|
৭১ভিশন ডেস্ক:- ইউক্রেনে দুদিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অর্থোডক্স ক্রিসমাস উপলক্ষে সেনাদের শুক্র থেকে শনিবার (৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত হামলায় বিরতি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মস্কো টাইমস জানিয়েছে, অর্থোডক্স ক্রিসমাস উপলক্ষে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান রাশিয়ার খ্রিষ্টান ধর্মগুরু প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ধর্মগুরুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন পুতিন। ঐতিহ্যগতভাবে অর্থোডক্স ক্রিসমান রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশেই উদ্যাপন করা হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনমতে, বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ইউক্রেন ইস্যুতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেন পুতিন।
এতে আরও বলা হয়, সামরিক অভিযান অবসানের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে ইউক্রেনকে একটি শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, আলোচনায় বসার আগে কিয়েভকে মস্কোর দখল করা অঞ্চলগুলোর অধিকার ছেড়ে দিতে হবে। আলোচনায় বসা না-বসার বিষয়টি ইউক্রেনের এ সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
ইউক্রেন সংঘাত ১১ মাসে গড়িয়েছে। এতে দুই পক্ষের সামরিক-বেসামরিক বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। সংঘাত বন্ধে শুরু থেকেই অনেক আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে বছর শেষ হয়ে নতুন বছর এসেছে। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই। বরং পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বেড়েই চলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য শর্তের কথা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এদিন ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ফোনালাপকালে ইউক্রেন সংঘাত নিরসনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন এরদোয়ান। বিপরীতে আলোচনায় বসার জন্য শর্তের কথা বলেন পুতিন। এরদোয়ানকে তিনি বলেন, কিয়েভ যদি তাদের হারানো ভূখণ্ডের নতুন বাস্তবতা মেনে নেয়, তাহলে তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের জন্য উন্মুক্ত।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করে নেয় রুশ বাহিনী। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে এসে ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝজিয়া নিজেদের বলে ঘোষণা করেন পুতিন।
সংঘাত নিরসনে ১০ দফা শান্তি প্রস্তাব বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে প্রথম ১০ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে আবারও বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
এছাড়া গত বছরের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসে ভাষণের সময় বিষয়টি উল্লেখ করেন জেলেনস্কি। এরপর গত ২৫ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপে এ বিষয়ে সাহায্য চান তিনি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনমতে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবে জাপোরিঝজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো আশপাশের এলাকাগুলোতে বিকিরণ ও পরমাণু নিরাপত্তা, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি এবং এরই মধ্যে রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডগুলো ফিরিয়ে দেয়ার মতো বিষয় দাবি আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
এতে আরও রয়েছে, রুশ সেনা প্রত্যাহার, পরিবেশ রক্ষা, সংঘাত নিয়ন্ত্রণ, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা। তবে জেলেনস্কির এই প্রস্তাব সেই নভেম্বরেই প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া। মস্কোর বক্তব্য, রুশ বাহিনী যেসব এলাকা দখল করেছে, তার এক ইঞ্চিও ফিরিয়ে দেবে না তারা।