শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩
23 Nov 2024 01:30 pm
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যখন অনেকটাই শেষের দিকে তখন রুশ জাহাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে ফিরে যাওয়ায় প্রকল্পের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলছেন, জাহাজ সংকটে দেশের অন্যতম এই মেগা স্থাপনার কাজ পেছানোর সুযোগ খুবই সীমিত।
উরসা মেজর বা স্পার্টা-৩ ফেরত যাবার পরও সূচি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা অন্যান্য জাহাজগুলো থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আসা ভারি যন্ত্রাংশ খালাস অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) খুলনার মোংলা সমুদ্রবন্দরে দুটি জাহাজ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য আনা মালামাল খালাসের কাজ চলেছে। এছাড়া, একই দিনে চট্টগ্রাম বন্দরেও রূপপুরের জন্য আনা মালামাল নিয়ে ভিড়েছে সেন্টপিটার্সবার্গ থেকে ছেড়ে আসা সুলাইমান নামে আরও একটি জাহাজ।
এসব নৌযান থেকে যন্ত্রাংশ খালাস প্রক্রিয়া তদারকিতে গিয়েছিলেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পদস্থ কর্মকর্তাদের একটি দল। দিনভর মোংলা বন্দরের কার্যক্রম দেখে তারা সময় সংবাদকে তাদের অভিজ্ঞতা জানান।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ ও প্রশাসন শাখার বিভাগীয় প্রধান অলক চক্রবর্তী সময় সংবাদকে জানান, চলমান নানা সংকটেও সরকারের গুরুত্বের শীর্ষে থাকা এই প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।
অলক চক্রবর্তী সময় সংবাদকে বলেন, ‘রাশিয়ান ট্রান্সপোর্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ইয়েভগেনি লিজ আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, আগামী দুই দিনের মধ্যে স্যাফোডিলা নামে আরও একটি বড় জাহাজে যন্ত্রাংশ আসছে মোংলা বন্দরে। জাহাজটি স্যাংকশনের বাইরে থাকা একটি ভেসেল। রূশ অংশীদারদের দাবি, এই গতিটা তারা অব্যাহত রাখবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্রপথে আসা এসব মালামালের কিছু অংশ নদীপথে বার্জের মাধ্যমে এবং কিছু মালামাল সড়কপথে যশোর হয়ে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাবে। সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরেও বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রূপপুরের যন্ত্রাংশ নিয়ে রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গ থেকে সুলাইমান নামে একটি জাহাজ ভিড়েছে। এসব জাহাজে বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন, রোটার, হাইড্রোঅ্যাকিউমুলেটর, মেটাল ডোর, এম্বেডেড পার্টসের মতো ভারি যন্ত্রাংশ এসেছে। আরও এসেছে প্রথম ইউনিটের কনডেনসার যা এবারের চালানে সবচেয়ে ভারি। জানা গেছে, এর ওজন ২৮৭ টন।
এবারের চালানে অন্যান্য যন্ত্রের পাশাপাশি এসেছে বিশেষায়িত ইলেকট্রিক ক্যাবল। যেগুলো দিয়ে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে জাতীয় গ্রিডে। ক্যামেলিয়া নামের জাহাজটির বড় অংশ জুড়েই রয়েছে এ বিশেষ ধরনের ক্যাবল। মূলত, এ ক্যাবলগুলোর মাধ্যমে প্ল্যান্ট, সাব-স্টেশন এবং জাতীয় গ্রিডের মধ্যে সিনক্রোনাইজেশন করা হবে।
এছাড়া, প্ল্যান্টের ভেতরের একেকটি স্থাপনার সঙ্গে অন্য স্থাপনার যোগাযোগ রক্ষার জন্য ইন্টারনাল কানেকটিভিটির ক্যাবলগুলোও এখন রূপপুরের পথে।
অলক চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘আগামী অক্টোবরেই পরমাণু জ্বালানি রূপপুরে নিয়ে আসার প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ সময়মতো প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে দেয়ার সব নিশ্চয়তা দিচ্ছেন রূশ নির্মাতা ও ঠিকাদাররা।’
মোংলায় নোঙর করা দুটি জাহাজের বিষয়ে জানা গেছে, লিবার্টি হারভেস্ট নামের জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী হলেও এর মালিকানা ভারতীয়। এছাড়া, ক্যামিলিয়া জাহাজটি রাশিয়ার পতাকাবাহী এবং রুশ মালিকানাধীন।
এদিকে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শৌকত আকবর সময় সংবাদকে বলেন, ‘রূপপুরের প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ দেশে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া খুবই স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত খুঁটিনাটি সব দিক বিবেচনা করেই কাজ করা হয়। সিডিউলে থাকা যন্ত্রাংশগুলো নিয়ে আসার পর অন্তত তিন থেকে চার মাস কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঁচ-ছয় মাস পর্যন্ত প্ল্যান্ট এরিয়াতে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। তাই দুয়েকটি জাহাজ সময়মত ডেলিভারি না দিতে পারলেও তা সামলে নিতে বাংলাদেশ-রাশিয়া যৌথভাবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। সময়মত রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ জানিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সময় নিউজেক বলেন, ‘ওরা (রুশ ঠিকাদার) টাইমলি কাজটা শেষ করবে বলে আমাদের কাছে প্রমিজ করেছে। আমরা এখনও সেই পথেই আছি।’ এই প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নের বিষয়ে অভয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন ভয়ের কোনো কারণ নাই যে, অনেক দিনের জন্য রূপপুরের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।’