপা হন না এমন ব্যক্তি রাজনীতি করলে দেশের কোনোভাবেই মঙ্গল হতে পারে না বলে দাবি করেন অধ্যাপক আরাফাত।
পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র
পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ড. ইউনূস নিজের জাত চিনিয়েছেন দাবি করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘ড. ইউনূসের এমডি পদ হারানোর পর পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। পদ হারানো ইউনূস ঋণচুক্তি বাতিলে শুরু করেন তদবির। মার্কিন দফতর থেকে আসতে থাকে চাপ। আমেরিকা চেয়েছিল ড. ইউনূস যেন নিজের পদ ও সুযোগ-সুবিধা ফিরে পান। কিন্তু সরকারতো তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তারই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এছাড়া দেশ-বিদেশে তার বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে তদন্ত চলছে, এসবেতো সরকারের কোনো হাত নেই। তাকে একদিনের জন্যও কারাগারে যেতে হয়, কোনো চার্জশিট হয়নি, কোনো আদালত তাকে দণ্ড দেয়নি। কিন্তু উনি নিজের স্বার্থে সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন।’
ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন
সবশেষ ওয়াশিংট পোস্টে বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তির খোলা চিঠির নামে দেয়া বিজ্ঞাপন তার তেমনই একটি প্রচেষ্টা মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিগুলো যদি সত্যিই লিখতেন তাহলে ওয়াশিংটন পোস্ট তা নিয়ে প্রতিবেদনই ছাপাতো। বিজ্ঞাপন দিয়ে এই চিঠি ছাপাতে হতো না। আসলে এটা ড. ইউনূসের ষড়যন্ত্র। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশের ক্ষতি করারই চেষ্টা করছেন। আর যাদের নামে এই চিঠি গেল তারাতো বিশ্বব্যাপী আইন, গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের কথা বলে বেড়ান। তারা কি বুঝতে পারলেন না স্বাধীন দেশের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলা উচিত হচ্ছে না। তারা ড. ইউনূসের পক্ষে যেসব কথা বলেছেন বা তাকে নিপীড়নের যে অভিযোগ তুলেছেন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্যতো চিঠিতে দিতে পারেননি। টাকা খরচ করলে আসলে সবই হয়।’
ড. ইউনূসের ষড়যন্ত্র সফল হবে না
অনিয়ম ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. ইউনূসকে পছন্দ করেন না জানিয়ে অধ্যাপক আরাফাত বলেন, ‘বন্দুকের নল এবং ১/১১ এর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে বা এসেছে, প্রধানমন্ত্রীর তাদের বিষয়ে আপত্তি আছে। পশ্চিমাদের ক্রীড়ানক হয়ে ড. ইউনূস দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন, এমন প্রক্রিয়াকে শেখ হাসিনা কোনোদিন মেনে নেবে না। তার এমন ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’
তবে রাজনৈতিক পন্থায় ও গণতান্ত্রিক ধারায় ড. ইউনূস দেশের রাজনীতিতে আসতে চাইলে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় সদস্য। সময় সংবাদ