শুক্রবার, ০৬ জানুয়ারী, ২০২৩
25 Nov 2024 12:10 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ শারিরীক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জরিনা খাতুন (২৭)। পাস করেছেন এইচএসসি। চাকুরীর পাবার স্বপ্নে দরখাস্ত করছিলেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আজও তার কপালে জোটেনি সেই কাঙ্খিত চাকুরী। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একটি চাকুরী পেয়ে সামাজিক মর্যাদায় বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছে প্রতিবন্ধী জরিনা।
সরেজমিনে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের জামুডাঙ্গা (খুনিয়াপাড়া) গ্রামের দেখা প্রতিবন্ধী জরিনা খাতুনের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কারণ একটাই, পায়ের স্যাণ্ডেল ক্ষয় করেও ভাগ্যে জোটেনি সামান্য কোন চাকুরী।
জানা যায়, ওই গ্রামের শ্রমজীবি জহির মণ্ডল দিনে আনে দিন খায়। দাম্পত্য জীবনে ৩ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। স্ত্রী মোরশেদা বেগমসহ ৬ সদস্যের পরিবার তার। ওই সন্তানের মধ্যে সবার বড় জরিনা খাতুন। এই মেয়েটি জন্মগত ভাবে দুই হাত-পা’র সমস্যা। তবে শারিরীক প্রতিবন্ধী হলেও মোটামুটি মেধা সম্পন্ন। শিক্ষা জীবনে স্থানীয় দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় হাইস্কুল থেকে এসএসসিতে ৪.৫০ ও সাদুল্লাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে ৪.৪২ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপর করোনাকালে ডিগ্রী পাস পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। তবুও হাল ছাড়েনি লেখাপড়ার। আবারও ডিগ্রি পাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই জরিনা খাতুনের শিক্ষা জীবনে স্কুল-কলেজ আসা-যাওয়ার জন্য মা মোরশেদা বেগমসহ তার সহপাঠীরা নিরলসভাবে সহযোগিতা করে চলেছে। তবুও কিছুতে মনোবল হারায়নি তিনি। একাডেমিক শিক্ষা নিয়ে একটি চাকুরী করবেন, এ স্বপ্নে চলমান রাখছেন লেখাপড়া। পাশাপাশি নিজ এলাকায় গৃহ শিক্ষিকা হিসেবে টিউশনি অব্যাহত রয়েছে তার। সেই দৃঢ় মনোবল নিয়ে অর্জন করেছে এইচএসসি সনদ। সাত বছর আগে এই শিক্ষা সনদ লাভ করে চাকুরি পাবার আশায় আবেদন করছিলেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তার ভাগ্যে জোটেনি কাঙ্খিত সেই চাকুরী।এই প্রতিবন্ধী জরিনা খাতুন জানান, সামাজিক মর্যাদা পেতে লেখাপাড়া করেছেন। যাতে করে একটি সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন। কিন্তু সেটি বিপরীদ হয়েছে তার। এখন নিজেকে সমাজের বোঝা মনে করছেন।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, বিভিন্ন অফিসের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও আমাকে সামান্য একটি একটি চাকুরীর সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমি প্রতিবন্ধী দেখে কেউ চাকুরী দিতে চান না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পরিবারসহ চরম হতাশায় ভুগছি। তাই প্রধানমন্ত্রী মানবদরদী শেখ হাসিনা সরকারসহ দেশের চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট কর্মসংস্থান পাওযার অনুরোধ করছি।
স্থানীয় এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা-কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি করতে পারলে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার সেই স্বপ্ন বাস্তবরূপ নেবে। তবে বর্তমান সরকার একটি সু-রক্ষা আইন করাসহ প্রতিবন্ধীদের বিশেষ গুরুত্ব ও সামাজিক নিরাপত্তা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি গ্রহণ করেন নি।