রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৩
21 Dec 2024 11:23 pm
উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে: নড়াইলে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। শুধু তাই নয়, কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি নামক শব্দটিও।
‘গ্রামের পথে গরুর গাড়ি, বউ চলেছে শ্বশুর বাড়ি’ এ কবিতার লাইনটি এক সময় বাস্তব ছিল। কিন্তু এমন দৃশ্য এখন অবাস্তব ব্যাপার। নড়াইলের গ্রামে-গঞ্জে এখন এমন গরুর গাড়ির দেখা পাওয়া দুষ্কর। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, এমন এক সময় ছিল যখন নড়াইলের গ্রাম-গঞ্জের মানুষদের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। সেটি খুব বেশি সময় আগের কথা নয়। ৩০-৩৫ বছর আগেও এইসব গরুর গাড়ির কদর ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এখন কালের আবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর গাড়ি। হয়তো খুব খুঁজে দু’একটি গরুর গাড়ি পাওয়া যাবে নড়াইলের গ্রামাঞ্চলে।
এক সময় নড়াইলের গ্রাম বাংলায় নতুন ধান কাটার নবান্নের উৎসবের সময় গরুর গাড়ি প্রতিযোগিতা হত। গ্রামের মানুষের কাছে নির্মল আনন্দের উপকরণ ছিল এই খেলা। কার গাড়ি আগে যাবে এই প্রতিযোগিতা হত খোলা মাঠে।
নড়াইলের এই খেলাটিও হারিয়ে গেছে আজ কালের আবর্তে। মানুষ এক সময় যা কল্পনা করেনি তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছেই। ইট-পাথরের মত মানুষও হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক, মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহিকতায় এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য এবং যোগাযোগ ও মালামাল বহনের প্রধান বাহন গরুর গাড়ি কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, বাস, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি।
কৃষকসহ সর্ব শ্রেণির মানুষ এখন যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এ সকল যান্ত্রিক পরিবহণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পাকা হওয়ার কারণে গরুর গাড়ি আর চালানো সম্ভব হয় না। তবে গ্রামের কিছু দুর্গম এলাকায় রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় যাতায়াত বা পণ্য পরিবহনের জন্য গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে আগামী দিনে গ্রামাঞ্চালের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই গরুর গাড়িগুলো আগামী প্রজন্ম হয়তো আর দেখতে পাবে না। এমন এক সময় আসবে যখন আর কোন গরুর গাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না। গরুর গাড়ি শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে।
আগেকার দিনে মানুষেরা বিয়ে-শাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতো গরুর গাড়ির মাধ্যমে। নড়াইলের মানুষেরা মালামাল বহন, নবান্ন উৎসবে কৃষকদের ধান বহনকারী একমাত্র বাহক ছিল গরুর গাড়ি। এমন কি নতুন বৌ আনা-নেয়া করা হত গরুর গাড়িতে করে।
পহেলা বৈশাখ সহ সকল অনুষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মেলা দেখতে যাওয়া গরুর গাড়িতে বসে গাড়িওয়ালার ভাটিয়ালী গান শোনা সে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
কিন্তু বর্তমান নড়াইলের গ্রাম বাংলা থেকে গরুর গাড়ি হারিয়ে যাওয়ায় এসব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা। আধুনিকতার প্রবাহে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছু আমরা হারাচ্ছি। আমাদের জীবন থেকে হারাচ্ছে এ রকম নানা ঐতিহ্য।